৩২-সাজদাহ
(32:0)
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
অনুবাদ: পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
(32:1)
الٓمّٓۚ
অনুবাদ: আলিফ লাম মীম।
(32:2)
تَنْزِیْلُ الْكِتٰبِ لَا رَیْبَ فِیْهِ مِنْ رَّبِّ الْعٰلَمِیْنَؕ
অনুবাদ: এ কিতাবটি রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।
(32:3)
اَمْ یَقُوْلُوْنَ افْتَرٰىهُ١ۚ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اَتٰىهُمْ مِّنْ نَّذِیْرٍ مِّنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ یَهْتَدُوْنَ
অনুবাদ: এরা কি বলে, এ ব্যক্তি নিজেই এটি তৈরি করে নিয়েছেন? না, বরং এটি সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো এমন একটি জাতিকে যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসে নি, হয়তো তারা সৎপথে চলবে।
(32:4)
اَللّٰهُ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ وَ مَا بَیْنَهُمَا فِیْ سِتَّةِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ١ؕ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِیٍّ وَّ لَا شَفِیْعٍ١ؕ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوْنَ
অনুবাদ: আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না?
(32:5)
یُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَرْضِ ثُمَّ یَعْرُجُ اِلَیْهِ فِیْ یَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
অনুবাদ: তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করেন এবং এ পরিচালনার বৃত্তান্ত ওপরে তার কাছে যায় এমন একদিনে যার পরিমাপ তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর।
(32:6)
ذٰلِكَ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ الْعَزِیْزُ الرَّحِیْمُۙ
অনুবাদ: তিনিই প্রত্যেকটি অদৃশ্য ও দৃশ্যমানকে জানেন, মহাপরাক্রমশালী ও করুণাময় তিনি।
(32:7)
الَّذِیْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَیْءٍ خَلَقَهٗ وَ بَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِیْنٍۚ
অনুবাদ: যে জিনিসই তিনি সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি থেকে,
(32:8)
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلٰلَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِیْنٍۚ
অনুবাদ: তারপর তার বংশ উৎপাদন করেছেন এমন সূত্র থেকে যা তুচ্ছ পানির মতো।
(32:9)
ثُمَّ سَوّٰىهُ وَ نَفَخَ فِیْهِ مِنْ رُّوْحِهٖ وَ جَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَ الْاَبْصَارَ وَ الْاَفْئِدَةَ١ؕ قَلِیْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
অনুবাদ: তারপর তাকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, আর তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
(32:10)
وَ قَالُوْۤا ءَاِذَا ضَلَلْنَا فِی الْاَرْضِ ءَاِنَّا لَفِیْ خَلْقٍ جَدِیْدٍ١ؕ۬ بَلْ هُمْ بِلِقَآئِ رَبِّهِمْ كٰفِرُوْنَ
অনুবাদ: “আর এরা বলে, “যখন আমরা মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যাবো তখন কি আমাদের আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে?” আসল কথা হচ্ছে, এরা নিজেদের রবের সাথে সাক্ষাৎকার অস্বীকার করে।
(32:11)
قُلْ یَتَوَفّٰىكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِیْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ۠
অনুবাদ: এদেরকে বলে দাও, “মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।
(32:12)
وَ لَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ١ؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَ سَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
অনুবাদ: হায়, যদি তুমি দেখতে সে সময় যখন এ অপরাধীরা মাথা নিচু করে তাদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। (তখন তারা বলতে থাকবে) “হে আমাদের রব! আমরা ভালোভাবেই দেখে নিয়েছি ও শুনেছি, এখন আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করবো, এবার আমাদের বিশ্বাস হয়ে গেছে।”
(32:13)
وَ لَوْ شِئْنَا لَاٰتَیْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدٰىهَا وَ لٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّیْ لَاَمْلَئَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَ
অনুবাদ: (জবাবে বলা হবে) “যদি আমি চাইতাম তাহলে পূর্বাহ্নেই প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দিয়ে দিতাম। কিন্তু আমার সে কথা পূর্ণ হয়ে গেছে, যা আমি বলেছিলাম যে, আমি জাহান্নাম জ্বীন ও মানুষ দিয়ে ভরে দেবো।
(32:14)
فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِیْتُمْ لِقَآءَ یَوْمِكُمْ هٰذَا١ۚ اِنَّا نَسِیْنٰكُمْ وَ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
অনুবাদ: কাজেই আজকের দিনের এ সাক্ষাতকারের কথা ভুলে গিয়ে তোমরা যে কাজ করেছো এখন তার মজা ভোগ কর। আমিও এখন তোমাদের ভুলে গিয়েছি, নিজেদের কর্মফল হিসেবে চিরন্তন আযাবের স্বাদ আস্বাদন করতে থাকো।”
(32:15)
اِنَّمَا یُؤْمِنُ بِاٰیٰتِنَا الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّ سَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَ هُمْ لَا یَسْتَكْبِرُوْنَ۩
সেজদা
অনুবাদ: আমার আয়াতের প্রতি তো তারাই ঈমান আনে যাদেরকে এ আয়াত শুনিয়ে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজেদের রবের প্রশংসা সহকারে তার মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না।
(32:16)
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّ طَمَعًا١٘ وَّ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ
অনুবাদ: তাদের পিঠ থাকে বিছানা থেকে আলাদা, নিজেদের রবকে ডাকে আশঙ্কা ও আকাংখা সহকারে এবং যা কিছু রিযিক আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
(32:17)
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِیَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْیُنٍ١ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ
অনুবাদ: তারপর কেউ জানে না তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে তাদের চোখের শীতলতার কি সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
(32:18)
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا١ؔؕ لَا یَسْتَوٗنَؐ
অনুবাদ: এটা কি কখনো হতে পারে, যে ব্যক্তি মু’মিন সে ফাসেকের মতো হয়ে যাবে? এ দু’পক্ষ সমান হতে পারে না।
(32:19)
اَمَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمْ جَنّٰتُ الْمَاْوٰى١٘ نُزُلًۢا بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ
অনুবাদ: যারা ঈমান এনেছে এবং যারা সৎকাজ করেছে তাদের জন্য তো রয়েছে জান্নাতের বাসস্থান, আপ্যায়নের জন্য তাদের কাজের প্রতিদানস্বরূপ।
(32:20)
وَ اَمَّا الَّذِیْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوٰىهُمُ النَّارُ١ؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْۤا اَنْ یَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِیْدُوْا فِیْهَا وَ قِیْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِیْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
অনুবাদ: আর যারা ফাসেকীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের আবাস হচ্ছে জাহান্নাম। যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে তার মধ্যেই ঠেলে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদন করো এখন সেই আগুনের শাস্তির স্বাদ যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে।
(32:21)
وَ لَنُذِیْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ
অনুবাদ: সেই বড় শাস্তির পূর্বে আমি এদুনিয়াতেই (কোন না কোন) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে থাকবো, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে) বিরত হবে।
(32:22)
وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَا١ؕ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِیْنَ مُنْتَقِمُوْنَ۠
অনুবাদ: আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হবে যাকে তার রবের আয়াতের সাহায্যে উপদেশ দেয়া হয় এবং সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? এ ধরনেরঅপরাধীদের থেকে তো আমি প্রতিশোধ নেবোই।
(32:23)
وَ لَقَدْ اٰتَیْنَا مُوْسَى الْكِتٰبَ فَلَا تَكُنْ فِیْ مِرْیَةٍ مِّنْ لِّقَآئِهٖ وَ جَعَلْنٰهُ هُدًى لِّبَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَۚ
অনুবাদ: এর আগে আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, কাজেই সেই জিনিসই পাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এ কিতাবকে আমি বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম।
(32:24)
وَ جَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً یَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا١ؕ۫ وَ كَانُوْا بِاٰیٰتِنَا یُوْقِنُوْنَ
অনুবাদ: আর যখন তারা সবর করে এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন নেতা সৃষ্টি করে দেই যারা আমার হুকুম অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো।
(32:25)
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ یَفْصِلُ بَیْنَهُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ فِیْمَا كَانُوْا فِیْهِ یَخْتَلِفُوْنَ
অনুবাদ: নিশ্চিতই তোমার রবই কিয়ামতের দিন সেসব কথার ফায়সালা করে দেবেন যেগুলোর ব্যাপারে তারা (বনী ইসরাঈল) পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত থেকেছে।
(32:26)
اَوَ لَمْ یَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ یَمْشُوْنَ فِیْ مَسٰكِنِهِمْ١ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ١ؕ اَفَلَا یَسْمَعُوْنَ
অনুবাদ: আর এরা কি (এসব ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে) কোন পথনির্দেশ পায়নি যে, এদের পূর্বে কত জাতিকে আমি ধ্বংস করেছি, যাদের আবাসভূমি তে আজ এরা চলাফেরা করছে? এর মধ্যে রয়েছে বিরাট নিদর্শনাবলী, এরা কি শুনবে না?
(32:27)
اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَ اَنْفُسُهُمْ١ؕ اَفَلَا یُبْصِرُوْنَ
অনুবাদ: আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যে, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায়? তবুও কি এরা কিছুই দেখে না?
(32:28)
وَ یَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْفَتْحُ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ
অনুবাদ: এরা বলে, “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে বলো এ ফায়সালা কবে হবে?
(32:29)
قُلْ یَوْمَ الْفَتْحِ لَا یَنْفَعُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اِیْمَانُهُمْ وَ لَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ
অনুবাদ: এদেরকে বলে দাও, “যারা কুফরী করেছে ফায়সালার দিন ঈমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোন অবকাশ দেয়া হবে না।”
(32:30)
فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَ انْتَظِرْ اِنَّهُمْ مُّنْتَظِرُوْنَ۠
অনুবাদ: বেশ, এদেরকে এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও এবং অপেক্ষা করো, এরাও অপেক্ষায় আছে।