Powered By Blogger
porda লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
porda লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৪ জুন ২০২১

প্রশ্ন: হিজাব ও পর্দা কি এবং কেন?

উত্তর : বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। 

হিজাব ও পর্দা : 

 ইসলামে নারীদের পর্দার বিধান:
পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন মজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা-সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে। পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন। কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করেছেন, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে। মোটকথা, কুরআন মজীদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি। কিন্তু বেদনার বিষয় এই যে, পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের ‘মুসলিম-সমাজ’ এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েছে যে, কুরআন ও সুন্নাহর বিধানও তাদের কাছে অপরিচিত ও অপ্রয়োজনীয়! (নাউযুবিল্লাহ) ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান তো-আল্লাহ হেফাযত করুন-মুসলিম পরিচয় বহনকারীদের দ্বারা আক্রমণেরও শিকার। ঐসব বিধানের মধ্যে একটি হচ্ছে পর্দা বিধান। এই সব ‘মুসলমানদের’ কে বোঝাবে যে, এটা নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের শামিল। ইসলামের এই বিধানগুলো শুধু আমাদের আখেরাতে নাজাতেরই উপায় নয়, আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্থি ও পবিত্রতারও রক্ষাকবচ। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে আমরা নিজেদের আর্দশ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের পরিবার ও সমাজেও পশ্চিমা সমাজের ভয়াবহ উপসর্গগুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। পশ্চিমা সভ্যতা যেসব মরণব্যাধিতে আক্রান্ত তা থেকে যদি আমরা আমাদের পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে চাই তার একমাত্র উপায় ইসলামের বিধান ও আদর্শের সামনে আত্মসমর্পণ। আমরা যদি আমাদের পরিবারিক শান্তি ফিরে পেতে চাই তাহলে নারী-পুরুষ সকলকে পর্দা-বিধানের অনুসারী হতে হবে।

পর্দা : বিধান ও কল্যাণ-



পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের মায়েদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এই বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং ইফফাত ও পবিত্রতার একমাত্র উপায়।
অনেকে মনে করেন, পর্দা-বিধান শুধু নারীর জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যে শ্রেণীর জন্য যে পর্দা উপযোগী তাকে সেভাবে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে কোনো ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিই কুরআন-সুন্নাহর পর্দা সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এই বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, ইসলামে পর্দার বিধানটি অন্যান্য হিকমতের পাশাপাশি নারীর সম্মান ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই দেওয়া হয়েছে। এজন্য এই বিধানের কারণে প্রত্যেককে ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। কৃতঘ্ন হয়ে এ বিধান সম্পর্কে অযথা আপত্তি করা উচিত নয়।

   নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

  এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)

সুতরাং মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা-বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি।
পর্দা-বিধান কুরআন মজীদে
পর্দার বিধানটি ইসলামের একটি অকাট্য বিধান। কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াতে এই বিধান দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। এখানে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ তুলে ধরা হল।
এক.
  ...
  হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪
ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.)কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।
দুই.
...
তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)

এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।
এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে?
তিন.

তরজমা : (হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, ‘সাধারণত যা প্রকাশিত’ অর্থ হচ্ছে কাপড়।-তাফসীরে তাবারী ১৮/১১৯
এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।
চার.

তরজমা : তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ... (সূরা নূর : ৩১)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
.
  আল্লাহ তাআলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তাআলা যখন

আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন।-সহীহ বুখারী ২/৭০০
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা’ অর্থ তারা মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।-ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭
আল্লামা আইনী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা বিহা’ অর্থাৎ যে চাদর তারা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত করলেন। (উমদাতুল কারী ১৯/৯২)
আল্লামা শানকীতী রাহ. বলেন, এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, উপরোক্ত মহিলা সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মুখমন্ডল আবৃত করারও আদেশ করেছেন। তাই তারা আল্লাহ তাআলার আদেশ পালনার্থে নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।
পাঁচ.

(তরজমা) তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর :  ৩১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য। কারণ পরপুরুষকে নুপুরের আওয়াজ শোনানোর উদ্দেশ্যে সজোরে পদবিক্ষেপ যখন নিষেধ করা হয়েছে তখন যে সকল কাজ, ভঙ্গি ও আচরণ এর চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে তা নিষিদ্ধ হওয়া তো সহজেই বোঝা যায়। মুসলিম নারীদের জন্য এটি আল্লাহ রাববুল আলামীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
পর্দার বিধান হাদীস শরীফে
১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে  বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী
এই হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।
২. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল  কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২
ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।
৪. ওকবা ইবনে আমের জুহানী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসারী সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয় আত্মীয় সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে, সে তো মৃত্যু। -সহীহ বুখারী ৯/২৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৯, ১৫৩

এই হাদীসে বেগানা নারী-পুরুষের একান্ত অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজন যেমন দেবর-ভাসুর ইত্যাদির সাথে অধিক সাবধানতা অবলম্বনকে অপরিহার্য করা হয়েছে।
৫. হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯
৬.  উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না?-সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮

৭. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ,
হাদীস: ২৯৩৫
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।
৮. আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সাহাবা-যুগের সাধারণ মহিলারাও গায়র মাহরাম পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত করতেন। কারণ আসমা বিনতে আবি বকর রা. এখানে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ ছাড়া অন্য নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।
৯. ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে একান্তে সাক্ষাত করে তখন তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।-জামে তিরমিযী
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, একজন মহিলা পর্দার পিছন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন না এবং) বললেন, আমি জানি না, এটা কি পুরুষের হাত না নারীর। মহিলা আরজ করলেন, ‘নারীর হাত।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যদি নারী হতে তাহলে নিশ্চয়ই নখে মেহেদী থাকত।’-সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পীর-মুর্শিদ ও উস্তাদের সাথেও পর্দা করা অপরিহার্য।
হযরত উমাইমা বিনতে রুকাইকা রা. থেকে বাইয়াত সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে যে, নারীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি আমাদের নিজেদের চেয়েও মেহেরবান। সুতরাং আপনার হাত মোবারক দিন, আমরা বাইয়াত হই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি নারীদের সাথে হাত মিলাই না। (যা মুখে বলেছি তা মেনে চলাই তোমাদের জন্য অপরিহার্য)।-মুয়াত্তা মালিক
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর কসম! বাইয়াতের সময় তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি শুধু মুখে বলতেন, তোমাকে বাইয়াত করলাম।-সহীহ বুখারী ২/১০৭১
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।-মুসলিম ২/২০৫, হাদীস : ২১২৮

এই হাদীসে বেপর্দা নারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে। সুতরাং তাদের মৃত্যুর আগেই তাওবা করে পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা কর্তব্য।
উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, কুরআন মজীদে ও হাদীস শরীফে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। এই বিধান মেনে চলা সকল ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য অপরিহার্য। এবার ঐ সকল নিকটাত্মীয়দের কথা উল্লেখ করছি, যাদের মাঝে পর্দার হুকুম নেই। এরা ছাড়া অন্য সকলের সাথেই পর্দা করতে হবে।
যাদের সাথে পর্দা নেই
মাহরাম পুরুষের সাথে নারীর পর্দা নেই। মাহরাম পুরুষ দ্বারা উদ্দেশ্য হল এমন পুরুষ আত্মীয়, যার সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-পিতা, ভাই ইত্যাদি।
আর যে পুরুষের সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর বোন বা এমন নারীর বিবাহে থাকা, যাদের দু’জনকে বিবাহসূত্রে একত্র করা জায়েয নয়) দূর হওয়ার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম। তার সাথে পর্দা করা ফরয।
পুরুষের জন্য মাহরাম ও গায়র-মাহরাম নারী
একজন পুরুষের মাহরাম নারী হল এমন নারী, যার সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-মা, মেয়ে ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে যে নারীর সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর অন্য পুরুষের বিবাহে থাকা) দূর হওয়ার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম।
মাহরামের প্রকারভেদ
সাধারণত তিন ধরনের সম্পর্ককে শরীয়ত মাহরাম হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছে। যথা : ক) বংশীয়/ঔরসজাত সম্পর্ক। খ) দুধ সম্পর্ক ও গ) বৈবাহিক সম্পর্ক।
বংশগত সম্পর্কের কারণে মাহরাম নারীর বংশ সম্পর্কিত মাহরাম পুরুষগণ হলেন-১. পিতা, দাদা-নানা ও তদোর্ধ্ব পুরুষ। ২. পুত্র, পৌত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৩. ভাই-সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়। ৪. ভ্রাতুষ্পুত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৫. ভাগ্নে (সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের ছেলে)। ৬. চাচা।
৭. মামা।
আল্লাহ তাআলার বাণী-

(তরজমা) তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। (সূরা নূর (২৪) : ৩১)

পুরুষের বংশ সম্পর্কিত মাহরাম নারীগণ হলেন-
১. মা ২. কন্যা ৩. ভগ্নী ৪. ফুফু, ৫. খালা ৬. ভ্রাতুষ্পুত্রী ৭. ভাগ্নী।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগ্নী। ... (সূরা নিসা (৪) : ২৩)

দুধ সম্পর্কের কারণে মাহরাম দুগ্ধপানের কারণেও মাহরাম সাব্যস্ত হয়ে থাকে। দুধ মা, দুধ কন্যা, দুধ বোন ইত্যাদি নারীগণ পুরুষের মাহরাম পরিগণিত হবেন। অনুরূপভাবে দুধ পিতা, দাদা ও তদোর্ধ্ব পুরুষ, দুধ পুত্র ও তদস্তন পুরুষ, দুধ ভাই ইত্যাদি পুরুষ নারীর মাহরাম হিসেবে গণ্য হবেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা ... দুধ-মা, দুধ বোন। ... (সূরা নিসা : (৪) : ২৩)

বিখ্যাত মুফাসসির আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
একজন নারী যদি কোনো শিশুকে দুধ পান করায় তাহলে সে দুগ্ধ পানকারীর জন্য হারাম হয়ে যায়। কারণ সে তার মা। তেমনি দুধমার মেয়ে, বোন হওয়ার কারণে; দুধমার বোন, খালা হওয়ার কারণে; দুধমার মা, নানী হওয়ার কারণে; দুধমার স্বামীর অন্য পক্ষের কন্যা, বোন হওয়ার কারণে; স্বামীর বোন, ফুফু হওয়ার কারণে; স্বামীর মা, দাদী হওয়ার কারণে ঐ শিশুর জন্য হারাম হয়ে যায়। তেমনি দুধমার ছেলে-মেয়ের সন্তানাদিও হারাম হয়ে যায়। কারণ তারা তার ভাই-বোনের
সন্তানাদি। (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আফলাহ (যিনি আয়েশা রা.-এর দুধ চাচা) একবার আমার নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। তিনি আমাকে অনুমতি প্রদানের আদেশ করলেন।
মুসলিমের রেওয়ায়েত অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার সাথে পর্দা করো না। কেননা, বংশীয় সম্পর্কের দ্বারা যা হারাম হয়, দুধ সম্পর্ক দ্বারাও তা হারাম হয়।-সহীহ বুখারী ৮/৩৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৪৭; সুনানে নাসায়ী ৬/৯৯
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম
মাহরাম সাব্যস্ত হওয়ার তৃতীয় কারণ হল বিবাহ। বৈবাহিক সম্পর্কের দ্বারাও নারী-পুরুষ একে অপরের মাহরাম সাব্যস্ত হয়। নারীর বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষ হল স্বামীর পিতা (শ্বশুর), স্বামীর অন্য পক্ষের পুত্র ইত্যাদি। তেমনিভাবে নিজের শাশুড়ি, স্ত্রীর গর্ভজাত অন্য পক্ষের কন্যা ইত্যাদি নারীও পুরুষের জন্য মাহরাম গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, ... শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে।... (সূরা নিসা : ২৩)

ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. বলেন-বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম নারী চার প্রকার : ১. স্ত্রীর মা (শাশুড়ি) ২. স্ত্রীর কন্যা ৩. পিতার স্ত্রী (সহোদর মা, সৎ মা) ও ৪. পুত্রবধু। (তাফসীরে কুরতুবী ২/৭৪)
উল্লেখ্য, শাশুড়ি বলতে স্ত্রীর মা, দাদী-নানী এভাবে উপরের দিকের সকলকে বোঝাবে। তবে স্ত্রীর খালা, ফুফু অর্থাৎ খালা শাশুড়ি, ফুফু-শাশুড়ি মাহরাম নয়। এঁদের সাথে পর্দা আছে। একই কথা নারীর ক্ষেত্রে। স্বামীর পিতা, দাদা ও নানার সাথে পর্দা নেই। তবে স্বামীর চাচা, মামা অর্থাৎ চাচা-শ্বশুর, মামা-শ্বশুরের সাথে পর্দা আছে।
উপরের আলোচনা থেকে পর্দার বিধান পালন সম্পর্কে আমরা যা পেয়েছি তা হচ্ছে-
এক. পর্দার বিধান পালন করার অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করা, যা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-

(তরজমা) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অবকাশ থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হবে। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৬)

দুই. পর্দার বিধান মেনে চলা হচ্ছে ঈমানের দাবি। কেননা আল্লাহ তাআলা পর্দা-বিধানের ক্ষেত্রে শুধু ঈমানদার নারীপুরুষকেই সম্বোধন করেছেন।
তামীম গোত্রের কয়েকজন নারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আগমন করল, যাদের পরনে ছিল পাতলা কাপড়। উম্মুল মুমিনীন তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমরা যদি মুমিন নারী হও তাহলে এ তো মুমিন নারীর পোশাক নয়। আর যদি মুমিন না হও তাহলে তা ব্যবহার করতে পার।’ (মাআলিমুস সুনান ৪/৩৭৬)
এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর। তখন উম্মুল মুমিনীন রা. বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই।’ (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪)
তিন. পর্দাপালন হল সতর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক লাজুক ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন। (আবু দাউদ, হাদীস : ৪০১২, ৪০১৩; সুনানে নাসাঈ ১/২০০; মুসনাদে আহমদ ৪/২২৪
আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-

(তরজমা) তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না।-সূরা ত্বহা (২০) : ১১৮)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-

(তরজমা) হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।- সূরা আ’রাফ (৭) : ২৬)

চার. পর্দা হল নারী-পুরুষ উভয়ের হৃদয়ের পবিত্রতার উপায়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেছেন।
পাঁচ. পর্দা হল ইফফাত তথা চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উপায়। এই ইফফত ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুআর অংশ। তিনি দোয়া করতেন,
অর্থ : (হে আল্লাহ!) আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি হেদায়েত, তাকওয়া ও ইফফত (চারিত্রিক পবিত্রতা)।-সহীহ মুসলিম (কিতাবুয যিকর; জামে তিরমিযী (দাওয়াত অধ্যায়); ইবনে মাজাহ (দুআ অধ্যায়); মুসনাদে আহমদ ১/৪১১, ৪১৬ ও ৪৩৬
এই পবিত্রতা হচ্ছে জান্নাতী নারীদের একটি গুণ। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আয়াতে এর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাদের অসাধারণ রূপের বর্ণনা দেওয়ার সাথে সাথে একথাও বলেছেন যে, তারা নির্ধারিত গৃহে অবস্থান করবে এবং নিজ স্বামী ছাড়া অন্যের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। তো তাদের সৌন্দর্যের পাশপাশি তাদের পবিত্রতারও প্রশংসা করেছেন। সুতরাং রূপ-সৌন্দর্যের সাথে যদি ইফফাত ও সতীত্ব থাকে তবে এরচেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে?!! আর পর্দাই হল সতীত্ব রক্ষার উপায়।

মুসলমানের  পোশাক : কিছু মূলনীতি

পোশাক-পরিচ্ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম, কুরআন-হাদীসে অন্যান্য বিষয়াদির মতো লেবাস-পোশাক বিষয়েও হুকুম-আহকাম দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পোশাক সম্পর্কিত দ্বীনী হেদায়াত ও শরীয়তের বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের তরবিয়ত করেছেন। আর
সাহাবায়ে কেরামও নিজ নিজ ঘরে গিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মতো স্ত্রী-কন্যা ও সন্তান-সন্ততির তরবিয়ত করেছেন। কারণ পোশাক-পরিচ্ছদের ভালো মন্দ মানুষের কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, চরিত্র ও নৈতিকতা তথা মানবিক জীবনের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে এবং অন্তর ও মন-মানসিকতায় গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই পোশাকের বিষয়টি এ রকম সাধারণ কোনো বিষয় নয় যে, একটি কাপড় কিনলাম এবং তা পরে নিলাম। বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি।
পোশাক যে অনেক বড় নেয়ামত তা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
 
হে আদমের সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বস্ত্তত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই উত্তম। এসব আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম। এর উদ্দেশ্য মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করে।
পোশাকের কিছু মৌলিক নীতিমালা
পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের বিধান অত্যন্ত যৌক্তিক ও উপকারী। শরীয়ত বিশেষ কোনো পোশাক সুনির্দিষ্ট করে দেয়নি এবং কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইন বা আকৃতিও বলে দেয়নি যে, এ ধরনের পোশাকই তোমাদের পরতে হবে; বরং বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল, আবহাওয়া ও মৌসুম ভেদে পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে কিছু মৌলিক নীতি ও সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, এ ধরনের পোশাক গ্রহণীয় ও এ ধরনের পোশাক বর্জনীয়। সুতরাং মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে এসব নীতিমালা ও সীমারেখা মেনে চলা জরুরি। যে পোশাক এই নীতিমালা ও সীমারেখা অনুযায়ী হবে সেটাই শরীয়তসম্মত পোশাক বলে গণ্য হবে।

এক. পোশাক এমন আঁটসাঁট ও ছোট মাপের হতে পারবে না, যা পরলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এবং দৈহিক গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।

আবু ইয়াযীদ মুযানী রাহ. বলেন, হযরত ওমর রা. মহিলাদেরকে কাবাতী (মিসরে প্রস্ত্ততকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না। তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫২৮৮
দুই. পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন পাতলা সুতির কাপড়, নেটের কাপড় ইত্যাদি। অবশ্য পাতলা কাপড়ের নিচে সেমিজজাতীয় কিছু ব্যবহার করলে তা জায়েয হবে।
হযরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তার মা থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকটে এল। তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন।-মুয়াত্তা মালেক ২/৯১৩, হাদীস : ৬
তিন. পোশাকের ক্ষেত্রে কাফের-মুশরিক ও ফাসেক লোকদের অনুসরণ-অনুকরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না। বিশেষত সেইসব পোশাকের ক্ষেত্রে যা অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘উসফুর’ (ছোট ধরনের লাল বর্ণের ফুল গাছ) দ্বারা রাঙানো দুটি কাপড় পরতে দেখে বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে কাফিরদের পোশাক। অতএব তুমি তা পরিধান করো না।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২০৭৭; নাসায়ী, হাদীস : ৫৩১৬
তাছাড়া অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির  সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০২৭
চার. পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ উদ্দেশ্য হওয়া যাবে না।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুখ্যাতি ও প্রদর্শনীর পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬২৪৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০২৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২০৮৭
পাঁচ. পুরুষদের জন্য মেয়েলী পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা নিষেধ।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব পুরুষের উপর লানত করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে)। আর সেই সব নারীর উপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৮৮৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারিনী নারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৯২
ছয়. পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় করা, বিলাসিতা করার জন্য বা শখের বশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চমূল্যের পোশাক ক্রয় করা নিষেধ।
হযরত আমর ইবনে শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা খাও, পান কর, অন্যদের দান কর এবং কাপড় পরিধান কর যে পর্যন্ত অপচয় ও অহংকার করা না হয়।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৫৯; ইবনে মাজাহ,হাদীস : ৩১০৫
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, যা মনে চায় খাও, যা মনে চায় পরিধান কর যে পর্যন্ত দুটি বিষয় না থাকে : অপচয় ও অহংকার।-সহীহ বুখারী ১০/১৫২
সাত. গায়রে মাহরাম ও পর পুরুষের সামনে অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না, যাতে তারা সেদিকে আকৃষ্ট হয়।

তারা যেন নিজেদের ভূষণ প্রকাশ না করে।
উক্ত আয়াতে নারীদেরকে হুকুম করা হয়েছে তারা যেন গায়রে মাহরাম বা পর পুরুষের সামনে নিজেদের পুরো শরীর বড় চাদর বা বোরকা দ্বারা আবৃত করে রাখে। যাতে তারা সাজ-সজ্জার অঙ্গসমূহ দেখতে না পায়।
ইমাম যাহাবী রাহ. বলেন, যে সব কর্ম নারীর উপর লানত করে তা হল অলংকার ও আকর্ষণীয় পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার ...। আলকাবায়ের পৃ. ১০২

নিজ গৃহে অবস্থান কর সাজ-সজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত।
প্রাচীন জাহেলী যুগে নারীরা নির্লজ্জ সাজ-সজ্জার সাথে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াত। আজকের নব্য জাহেলিয়াতের অশ্লীলতা এতটাই উগ্র যে, তার সামনে প্রাচীন জাহেলিয়াত ম্লান হয়ে গেছে।
আট. পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় নিষেধ এবং তা কবীর গুনাহ।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নীচে যাবে তা (টাখনুর নীচের অংশ) জাহান্নামে জ্বলবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৮৭

হযরত আবু হুবাইব ইবনে মুগাফফাল গিফারী রা. মুহাম্মাদ কুরাশীকে লুঙ্গি টেনে চলতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে অহংকারবশত পায়ের নীচে কাপড় ফেলে চলবে সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবে চলবে।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৫৪২
আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, তোমরা নিজগৃহে অবস্থান কর। এ আয়াতে একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, নারীর আসল জায়গা ও কর্মস্থল তার ঘর। গৃহকর্ম ও খান্দান গড়ে তোলাই তার দায়িত্ব। যে সব তৎপরতা এ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটায় তা নারীজীবনের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এর অর্থ এমন নয় যে, ঘর হতে বের হওয়া তার জন্য একদম জায়েয নয়। অতি প্রয়োজনে ঘর হতে বের হওয়া জায়েয। তবে কিছু আদাব ও নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে।
১. পুরো শরীর বড় এবং মোটা চাদর দ্বারা অথবা সমগ্র শরীর ঢাকা যায় এমন বোরকা দ্বারা আবৃত করে ফেলবে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের কোনো অংশ খোলা রাখা যাবে না। চেহারা, উভয় হাত কব্জিসহ এবং উভয় পা টাখনুসহ আবৃত করবে। পথ-ঘাট দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। প্রয়োজনে হাত ও পায়ের মোজা এবং চেহারার জন্য আলাদা নেকাব ব্যবহার করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন।

 হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের মুখের উপর তাদের চাদর নামিয়ে দেয়।-সূরা আহযাব : ৫৯
অন্য আয়াতে মুমিন নারীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন-তোমরা সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত। -সূরা আহযাব : ৩৩

মনে রাখতে হবে, টাখনু পর্যন্ত কদম, কব্জি পর্যন্ত হাতের পাতা এবং চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে তা নামাযের সময় খোলা রাখা যাবে। কিন্তু এসব অঙ্গ পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। ফলে গায়রে মাহরাম ও পরপুরষের সামনে তা খোলা রাখা যাবে না।
২. ঘরের বাইরে যাওয়ার সময়  মেক-আপ, সাজসজ্জা গ্রহণ করবে না এবং কোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয় এবং লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার খুশবু গ্রহণ করে, তবে
সে ব্যভিচারিণী।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১৭৪-৭৫
৩. স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি গ্রহণ করবে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে নারী স্বামীর ঘর হতে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বের হয়ে যায় সে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত অথবা স্বামী সন্তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার উপর অসন্তুষ্ট থাকেন।-কানযুল উম্মাল
৪. দূরের সফর হলে একা যাবে না; বরং কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণে বলতে শুনেছি, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া নির্জনে অবস্থান করবে না। এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩০২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪১
৫. এমনভাবে চলবে না যে, অলংকারের শব্দ মাহরাম নয় এমন কেউ শুনতে পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন-মুসলিম নারীদের উচিত, মাটিতে এমনভাবে পা না ফেলা, যাতে তাদের গুপ্ত সাজ-সজ্জা জানা হয়ে যায়।-সূরা নূর : ৩১
৬. গায়রে মাহরাম তথা বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী! মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। ... -সূরা নূর : ৩১
হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে করণীয় কী-জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন।-সহীহ  মুসলিম, হাদীস : ২১৫৯
৭. মাহরাম নয় এমন পুরুষের সাথে অতি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবে না। একান্ত যদি বলতেই হয় তবে নরম ও কোমল ভাষায় বলবে না, যাতে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। পাছে অন্তরে ব্যাধি আছে এমন ব্যক্তি লালায়িত হয়ে পড়ে। আর তোমরা বলো সঙ্গত কথা।-সূরা আহযাব : ৩২

ইসলামের পর্দা-বিধান ও আমাদের অসতর্কতা

ইসলাম আল্লাহ পাকের মনোনীত দ্বীন। জীবনের এমন কোনো অঙ্গন নেই, যেখানে ইসলামের বিধান ও শিক্ষা নেই। সেই শিক্ষা ও বিধান যখন আমরা ভুলে যাই তখনই আমাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসে। আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি তো আছেই, দুনিয়ার জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে যায়।
সম্প্রতি নারীনির্যাতন খুব বেড়ে গেছে, বিশেষত উঠতি বয়েসী মেয়েরা চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এটা এ সমাজের চরম ব্যর্থতা যে, নিজেদের মা-বোনকেও নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এ অবস্থায় মা-বোনদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন প্রয়োজন অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, বিপর্যয়ের সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়ে চলেছে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতা। বর্তমান নিবন্ধে চলমান সমাজচিত্রের কিছু অংশ ও আমাদের অবহেলার কিছু দিক পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চাই।
ই.
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেছেন-(তরজমা) ঈমানদাররা! ইসলামে প্রবেশ কর পরিপূর্ণভাবে আর অনুসরণ করো না শয়তানের পদাঙ্ক; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।

এখানে সম্ভবত পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করার একটি দিক স্পষ্ট হয়েছে। আমি নামায পড়ি, রোযা রাখি, কিন্তু জাহেলিয়াতের মোহ ত্যাগ করতে পারি না, সন্তান-সন্ততিকে বানাতে চাই ‘প্রগতিশীল মুসলিম’ তাহলে আমি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে ঢুকিনি। আমি পূর্ণাঙ্গ মুসলিম তখনই হতে পারব যখন বিশ্বাস করব ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বলে এবং শিক্ষা-দীক্ষায়, রুচি ও জীবনাচারে ইসলাম যা দিয়েছে তাকেই গ্রহণ করতে পারব সর্বোত্তম বলে।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, ‘ঈমানের লযযত ঐ ব্যক্তি পেয়েছে, যে আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে।’
চার:
মধ্য প্রাচ্যের একটি দেশের একজন দাঁতের চিকিৎসকের কথা সেখানকার পত্র-পত্রিকায় এসেছিল, যিনি প্রায় প্রতিটি রোগিনীর সাথেই অশোভন আচরণ করেছেন। এমনকি সেই সব দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে তাদের অনেককে অবৈধ সম্পর্কেও বাধ্য করেছেন।
আমাদের দেশেও কি এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না? তো আমরা যারা পর্দা মেনে চলি তাদের সাবধান থাকা প্রয়োজন। একান্ত অপারগ অবস্থায় যদি পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতেই হয় তাহলেও মাহরাম পুরুষকে সাথে নিয়ে চিকিৎসকের সামনে যাওয়া উচিত। কোনো অবস্থাতেই একা যাওয়া উচিত নয়। হাদীস শরীফে কি বেগানা নারী-পুরুষের একান্ত সাক্ষাতকে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়নি?
পাঁচ.
মোবাইল ফোন এখন আমাদের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। একটি মোবাইল নেই এমন মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। মোবাইল ফোনের কারণে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া ও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। এটা মোবাইলের সুফল। অন্যদিকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান মেনে না চলার কারণে মোবাইলের মাধ্যমে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে। 
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার বিষয়ে আমরা কিছু সতর্কতা রক্ষা করতে পারি। পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের নাম্বার সংরক্ষণ করে রাখতে পারি এবং অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলে স্বামী বা অন্য কারো মাধ্যমে রিসিভ করাতে পারি। মহিলার কণ্ঠ শুনলেই অনেকে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা শুরু করে দেয় সেগুলোর জবাব না দিয়ে চুপচাপ মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আর প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কুরআনের বিধান অনুযায়ী অনাকর্ষণীয় কণ্ঠে কথা বলা উচিত।
ছয়.
আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত পীরভক্ত। ভক্তি-শ্রদ্ধা যদি সঠিক মাত্রায় হয় এবং সঠিক পাত্রে হয় তাহলে দোষের কিছু নেই। হক্কানী পীর-মাশায়েখ মানুষকে তাকওয়া-পরহেযগারী শিক্ষা দেন এবং আত্মশুদ্ধির দীক্ষা দেন, সর্বোপরি তাঁরা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালিত করেন। তাই আল্লাহওয়ালা বুযুর্গের সাথে ইসলাহ ও সংশোধনের সম্পর্ক রাখা ফায়েদাজনক। তবে চকচকে সবকিছুই যেমন সোনা নয় তেমনি পীর নামধারী ব্যক্তিমাত্রই আল্লাহওয়ালা নয়। সবকিছুর মতো এখানেও ভেজাল আছে। কিছু প্রতারক আছে, যারা নিজেদেরকে পীর নামে পরিচয় দেয় এবং নারী-পুরুষের সকল সমস্যার সমাধানের গ্যারান্টি দেয়। বলাবাহুল্য, এরা ‘পীর’ নয়। এদের একটি বড় পরিচয় এরা পর্দা করে না। সকল বয়েসের নারী অবাধে এদের কাছে যায় আর ওরাও নানারকম তেলেসমাতি দেখিয়ে মেয়েদেরকে ফাঁদে ফেলে। বন্ধ্যাত্ব থেকে শুরু করে কত শত রোগের যে তারা সমাধান দেয় তার ইয়ত্তা নেই!
এই পর্দাহীনতার সপক্ষে তারা নানা রকম ‘ব্যাখ্যা’ও দিয়ে থাকে। যেমন কেউ বলে, ‘পীর হচ্ছে রূহানী পিতা, সুতরাং তার সাথে পর্দা কেন?’ কেউ বলে, ‘ভিতরের পর্দাই বড় পর্দা, বাইরের পর্দার প্রয়োজন কী?’ কিন্তু মনে রাখতে হবে, সকল পীরের বড় পীর কোরআন মজীদ; সকল মুরশিদের বড় মুরশিদ নবীর সুন্নাহ। সুতরাং কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোনো পীরের পীরালি গ্রহণযোগ্য নয়।
তো যারা নিজেদের দ্বীন ও ঈমান রক্ষায় আগ্রহী তাদেরকে এ সকল ভন্ড প্রতারকদের কাছ থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। পর্দা হচ্ছে কুরআনের অকাট্য বিধান। এই বিধান লঙ্ঘনকারী-সে যে পরিচয়ই ধারণ করুক-কোনোভাবেই আল্লাহর খাস বান্দা হতে পারে না।
শেষকথা
এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে অসতর্কতার কিছু ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হল। চিন্তা করলে দেখা যাবে, এ ধরনের আরো অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে পর্দার বিষয়ে অসর্তকতা প্রদর্শন করা হয়। আমাদের কর্তব্য, ঐ সকল ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া এবং পুরোপুরিভাবে পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করা। একমাত্র আল্লাহর বিধানেই রয়েছে আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন এবং তাওফীক দান করুন। আমীন।

ফ্রান্সে বোরকায় জরিমানাঃ-

বোরকা বা নেকাব পরা মুসলমান নারীর অধিকার। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি তাদের জন্য অবশ্য-পালনীয়ও বটে। কিন্তু ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে বোরকা পরার বিরুদ্ধে আইন করা হয়েছে। আইন থাকলেও অন্য দেশগুলোতে এ আইনটি কার্যকর করা বা এর জন্য ধর-পাকড় করার কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ব্যতিক্রম ফ্রান্স। সেখানে গত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ থেকে এ আইনটি জোরালোভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। ওই আইন অনুযায়ী বোরকা পরা কোনো মহিলা যদি তার মুখমন্ডল দেখাতে না চান, তবে পুলিশ তাকে সর্বোচ্চ ১৫০ ইউরো বা ২১৬ ডলার জরিমানা করতে পারে। ফ্রান্সের এ আইনটির আগ্রাসী আরেকটি রূপ হল, এতে ফরাসী বা বিদেশী যে কোনো বোরকা পরা মহিলাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে-যদি তিনি রাস্তা, পার্ক বা শপিংমলের মতো প্রকাশ্যস্থানে বোরকা পরে বের হন।
তবে এএফপি ও বিবিসির সূত্রে ১২ এপ্রিল ঢাকার পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, বোরকা বিরোধী আইন কার্যকর করার প্রথম দিনেই সচেতনভাবে মুসলিম নারীরা এ আইনটি ভাঙতে শুরু করেছেন। ফ্রান্সের আভিগনন শহর থেকে প্যারিসগামী ট্রেনে উঠার আগে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে আইন ভেঙ্গে বোরকা পরা নারী কানিজা দিদার (৩২) বলেন, ফরাসী এ আইন তার ইউরোপীয় অধিকার লঙ্ঘন করেছে। আইনভাঙ্গার কারণে তাকে জরিমানার অর্থ গুণতে হয়েছে। তাকে নিয়ে ওই দিন ফরাসী মিডিয়াতে যথেষ্ট হৈ চৈ হয়েছে। কিন্তু এতে তিনি মোটেও দমে যাননি। জরিমানা দিয়ে হলেও এ উল্টো আইন ভেঙ্গে বোরকা পরে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এদিকে বোরকা পরার ‘অপরাধে’ আইন অনুযায়ী মুসলিম নারীদের ওপর যে জরিমানা চাপানো হবে সে জরিমানার অর্থ যোগান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এক ফরাসী মুসলিম ব্যবসায়ী। তিনি ফ্রান্সে বোরকা পরা নারীদের সহযোগিতার জন্য তার ২০ লাখ ইউরো মূল্যের সম্পত্তি নিলামে তোলার প্রস্ত্ততি নিয়েছেন। তিনি চান, বোরকা পরায় অভ্যস্ত ও আগ্রহী মুসলিম নারী যেন আইনের কারণে বোরকা না খুলেন। আইন ভাঙ্গার কারণে জরিমানা যা গুনতে হবে সেটা তিনি দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার মতো আরো বহু মুসলিম ব্যবসায়ী ফরাসী মুসলিম নারীদের সাহায্যে দাঁড়িয়ে যাবেন।
বোরকা বিরোধী এ আইনটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরিকল্পনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামী মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এ আইন জারি ও কার্যকর করার ফলে দেশটিতে রাষ্ট্রীয় মদদে ইসলাম-আতঙ্ক ও মুসলিম বিরোধী বর্ণবাদের সূচনা হবে। কমিশনের সভাপতি বলেছেন, ২০০৪ সালে ফ্রান্সের স্কুলগুলোতে উড়না বা স্কার্ফ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে অনেক মুসলিম মেয়ে পড়াশোনা ও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দেশটিতে মুসলমানদের ওপর হামলা বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীতা বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৬০ লাখ মুসলমানের বসবাসক্ষেত্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন স্থানীয় ভোটারদের মন জয় করতে। এদিকে বোরকা বিরোধী আইনের এ দেশটি উপরে উপরে সভ্যতা ও মানবাধিকারের ডংকা বাজালেও দেখা যাচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রকাশ্য নারী কেলেঙ্কারি ও নারী নির্যাতনের নানা ঘটনায় তোলপাড় চলছে দুনিয়াজুড়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সারকোজি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে কয়েক বছর যাবত বিয়ে না করেই ঘর-সংসার করছেন সাবেক এক মডেলের সঙ্গে। তাকে ফার্স্ট লেডির মর্যাদা দিয়ে সঙ্গে নিয়ে দেশ-বিদেশে সফরও করছেন তিনি। অপর দিকে আগামী নির্বাচনে তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্যবিদায়ী আইএমএফ প্রধান সম্প্রতি জোরপূর্বক এক হোটেল-সেবিকার ওপর চড়াও হওয়ায় গ্রেফতার হয়ে আমেরিকায় বন্দি জীবন যাপন করছেন। তার সামনে এখন দীর্ঘ কারাবাসের হাতছানি।
এখানে দেখা যাচ্ছে, যে দেশটিতে আইন করে বোরকা নিষেধ করা হয়, বোরকা পরলে জরিমানা দিতে হয়, সর্বোচ্চ স্তরে প্রকাশ্য লাম্পট্য আর ঘৃণ্য যৌন নির্যাতনের কালোদাগ সে দেশের বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। অপরদিকে আইন করে, জরিমানা ধার্য করেও মুসলিম নারীদেরকে বোরকাবিহীন জীবনে বাধ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজেদের শালীনতা ও ইসলামসম্মত পোশাকরীতি বজায় রাখতে তারা যে কোনো মূল্যেই প্রস্ত্তত। এমনকি তাদের এই নৈতিক কাজে সহযোগিতার জন্য ক্ষতি স্বীকার করেও আর্থিক যোগান দিতে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুসলিম ভাইয়েরা পিছপা হচ্ছেন না। আল্লাহর দ্বীনের প্রতি অবজ্ঞার ফল ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি ভালবাসার ধারা যুগে যুগে এ রকমই হয়ে থাকে।


বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ অসীম। বান্দাকে তিনি দান করেছেন অসংখ্য নেয়ামত। তাঁর বড় নেয়ামতসমূহের একটি পোশাক, যার কথা আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে বলেছেন। পোশাক হচ্ছে নর-নারীর অঙ্গের ভূষণ এবং লজ্জার আবরণ। আল্লাহ রাববুল আলামীনের নিকট বান্দার পোশাক-শোভিত রূপটিই পছন্দনীয়। তাই বিশেষভাবে ইবাদতের সময় তিনি বান্দাকে আদেশ করেছেন যেন সে পোশাক-সৌন্দর্য গ্রহণ করে।  পক্ষান্তরে শয়তানের কাছে পছন্দনীয় হচ্ছে মানুষের নগ্ন ও বিকৃত রূপ। আর তা হবেই না কেন, সে তো আদম সন্তানের প্রকাশ্য দুশমন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কার পছন্দ গ্রহণ করব-রাহমানের, না শয়তানের?
দুই.
পোশাকের মানদন্ডে বিচার করলেও বোঝা যায় পশ্চিমা সভ্যতা হচ্ছে শয়তানের প্রতিভূ। আর এ কারণেই পশ্চিমা আদর্শের অনুসারীদের পোশাক দিন দিন সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। প্রথমে পোশাক ছিল হাটুর নীচ পর্যন্ত, এরপর তা উঠে এল হাটুর উপরে। এরপর এল প্যান্ট-ফতুয়া, এল নেটের জামা, এল টাইটস-সর্টস। যেন হাদীসে বর্ণিত ‘পোশাক পরিহিতা নগ্ন নারী’র দৃষ্টান্ত একের পর প্রকাশিত হতে লাগল, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা বেহেশতের ঘ্রাণটুকুও পাবে না। বেদনার বিষয় এই যে, এই সব দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের মুসলিম-সমাজে। পশ্চিমা সভ্যতা আমাদের তাহলে কোন দিকে নিয়ে চলেছে?
তিন.
   আমরা ভুল পথে চলেছি। পশ্চিমা সংস্কৃতি কখনো আমাদের অনুকরণের বস্ত্ত হতে পারে না। ঐ সভ্যতায় কি নারীর বিন্দুমাত্র মর্যাদা আছে? সেখানে তো নারী নিছক ভোগের বস্ত্ত। বিভিন্ন উপায়ে নারীকে প্রলুব্ধ করা হয়েছে পুরুষের আনন্দের চিতায় আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য। এতেই নাকি আধুনিক! নারীর পরম মোক্ষলাভ!
প্রিয় বোন! তুমি যদি হও স্বচ্ছ দৃষ্টির অধিকারী, তোমার বুকে যদি থাকে মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করার শক্তি তাহলে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান কর ঐসব প্রতারণার প্রলোভন এবং ফিরে এসো সেই পথে, যার শেষে আছে চির শান্তির আশ্রয়।

আল কুরআনে আল্লাহ বলেন,(: আলে-ইমরান,:আয়াত: ১৯১,)

বাংলা অনুবাদ:

যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।

আমাদের উপর বর্ষিত হোক রাববুল আলামীনের অপার করুণা।
আরো বিস্তারিত দেখুন : ইসলামে নারীদের পর্দার বিধান



বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

পারিবারিক সুখ শান্তির জন্য দোয়া।

 আল কুরআন, ২৫  আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪ وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ ا...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ