তালেবান
কাবুলে তালেবান যোদ্ধাদের সশস্ত্র টহল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। শুরু হয়েছে স্বাভাবিক চলাফেরাও। মঙ্গলবার তোলা -এএফপি আফগানিস্তানে শত্রুতার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে তালেবান। দেশটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নেওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা শান্তি চাই। ঘরে ও বাইরে কোথাও আমরা শত্রুতা চাই না। শত্রুতার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা শত্রুতার অবসান চাই। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করেছি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন সরকার এবং দেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে পরিকল্পনা কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমন্বিত আফগান সরকার’ গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন সরকারে নারীদের যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। খবর এপি, এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরার। জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ২০ বছরের লড়াইয়ের পর আমরা দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি এবং বিদেশি শক্তিকে তাড়িয়েছি। আফগানিস্তান যাতে একটা যুদ্ধক্ষেত্র বা সংঘাতের দেশ না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা কোনোভাবেই আফগানিস্তানকে সংঘাতের কেন্দ্রস্থল হতে দেব না। আফগানিস্তান কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়। তিনি বলেন, গোটা জাতির জন্য এ মুহূর্ত খুবই গর্বের। তিনি বলেন, ২০ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্বতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে ২০ বছর আগের তালেবানের সঙ্গে আজকের তালেবানের বিশাল তফাত রয়েছে। আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেব তার সঙ্গে সেই সময়কার তফাত রয়েছে। এটা বিবর্তনের ফসল। আফগানিস্তান আলকায়দা যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ঝুঁকি আছে কি-না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের মাটি কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অপহরণ ও হত্যার ঘটনা খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশে পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রয়েছে। কেউ কাউকে অপহরণ করতে পারবে না। প্রতিদিন আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করব। তিনি বলেন, আমরা চাই না কেউ দেশ ছেড়ে যাক। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কোনা রকম শত্রুতা বা প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। যারা বিদেশিদের জন্য অনুবাদকের কাজ করেছে বা বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করেছে তাদের প্রতি ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, কারোর প্রতি প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। যারা এদেশে বড় হয়ে উঠেছেন তারা এদেশেরই সন্তান। আমরা চাই না তারা চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ। তিনি বলেন, কেউ কারোর বাসার দরজায় টোকা মেরে জিজ্ঞেস করবে না ‘আপনি কাদের সঙ্গে কাজ করতেন?’ তিনি আশ্বাস দেন, তারা নিরাপদ থাকবে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, কাউকে হয়রানি করা হবে না।
নারীর অধিকারের প্রশ্নে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা নারীদের বাইরে কাজ করার এবং পড়াশোনার অনুমতি দেব, তবে সেটা হতে হবে আমাদের কাঠামোর মধ্যে। আমাদের সমাজে নারীরা খুবই সক্রিয় থাকবেন, সেটা আমাদের কাঠামো ও ব্যবস্থার মধ্যে থেকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, কারোর ক্ষতি করা হবে না। শরিয়া আইনের অধীনে নারীর অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারীরা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমকে তালেবান প্রশাসনের অধীনে কাজ করতে হবে। আমি মিডিয়াকে আশ্বস্ত করতে চাই এই বলে যে, আমরা চাইব আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে মিডিয়া কাজ করবে। বেসরকারি মিডিয়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। তবে মিডিয়ায় ইসলামি মূল্যবোধের পরিপন্থি কিছুই প্রচার করা যাবে না। মিডিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের যেখানে ঘাটতি থাকবে, দেশের কল্যাণে সেই ঘাটতি আপনারা পূরণ করবেন।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য আমরা সবাইকে ক্ষমা করেছি। আমাদের যোদ্ধা, আমাদের জনগণ, সব পক্ষ, সব উপদল, সবার অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করব। তিনি বলেন, যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা মারা গেছে শত্রুপক্ষের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে। তারা প্রাণ হারিয়েছে নিজেদের দোষে। আমরা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গোটা দেশ জয় করে নিয়েছি। সরকার গঠনের পর সবকিছু পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং দেশের জনগণকে জানাব দেশ কোন আইনে চলবে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই সরকার গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা দেব। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও একসময়ে দেশটির শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে কাবুলে আলোচনায় করেন তালেবান নেতা আমির খান মুত্তাকি। এ আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, ‘তালেবান নন’-এমন নেতারাও নতুন সরকারে আসতে পারেন। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্বশীল নন বলে তিনি নাম প্রকাশে রাজি হননি। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মধ্যরাত পর্যন্ত কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। তারা জানান, ঘানি পালানোর আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে তালেবানের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুত্তাকিরের যোগাযোগ ছিল। নেতারা আরও বলেন, নতুন সরকারের কাঠামো কেমন হবে-সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে পুরোপুরি ইসলামিক নেতৃত্বই সরকারের কেন্দ্রে থাকবে এবং সব পক্ষই সেখানে যুক্ত থাকবে। তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেছেন, এটি সমন্বিত আফগান সরকার হবে। রাজধানী কাবুল দখলের পর দুদিন পার হলেও শহরটিতে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর কাবুলের কারাগার খালি করে দিয়েছে এবং সরকারি অস্ত্রাগার লুট করেছে। আফগানিস্তানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অধিকাংশ বাসিন্দা বাড়িতে অবস্থান করছেন। দেশটির প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন দপ্তরে কর্মীরা যাচ্ছেন না। এ ছাড়া থানাগুলো থেকে পুলিশ সদস্য পালিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরাতে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবান। তালেবান মুখপাত্র সুহেইল শাহিনের এক টুইট বার্তায় বলা হয়-‘সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য সাধারণ ক্ষমা প্রযোজ্য হবে। এখন সবাই পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পেশাগত কাজ ও স্বাভাবিক জীবন শুরু করুন।’ তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান আব্দুস সালাম হানাফি বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদেশি কূটনীতিক ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সরকারি কাজে নিয়োজিত সব চাকরিজীবী কোনো শঙ্কা ছাড়াই কর্মস্থলে ফিরে যান। যেসব কর্মকর্তা আশরাফ ঘানি সরকারের হয়ে অথবা পশ্চিমা সংস্থাগুলোর হয়ে কাজ করেছেন এবং বিশেষ করে যারা দোভাষীর কাজ করেছেন তারা প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল। পুলিশ ও সেনা সদস্য এবং সরকারি চাকরিজীবীদের অভয় দিয়ে এবং কারও ওপর প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। দুই দশক পর দেশটির ক্ষমতায় আসা তালেবান থমথমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এমন ঘোষণা দিয়েছে। নতুন সরকারে নারীদের যোগ দেওয়ার আহ্বান তালেবানের : নতুন সরকার কাঠামোয় নারীদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান। মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগনি। দেশজুড়ে বিজয় লাভের পর আফগান সরকার কাঠামো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে এটাই প্রথম কোনো ঘোষণা। সামানগনি জানান, ইসলামিক আমিরাত চায় না নারীরা পিছিয়ে থাকুক। আর তাই শরিয়াহ আইন মেনেই নারীদের আফগান সরকারের অংশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের জনগণ মুসলিম এবং তাদের ইসলামের বিষয়গুলোতে জোর করতে আমরা আসিনি।
তালেবান শাসনের দ্বিতীয় দিনে সংবাদ উপস্থাপনায় ফিরলেন নারীরা : তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলে আবারও সংবাদ উপস্থাপনায় ফিরছেন দেশটির নারীরা। হিজাব পরে টেলিভিশনের পর্দায় অংশ নিচ্ছেন তারা। তালেবান ক্ষমতা দখলে নেওয়ায় কাজে ফেরা নিয়ে শঙ্কা জাগে নারীদের। তবে তালেবান জানিয়েছে, নারীদের কাজে ফিরতে কোনো বাধা নেই। আফগানিস্তানের টোলো নিউজে দেখা গেছে, এক নারী সংবাদ উপস্থাপিকা তার কর্মস্থলে ফিরেছেন। মঙ্গলবার টোলো নিউজের প্রধান মিরাকা পোপাল টুইটারে ছবি পোস্ট করে এ তথ্য জানান। ছবিতে দেখা যায়, নারী উপস্থাপিকা হিজাব পরে তালেবানের মিডিয়া বিভাগের এক সদস্যের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। এমন ছবি সামাজিকসহ সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীরা কাজে ফেরায় অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। এরকম বেশ কয়েকটি ছবি এখন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মোল্লা বারাদার দেশে ফিরেছেন : কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুইদিন পর সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার তিনি অন্য শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কান্দাহারে ফেরেন। তার দেশে ফেরার পর কাবুলে তালেবান সংবাদ সম্মেলন করে। কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু মোল্লা বারাদার কেন এতো দ্রুত দেশে ফিরলে তা স্পষ্ট নয়।
নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের : আশরাফ গণির অনুপস্থিতিতে সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ নিজেকে অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন। টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আফগানিস্তানে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি, পালিয়ে যাওয়া, পদত্যাগ করা কিংবা নিহত হলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন। আমি বর্তমানে দেশেই রয়েছি আর আমিই বৈধ অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট। সমর্থন ও সহায়তা চেয়ে সব নেতার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
তালেবানের যোদ্ধাদের কারোর বাড়িতে প্রবেশ না করার নির্দেশ : যোদ্ধারা যাতে কারও বাড়িতে প্রবেশ না করেন এবং রাস্তায় বিশেষ করে রাজধানী কাবুলের রাস্তায় কোনো দূতাবাসের গাড়ি চলাচলে বাধা না দেয় সেজন্য নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। এ নির্দেশ জারি করেন তালেবানের উপনেতা মৌলভি ইয়াকুব। তালেবান যোদ্ধারা লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন খবরের পর তিনি নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করা এক বার্তা জারি করেন। তিনি বলেন, তালেবান আফগানিস্তানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা শুরু করেছে। সরকারি কর্মচারীদের কাজে ফিরতে বলা হয়েছে এবং তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা লুটপাটের সঙ্গে জড়াবে ধরা পড়লে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
কাবুলে নতুন গভর্নর নিয়োগ : আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রাজধানী কাবুলে নতুন গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে তালেবান। কাতারে থাকা তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৌলভি আবদুর রহমান মনসুরকে কাবুলের নতুন গভর্নর করা হয়েছে। তিনি শাহিকোট যুদ্ধে মারা যাওয়া মৌলবি সাইফুর রহমানের ভাই। তার বাবা মৌলবি নাসরুল্লাহও আফগানিস্তানে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। মৌলবি মনসুর বলেছেন, রাজধানী কাবুলের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেসব দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট করছে, তাদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। এছাড়া কাবুলের বাসিন্দাদের জন্য একটি সমন্বিত হটলাইন নম্বর চালুর কথা জানিয়েছে তালেবান। কারও বাড়িঘরে প্রবেশ না করার জন্যও যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে তালেবান।
আফগান সরকারকে দায়ী করে পালালেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর : আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আজমল আহমাদে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনি আশরাফ ঘানি সরকারকে দায়ী করেন। রোববার তালেবান কাবুল দখলের দিনই আফগানিস্তান ছেড়েছেন আজমল আহমাদে। সোমবার টুইটার পোস্টে তিনি জানান, এটা এভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল না। আফগান নেতাদের পরিকল্পনাহীনতায় আমি বীতশ্রদ্ধ। তিনি আরও জানান, দেশটির মুদ্রার মান রেকর্ড নেমে যাওয়া এবং নতুন করে আর কোনো ডলার তাকে সরবরাহ করা হবে না জানতে পেরে তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আফগানিস্তানে সরকার গঠনের আহ্বান জাতিসংঘের : আফগানিস্তানে আলোচনার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার সংস্থাটির এক বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। সম্ভাব্য নতুন সরকার যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং সেখানে যেন নারীদের সমান ও অর্থবহ অংশগ্রহণ থাকে, এ বিষয়টিও নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আফগানিস্তানে সব ধরনের সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এদিকে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবান নেওয়ার পর আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা সরবরাহ করতে ডি ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রমিজ আলাকবারোভ জানান, আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সংঘাতে ছয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর পরিস্থিতি ক্রমাগত বদলানোয় সব জায়গায় মানবিক দলগুলো সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না।
তালেবান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের টেলিফোন আলাপ : কাবুল তালেবান দখলে নেওয়ার পর টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ। সোমবার আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে তারা খোলামেলা কথা বলেন। লেভরভ বলেন, সব অংশীজনকে নিয়ে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগ ও সরকার ভেঙে পড়ার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকর্মীসহ নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়াসহ নানা উদ্যোগের বিষয়ে লেভরভকে জানিয়েছেন ব্লিংকেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে।
তুরস্ক সব পক্ষের সাথে কথা বলছে : তুরস্ক বলেছে আফগান সংঘাতে সংশ্লিষ্ট ‘সব পক্ষের’ সঙ্গে তারা কথা বলছে, যার মধ্যে তালেবানও রয়েছে। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সংবাদ সম্মেলনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুৎ কাভুসগলু বলেন, আফগানিস্তানে কূটনৈতিক মিশন এবং সেখানে তুরস্কের নাগরিকদের ব্যাপারে তালেবানের বার্তাকে তুরস্ক স্বাগত জানিয়েছে।
কাবুলের জীবনযাত্রা : শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা, খুব একটা গাড়ি চলাচল করছে না। মানুষজন ভীত ও যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই সবাই ঘরের ভেতরেই থাকছেন। খোলা কিছু মুদি দোকান থেকে মালামাল কিনতে পারছে মানুষজন, কিন্তু বড় মার্কেট এবং শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিন ধরেই ডলারের বিনিময় মূল্য অনেক বেড়েছে। এতে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আফগানিস্তানে সম্প্রতি সব কিছুর দাম বেড়েছ