Powered By Blogger
শেষ পরিণতির ৭টি বিশেষ আলামত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শেষ পরিণতির ৭টি বিশেষ আলামত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১১ নভেম্বর ২০২০

উত্তম মৃত্যুর আলামত

  কারো মধ্যে এসব ভালো আলামত পাওয়া গেলে তার উত্তম পরিণতির সুসংবাদ, তবে এসব কিছু মহান আল্লাহ তাআলার ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।


 ১। যার সর্বশেষ বাক্য কালেমায় শাহাদাত হবে তার ব্যাপারে হাদীসে উত্তম পরিণতির শুভসংবাদ এসেছে, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [মুসতাদরক হাকিম, হাদীস নং ১২৯৯। তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ] 

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ অবস্থায় বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কিছু কথা শুনেছি যা এতদিন গোপন রেখেছিলাম। তাঁকে বলতে শুনেছি, “যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০৩৪, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।] 


২। মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদাহ রহ. তার পিতা বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,  “মুমিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মৃত্যুবরণ করে থাকে”। (মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত।) [সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১৮২৮, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩০২২, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।] 


৩। জুমু‘আর দিনে বা রাতে মারা গেলে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  “কোনো মুমিন যদি জুমু‘আর দিন বা রাতে মারা যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা বা পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৬৫৮২, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ১০৭৪, তিনি হাদীসটিকে গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।] 


৪। যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া, “আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন, তাতে তারা খুশি। আর তারা উৎফুল্ল¬ হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে। এজন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভে খুশি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১] 

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়; কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়; (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে; তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে; আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৯৯, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ১৬৬৩।] 


৫। ক)আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে গাজী হয়ে ফিরে আসার পরে মারা গেলে, 

খ) প্লেগ রোগে মারা গেলে, 

গ) পেটের পীড়ায় 

ঘ)  পানিতে ডুবে, 

ঙ) অগ্নিদগ্ধ হয়ে 

চ) গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ এবং মুমিনের তা শুভ লক্ষণ। 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , “তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় সেই তো শহীদ। তিনি বললেন, তাহলে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ জিহাদের ময়দানে নিহত হয় সে শহীদ। ষে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ, যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইবন মিকসাম বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৫]

 জাবির ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর রোগের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাঁকে বেহুশ অবস্থায় পান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জোরে ডাকেন, কিন্তু তিনি কোনো জওয়াব দেন নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ''ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিঊন'' পাঠ করেন এবং বলেন, হে আবু রাবী! আমি তোমার ব্যাপারে পরাস্ত হয়েছি। এ কথা শুনে মহিলারা চীৎকার দিয়ে কাঁদা শুরু করে। তখন ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের শান্ত হতে বলেন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কাঁদতে দাও)। অবশ্য যখন ওয়াজিব হবে, তখন যেন কোনো ক্রন্দনকারী আর না কাঁদে। 

তখন তারা জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াজিব হওয়ার অর্থ কী? তিনি বলেন, মৃত্যু”। (বর্ণনাকারী বলেন) তখন আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার তো এরূপ ধারণা ছিল যে, তুমি শহীদ হবে। কেননা, তুমি যুদ্ধের জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করছিলে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তার নিয়তের সাওয়াব প্রদান করবেন। তোমরা শাহাদত বলতে কী মনে কর? তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়ে যাওয়াকে।

 তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ছাড়াও আরো সাত ধরনের শহীদ আছে যথা, মহামরীতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পানিতে ডুবে যে মারা যায় সেও শহীদ, পক্ষাঘাতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পেটের রোগের কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে) যে মারা যায় সেও শহীদ, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে মারা যায় সেও শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে যে মারা যায় সেও শহীদ এবং যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যাবে, সেও শহীদ”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১১। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]


 ৬। কেউ নিজের অধিকার তথা জীবন, সম্পদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই র কারণে মারা গেলে শহীদ। 

আর শহীদ হয়ে মারা যাওয়া শুভ লক্ষণ। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজের ধনসম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪১।] ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ধনসম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাঁধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৮১, ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ] 


৭। আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময় মারা গেলে শহীদ

 সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে, তার (শহীদ অবস্থায়) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৩।] ফুদালা ইবন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে তার আমলের পরিসমাপ্তি হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারা দানরত অবস্থায় মারা যায় আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদে রাখবেন। (তিনি আরো বলেন,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, প্রকৃত মুজাহিদ হলো সেই, যে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৬২১। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ] 

মূল- আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

 গ্রন্থনা- মাওলানা মিরাজ রহমান  

সৌজন্যে : ইসলাম হাউজ


বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

পারিবারিক সুখ শান্তির জন্য দোয়া।

 আল কুরআন, ২৫  আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪ وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ ا...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ