আল কুরআন,
সুরা:৯- তওবা
আয়াত নং :-৫
টিকা নং: ৬,৭,
অতএব, হারাম মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে গেলে৬ মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো। তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও।৭ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
তাফসীর :
টিকা:৬) পারিভাষিক অর্থে যে মাসগুলোকে হজ্জ ও উমরাহ করার সুবিধার জন্য হারাম মাস গণ্য করা হয়েছে এখানে সে মাসগুলোর কথা বলা হয়নি। বরং মুশরিকদের যে চর মাসের অবকাশ দেয়া হয়েছিল সেই চারটি মাসের কথা এখানে বলা হয়েছে। যেহেতু এ অবকাশকালিন সময়ে মুশরিকদের ওপর আক্রমণ করা মুসলমানদের জন্য জায়েয ছিল না তাই এগুলোকে হারাম মাস বলা হয়েছে।
টিকা:৭) অর্থাৎ কুফর ও শিরক থেকে নিছক তাওবা করে নিলেই ব্যাপাটি খতম হয়ে যাবে না। বরং তাদের কার্যত নামায কায়েম করতে ও যাকাত দিতে হবে। এটা না হলে তারা যে কুফরী ত্যাগ করে ইসলামকে অবলম্বন করেছে, একথা মেনে নেয়া যাবে না। হযরত আবু বকর (রা.) এর খেলাফতকালে মুরতাদ হবার ফিতনা দেখা দেবার সময় হযরত আবু বকর (রা.) এ আয়াত থেকেই যুক্তি সংগ্রহ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নবী (সা.) এর ইন্তেকালের পর যারা গোলযোগ সৃষ্টি করেছিল তাদের একটি দল বলতো, আমরা ইসলামকে অস্বীকার করি না। আমরা নামায পড়তে প্রস্তুত কিন্তু যাকাত দেবো না। সাহাবায়ে কেরাম সাধারণভাবে এ ভেবে বিব্রত হচ্ছিলেন যে, এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে কেমন করে তরবারি ওঠানো যেতে পারে? কিন্তু হযরত আবু বকর (রা.)ও আয়াতটির বরাত দিয়ে বললেন, আমাদের তো কেবলমাত্র যখন এরা শিরক থেকে তাওবা করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে তখনই এদেরকে ছেড়ে দেবার হুকুম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন এ তিন শর্তের মধ্য থেকে একটি শর্ত এরা উড়িয়ে দিচ্ছে তখন আমরা এদের ছেড়ে দেই কেমন করে?
(9:6)
অনুবাদ: আর যদি মুশরিকদের কোন ব্যক্তি আশ্রয় প্রার্থনা করে তোমার কাছে আসতে চায় (যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে) তাহলে তাকে আল্লাহর কালাম শোনা পর্যন্ত আশ্রয় দাও, তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দাও। এরা অজ্ঞ বলেই এটা করা উচিত।
(9:7)
অনুবাদ: মুশরিকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কোন নিরাপত্তার অঙ্গীকার কেমন করে হাতে পারে? তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছিলে মসজিদে হারামের কাছে তাদের কথা স্বতন্ত্র। কাজেই যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য সোজা-সরল থাকে ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য সোজা-সরল থাকো। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন।
(9:8)
অনুবাদ: তবে তাদের ছাড়া অন্য মুশরিকদের জন্য নিরাপত্তা চুক্তি কেমন করে হতে পারে, যখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা তোমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পারলে তোমাদের ব্যাপারে কোন আত্মীয়তার পরোয়া করবে না এবং কোন অঙ্গীকারের দায়িত্বও নেবে না। তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে কিন্তু তাদের মন তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
(9:9)
অনুবাদ: তারা আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে সামান্যতম মূল্য গ্রহণ করে নিয়েছে। তারপর আল্লাহ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যা করতে অভ্যস্ত, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ।
(9:10)
অনুবাদ: কোন মুমিনের ব্যাপারে তারা না আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা করে, আর না কোন অঙ্গীকারের ধার ধারে। আগ্রাসন ও বাড়াবাড়ি সবসময় তাদের পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।
(9:11)
অনুবাদ: কাজেই যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। যারা জানে, তাদের জন্য আমার বিধান স্পষ্ট করে বর্ণনা করি।
(9:12)
অনুবাদ: আর যদি অঙ্গীকার করার পর তারা নিজেদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের ওপর হামলা চালাতে থাকে তাহলে কুফরীর পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ তাদের কসম বিশ্বাসযোগ্য নয়। হয়তো (এরপর তরবারীর ভয়েই) তারা নিরস্ত হবে।
(9:13)
অনুবাদ: তোমরা কি লড়াই করবে না এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এসেছে এবং যারা রসূলকে দেশ থেকে বের করে দেবার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ির সূচনা তারাই করেছিল? তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন।
(9:14)
অনুবাদ: তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন, তাদের মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন।