অমুসলিমের ঘরে জন্ম নিলে সে কেন জাহান্নামি হবে? লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অমুসলিমের ঘরে জন্ম নিলে সে কেন জাহান্নামি হবে? লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০২ সেপ্টেম্বর ২০২১

অমুসলিমের ঘরে জন্ম নিলে সে কেন জাহান্নামি হবে?



খৃষ্টান ঘরে জন্ম নেয়া মুসলিম শিশু পরিবারের দেখাদেখি খৃষ্টান হয়। ইহুদীর সন্তান ইহুদী আর হিন্দুর সন্তান হিন্দু হয়। কিন্তু তার জন্ম উক্ত ধর্মগুলোতে হয়নি। হয়েছে মুসলিম হিসেবেই।

  হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের(ইসলামী স্বভাব)   উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। -বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৫

এখন প্রশ্ন হল, সে তার পরিবারের দেখাদেখি উক্ত ধর্মগুলো অনুসরণ করে মৃত্যুবরণ করল। ইসলাম সে মানেনি। তাহলে সে শাস্তি পাবে কেন? এর উত্তরের আগে আপনার প্রশ্নটির এ অংশ ‘তার কাছে ইসলাম পৌঁছেনি’ কথাটির উপর আমাদের আপত্তি রয়েছে। কারণ, এটি সঠিক নয় যে, বর্তমানে কারো কাছে ইসলাম পৌঁছেনি। কারণ, সারা বিশ্বেই ইসলাম পৌঁছে গেছে। শুধুমাত্র নিজের বিবেক বুদ্ধি ও মেধা খাঁটিয়ে শুধু বুঝে নেয়া বাকি।

কুরআন পৃথিবীর সকল প্রান্তেই পাওয়া যায়। সুতরাং ব্যক্তির বোধবুদ্ধি হবার পর সত্য অনুসন্ধান করা তার দায়িত্ব। প্রতিটি ব্যক্তিই যদি তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক কাজে লাগিয়ে অন্যান্য ধর্মের মাঝে ইসলামের স্বতন্ত্র ও সঠিক হবার বিষয়ে যাচাই করে, তাহলে সে ইসলাম গ্রহণে অবশ্যই বাধ্য হবে। যেমনটি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণ যুগে যুগে করেছেন।

আবার মুসলমান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও অনেকে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় বা ইসলাম পুরাপুরি অনুসরণ করে না। এর কারণ এটাই যে, সে সত্য গ্রহণে পিছিয়ে পড়েছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ 

   "এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়?-সূরা হাম মিম সাজদা-৫৩

ইসলাম সত্য ধর্ম। এটা প্রতিটি মানুষের সামনেই কখনো না কখনো প্রকাশিত হয়ই। কিন্তু গুরুত্ব না দেবার কারণে, কিংবা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে তা মানতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ কারণেই যারা কাফের অবস্থায় জাহান্নামে যাবে, তারা হাশরের ময়দানে তাদের কাছে ইসলামের কোন নিদর্শন প্রকাশিত হয়নি এ দাবী করতে পারবে না। বরং তারা তখন বলবে যে,  

 "যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি। "-সূরা সাজদা-১২

কারণ, তাদের কাছে ইসলামের নিদর্শন পৌঁছেছিল, কিন্তু তারা তা মানেনি। এখন মানবে বলে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে। এবার মানবে বলে ওয়াদা করবে। কিন্তু তাদের সেই আবেদন অসময়ে হওয়া মানা হবে না। কারণ, সময় থাকতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে সত্যপথ অনুসরণ করেনি।

দুনিয়া সকলের জন্য পরিক্ষাকেন্দ্র!  

 "যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।" -সূরা মুলুক-২ অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা যেমন পরীক্ষা। তেমনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করাও পরীক্ষা। মুসলমানরাও নানাভিদ দুঃখ কষ্ট, হতাশায় ঈমানের পরীক্ষায় পরীক্ষায় নিপতিত হয়। আবার অমুসলিমরাও নানাভিদ পরীক্ষা পতিত হয়। এর মাঝে অমুসলিম পিতা মাতার ঘরে জন্ম নেয়াটাও তার জন্য পরীক্ষা। সেইসব পরীক্ষায় যারা যথার্থ উত্তীর্ণ হতে পারবে, তারাই হবে সফলকাম। আল্লাহর দেয়া, জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধি ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি ও কুরআন রিসার্চ করে সত্য পথ অনুসরণ না করার কারণে ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই তার কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি হবে। আর যারা সত্য পথ দেখে তা অনুসরণ করবে, তারা হবে আখেরাতে সফলকাম।

*********************************

সকল মানুষ কেন মুসলিম পরিবারে জন্ম নিল না?

প্রশ্নঃ

“এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষের মূল্যবোধ ও স্বকীয়তার পার্থক্য থাকবেই। যেমনঃ হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ বেড়ে ওঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েই। তার কাছে তার ধর্মই শ্রেষ্ঠ। ফলে তার মনে গেঁথে যাওয়া স্বাভাবিক যে সে সারাজীবন হিন্দু হয়েই থাকবে।এরপর ও ধরা যাক, সে কোন একভাবে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছে। কিন্তু সে কেন তার ধর্ম পরিচয় বাদ দিয়ে নতুন আরেকটিকে বেছে নিবে? জন্মসূত্রে মুসলমান হয়ে বেড়ে ওঠা কোন মানুষের তুলনায় তার জন্য মুসলমান হওয়াটা কি অনেক কঠিন হয়ে গেল না? আমার নিজেরই ভাবতে ভয় লাগে যে, আমার জন্ম যদি মুসলমান ঘরে না হয়ে অন্য কোথাও হতো, তাহলে এতদিনে আমার অবস্থা কী দাঁড়াতো! তাহলে এটাই কি নিয়ম হওয়া উচিত ছিল না যে সবাই জীবনের শুরুর দিন থেকেই সমানভাবে ইসলামের ছায়াতলে আসার সুযোগ পাবে? কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্সের আলোকে জানালে উপকৃত হব।”

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মূল একটি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে উপরোক্ত প্রশ্নের উদ্ভব। সেটি হল, দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে কেন পাঠালেন?

আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে পরীক্ষা করতে পাঠিয়েছেন। কে আল্লাহকে চিনতে পারে। আর কে চিনতে পারে না।]

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। [সূরা  মুলুক-২]

 

আর চিনতে পারার বয়সের আগে কেউ মারা গেলে তাই উক্ত ব্যক্তির কোন শাস্তি নেই। কিন্তু চিনতে পারার বয়সে উপনীত হবার পর যদি আল্লাহকে স্বীকার করে তার আনুগত্য না করে মারা যায়, তাহলে সে জাহান্নামী হবে। চাই উক্ত ব্যক্তি মুসলিমের ঘরে জন্ম নিক আর অমুসলিমের ঘরে জন্মগ্রহণ করুক।

জন্মগ্রহণের সাথে আখেরাতের কামিয়াবী নিহিত নয়। জন্মগ্রহণের পর যখন সে বুঝতে শিখবে তখন তার পদক্ষেপটা কী ছিল? সেটাই মুখ্য।

যেহেতু দুনিয়ার পরীক্ষার স্থান। তাই সবাইকে মুসলিমের ঘরে জন্ম দিলে সেই পরীক্ষাটা হয়ে যেতো সহজ।

তাই সকলকে কেন মুসলিমের ঘরে জন্ম দেয়া হল না? প্রশ্নটা মূলত অবান্তর।

পরীক্ষা সহজ হয় না। খানিক কঠিন হয়। এ কারণে অনেক অমুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। আবার জন্মসূত্রে মুসলিমও মুরতাদ হয়ে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়।

অমুসলিম পরিবারে কোন শিশু জন্ম নেয়া কোন অপরাধ নয়। এতে শিশুটিরও কোন দোষ নেই। এ কারণেই হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে প্রতিটি শিশু যার ঔরষেই জন্ম গ্রহণ করুক না কেন, সে নাবালক থাকা অবস্থায় মুসলিমই থাকে। তারপর বড় হলে তার পিতা মাতা তাকে ইহুদী খৃষ্টান ইত্যাদি কাফির বানায়।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন চতুষ্পদ  জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে [জন্মগত] কানকাটা দেখেছ? [বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৫]

উক্ত সন্তান যদি ঐ শিশু তথা নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতী হবে।

কিন্তু বালেগ হবার পর, যখন তার বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হয়। তখন আল্লাহর দেয়া আকল দিয়ে তার রবকে চিনে নেয়া দায়িত্ব। মানুষকে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা করেছেন আকল দিয়ে। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কারণ হল, মানুষের আকল-বুদ্ধি, বিবেক আছে। অন্য কোন প্রাণীর তা নেই।

একজন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন মানুষই বুঝতে পারবে যে, সামান্য একটি গাড়ি ইচ্ছেমত চলতে পারে না। নিজে নির্মিত হতে পারে না, এর জন্য নির্মাতা লাগে, গাড়ি চলতে ড্রাইভার লাগে। তো এ বিশ্ব চরাচর, এ সুবিশাল সৌর জগত, অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র এসব কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে না। নিশ্চয় কোন নিপূণ কারিগর তার সুনিপূণ হাতে নির্মাণ করেছেন।

স্বাভাবিক বিবেকই ব্যক্তিকে এক মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাবে। এরপর তার অনুসন্ধিৎসা সত্য ধর্ম খুঁজে নিতে সহায়তা করবে।

এ কারণে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস করা ও তার সময়কার সত্য ধর্মের উপর ঈমান আনয়ন করা  ছাড়াই মৃত্যু বরণ করে, তাহলেই কেবল সে জাহান্নামী হবে।

নাবালেগ তথা শিশু অবস্থায় কাফির ব্যক্তির সন্তান মারা গেলে উক্ত শিশুর কোন শাস্তি নেই।

সহীহ বুখারীর ১৩৮৬ নং বর্ণনায় একটি দীর্ঘ হাদীস এসেছে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘ হাদীসের এক পর্যায়ে এসেছেঃ “আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক বালিকা ছিল।……..”।

এর ব্যাখ্যায় পরে এসেছে-“গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি ইবরাহীম আলাইহি সালাম এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৬, ইফাবা-১৩০৩]

উক্ত হাদীসে এসেছে মানুষের শিশু সন্তানরা জান্নাতে ইবরাহীম আঃ এর কাছে থাকবে। হাদীসে শব্দ হল, মানুষ। মানুষের মাঝে মুসলিম ও বিধর্মী সবাই শামিল।

এ কারণেই ইমাম নববী রহঃ বিধর্মীদের নাবালগ মৃত সন্তানদের জান্নাতী হবার বক্তব্যকে বিশুদ্ধ বলেছেন।

"বলুন,তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ,কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।" [সূরা আনকাবুত-২০]

"তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি,যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না,কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।" [সূরা হজ্ব-৪৬]


উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সংগ্রহ :


বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব

 ইসলামী জীবন প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০  মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যা কিছু আছে...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ