হারাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হারাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৪ জুন ২০২২

হারাম-হালাল

 আল কুরআন, সুরা: মায়েদা

আয়াত নং :-3

টিকা নং:9, 10, 11, 12, 13, 14, 15, 16, 17, 


حُرِّمَتْ عَلَیْكُمُ الْمَیْتَةُ وَ الدَّمُ وَ لَحْمُ الْخِنْزِیْرِ وَ مَاۤ اُهِلَّ لِغَیْرِ اللّٰهِ بِهٖ وَ الْمُنْخَنِقَةُ وَ الْمَوْقُوْذَةُ وَ الْمُتَرَدِّیَةُ وَ النَّطِیْحَةُ وَ مَاۤ اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّیْتُمْ١۫ وَ مَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَ اَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْاَزْلَامِ١ؕ ذٰلِكُمْ فِسْقٌ١ؕ اَلْیَوْمَ یَئِسَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْ دِیْنِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَ اخْشَوْنِ١ؕ اَلْیَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِیْنَكُمْ وَ اَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِیْ وَ رَضِیْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا١ؕ فَمَنِ اضْطُرَّ فِیْ مَخْمَصَةٍ غَیْرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثْمٍ١ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ


তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে মৃতজীব,৯ রক্ত, শূকরের গোশ্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব১০ এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া।১১ আর যা কোন বেদীমূলে১২ যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। )১৩ এছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়।১৪ এগুলো ফাসেকীর কাজ। আজ তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো।১৫ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি (কাজেই তোমাদের ওপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো। )১৬ তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।১৭

তাফসীর : 

টিকা:৯) অর্থাৎ যে পশুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

টিকা:১০) অর্থাৎ যাকে যবেহ করার সময় আল্লাহর ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়। অথবা যাকে যবেহ করার আগে এ মর্মে নিয়ত করা হয় যে, অমুক মহাপুরুষ অথবা অমুক দেবী বা দেবতার নামে উৎসর্গীত। (সূরা বাকারার ১৭১ টীকা দেখুন)


টিকা:১১) অর্থাৎ যে প্রাণীটি উপরোক্ত দুর্ঘটনাগুলোর শিকার হবার পরও মরেনি। বরং তার মধ্যে জীবনের কিছু আলামত পাওয়া যায়। তাকে যবেহ করলে তার গোশ্ত খাওয়া যেতে পারে। এ থেকে এ কথাও জানা যায় যে, হালাল প্রাণীর গোশ্ত একমাত্র যবেহর মাধ্যমে হালাল হয়। একে হালাল করার আর দ্বিতীয় কোন সঠিক পথ নেই। এ ‘যবেহ’ ও ‘যাকাত’ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। এর অর্থ হচ্ছে, গলার এতখানি অংশ কেটে দেয়া যার ফলে শরীরের সমস্ত রক্ত ভালভাবে বের হয়ে যেতে পারে। এক কোপে কেটে বা গলায় ফাঁস দিয়ে অথবা অন্য কোনভাবে প্রাণী হত্যা করলে যে ক্ষতিটা হয় তা হচ্ছে এই যে, এর ফলে রক্তের বেশীর ভাগ অংশ তার শরীরের মধ্যে আটকে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমে গিয়ে তা গোশ্তের সাথে মিশে যায়। অন্য দিকে যবেহ করলে মস্তিকের সাথে শরীরের সম্পর্ক দীর্ঘ সময় বজায় থাকে। এর ফলে প্রতিটি শিরা উপশিরা থেকে রক্ত নিংড়ে বেরিয়ে আসে। এভাবে সারা দেহের গোশ্ত রক্তশূন্য হয়ে যায়। রক্ত হারাম একথা আগেই বলা হয়েছে। কাজেই গোশ্তের পাক ও হালাল হবার জন্য অবশ্যি তার পুরোপুরি রক্তশূন্য হওয়া অপরিহার্য।


টিকা:১২) আসলে ‘নুসুব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে এমন সব স্থান বুঝায় যেগুলোকে লোকেরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর উদ্দেশ্যে বলিদান ও নজরানা পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। সেখানে কোন পাথর বা কাঠের মূর্তি থাক বা না থাক তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের ভাষায় এরই সমার্থবোধক শব্দ হচ্ছে বেদী বা ‘আস্তানা’। কোন মহাপুরুষ, কোন দেবতা বা মুশরিকী আকীদার সাথে এ স্থানটি জড়িত থাকে।


টিকা:১৩) এখানে একথাটি ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে, পানাহারযোগ্য দ্রব্যাদির মধ্যে শরীয়াত যেগুলোকে হালাল ও হারাম বলে দিয়েছে সেগুলোর হালাল ও হারাম হবার মূল ভিত্তি তাদের ভেষজ উপকারিতা ও অনুপকারিতা নয়। বরং তাদের নৈতিক লাভ ও ক্ষতিই এর ভিত্তি। প্রাকৃতিক বিষয়গুলোকে আল্লাহ মানুষের নিজের প্রচেষ্টা, সাধনা, অনুসন্ধান ও গবেষণার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। জীব ও জড় পদার্থগুলোর মধ্যে কোনটি মানুষের দেহে সুখাদ্যের যোগান দিতে পারে এবং কোনটি খাদ্য হিসেবে তার জন্য ক্ষতিকর ও অনুপকারীর তা উদ্ভাবন ও নির্ণয় করার দায়িত্ব মানুষের নিজের ওপর বর্তায়। এসব বিষয়ে তাকে পথনির্দেশ দেবার দায়িত্ব শরীয়াত নিজের কাঁধে তুলে নেয়নি। এ দায়িত্ব যদি শরীয়াত নিজের কাঁধে তুলে নিতো তাহলে সর্বপ্রথম ‘বিষ’ হারাম বলে ঘোষণা করতো। কিন্তু আমরা দেখি কুরআন ও হাদীসের কোথাও এর অথবা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অন্যান্য মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের আদৌ কোন উল্লেখই নেই। শরীয়াত খাদ্যের ব্যাপারে যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে তা হচ্ছে এই যে, কোন্ খাদ্যটি মানুষের নৈতিকতার ওপর কি প্রভাব বিস্তার করে, আত্মার পবিত্রতার জন্য কোন্ খাদ্যটি কোন্ পর্যায়ভুক্ত এবং খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগুলো মধ্য থেকে কোন্ পদ্ধতিটি বিশ্বাস ও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে ভুল বা নির্ভুল? যেহেতু এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবার সাধ্য মানুষের নেই এবং এ অনুসন্ধান চালাবার জন্য যে উপায় উপকরণের প্রয়োজন তাও মানুষের আয়ত্বের বাইরে, আর এ জন্য এসব ব্যাপারে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল করে বসেছে, তাই শরীয়াত কেবলমাত্র এসব বিষয়েই তাকে পথনির্দেশ দেয়। যেগুলোকে সে হারাম গণ্য করেছে, সেগুলোকে হারাম করার কারণ হচ্ছে এই যে, মানুষের নৈতিক বৃত্তির ওপর সেগুলোর খারাপ প্রভাব পড়ে বা সেগুলো তাহারাত ও পবিত্রতা বিরোধী অথবা কোন খারাপ আকীদার সাথে সেগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। পক্ষান্তরে যে জিনিসগুলোকে শরীয়াত হালাল গণ্য করেছে সেগুলোর হালাল হবার কারণ হচ্ছে এই যে, উপরোল্লিখিত দোষগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি দোষেও সেগুলো দুষ্ট নয়। প্রশ্ন করা যেতে পারে, এ জিনিসগুলোর হারাম হবার কারণ আল্লাহ আমাদের বুঝাননি কেন? কারণ বুঝিয়ে দিলে তো আমরা যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারতাম। এর জবাব হচ্ছে, আমাদের পক্ষে ঐ কারণগুলো অনুধাবন করা সম্ভব নয়। যেমন রক্ত, শূকরের গোশ্ত বা মৃত জীব খেলে আমাদের নৈতিক বৃত্তিতে কোন্ ধরনের দোষ, কতটুকু এবং কি পরিমাণে দেখা দেয়, সে সম্পর্কে কোন প্রকার অনুসন্ধান চালাবার কোন ক্ষমতাই আমাদের নেই। কারণ নৈতিকতা পরিমাপ করার কোন উপকরণ আমাদের আয়ত্বাধীন নয়। ধরুন যদি এদের খারাপ প্রভাব বর্ণনা করে দেয়াও হতো, তাহলেও সংশয় পোষণকারীরা প্রায় সে একই জায়গায় থাকতেন যেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন। কারণ এ বর্ণনা ভুল না নির্ভুল, তা সে পরিমাপ করবে কিসের সাহায্যে? তাই মহান আল্লাহ হালাল ও হারামের সীমানা মেনে চলাকে ঈমানের ওপর নির্ভরশীল করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি মেনে নেবে যে, কুরআন আল্লাহরই কিতাব, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লারই রসূল এবং আল্লাহকে সর্বজ্ঞ ও সবচেয়ে জ্ঞানী ও কুশলী বলে স্বীকার করবে সে তার নির্ধারিত সীমানা অবশ্যই মেনে চলবে। এর কারণ বোধগম্য হোক বা না হোক তার পরোয়া সে করবে না। আর যে ব্যক্তি এ মৌলিক আকীদাটির ব্যাপারেই নিসংশয় নয় তার জন্য যেসব জিনিসের ক্ষতিকর বিষয় মানুষের জ্ঞানে ধরা পড়েছে কেবল মাত্র সেগুলো থেকে দূরে থাকা এবং যেগুলোর ক্ষতিকর বিষয় মানুষের জ্ঞানে ধরা পড়তে পারেনি সেগুলোর ক্ষতি দুর্ভোগ পোহাতে থাকা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই।



টিকা:১৪) এ আয়াতে যে জিনিসটি হারাম করা হয়েছে দুনিয়ায় তার তিনটি সংস্করণ প্রচলিত আছে। আয়াতে ঐ তিনটিকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। 


একঃ মুশরিকদের মতো করে ‘ফাল’ গ্রহণ করা। এতে কোন বিষয়ে দেব-দেবীর কাছে ভাগ্যের ফয়সালা জানার জন্য জিজ্ঞেস করা হয় অথবা গায়েবের-অজানার ও অদৃশ্যের খবর জিজ্ঞেস করা হয় বা পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে নেয়া হয়। মক্কার মুশরিকরা কাবা ঘরে রক্ষিত ‘হুবল’ দেবতার মূর্তিকে এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছিল। তার দেবীমূলে সাতটি তীর রাখা হয়েছিল। সেগুলোর গায়ে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য খোদাই করা ছিল। কোন কাজ করার বা না করার প্রশ্নে দোদুল্যমানতা দেখা দিলে, হারানো জিনিসের সন্ধান লাভ করতে চাইলে বা হত্যা মামলার ফয়সালা জানতে চাইলে, মোট কথা যেকোনো কাজের জন্যই হুবল-এর তীর রক্ষকের কাছে যেতে হতো, সেখানে নজরানা পেশ করতে হতো এবং হুবল-এর কাছে এ মর্মে প্রার্থনা করা হতো, “আমাদের এ ব্যাপারটির ফয়সালা করে দিন।” এরপর তীর রক্ষক তার কাছে রক্ষিত তীরগুলোর সাহায্যে ‘ফাল’ বের করতো। এতে যে তীরটিই বের হয়ে আসতো, তার গায়ে লিখিত শব্দকেই হুবল-এর ফয়সালা মনে করা হতো। 


দুইঃ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ফাল গ্রহণ। এক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞান-বুদ্ধির সাহায্যে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের মীমাংসার পরিবর্তে কোন প্রকার কুসংস্কার ও অমূলক ধারণা-কল্পনা বা কোন আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে কোন বিষয়ের মীমাংসা করা হয়। অথবা এমন সব উপায়ে ভাগ্যের অবস্থা জানবার চেষ্টা করা হয়, যেগুলো গায়েব জানার উপায় হিসেবে কোন তাত্বিক পদ্ধতিতে প্রমাণিত নয়। হস্তরেখা গণনা, নক্ষত্র গণনা, রমল করা, বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার এবং নানা ধরনের ফাল বের করা এর অন্তর্ভুক্ত। 


তিনঃ জুয়া ধরনের যাবতীয় খেলা ও কাজ। যেখানে অধিকার, কর্মমূলক অবদান ও বুদ্ধিবৃত্তিক ফায়সালার মাধ্যমে বস্তু বন্টনের পদ্ধতি গ্রহণ না করে নিছক কোন ঘটনা-ক্রমিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে বস্তু বণ্টন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যেমন, লটারীতে ঘটনাক্রমে অমুক ব্যক্তির নাম উঠেছে, কাজেই হাজার হাজার ব্যক্তির পকেট থেকে বের হয়ে আসা টাকা তার একার পকেটে চলে যাবে। অথবা তাত্বিক দিক দিয়ে কোন একটি ধাঁধাঁর একাধিক উত্তর হতে পারে কিন্তু পুরস্কারটি পাবে একমাত্র সেই ব্যক্তি যার উত্তর কোন যুক্তিসঙ্গত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নয় বরং নিছক ঘটনাক্রমে ধাঁধাঁ প্রতিযোগিতা পরিচালকের সিন্ধুকে রক্ষিত উত্তরটির সাথে মিলে যাবে। 


এ তিন ধরনের ফাল গ্রহণ ও অনুমানভিত্তিক লটারী করাকে হারাম ঘোষণা করার পর ইসলাম ‘কুরআ’ নিক্ষেপ বা লটারী করার একমাত্র সহজ-সরল পদ্ধতিটিকেই বৈধ গণ্য করেছে। এ পদ্ধতিতে দু’টি সমান বৈধ কাজের বা দু’টি সমপর্যায়ের অধিকারের মধ্যে ফয়সালা করার প্রশ্ন দেখা দেয়। যেমন, একটি জিনিসের ওপর দু’ব্যক্তির অধিকার সবদিক দিয়ে একদম সমান এবং ফায়সালাকারীর জন্য দু’জনের কাউকে অগ্রাধিকার দেবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই আর তাদের দু’জনের মধ্য থেকে কোন একজন নিজের অধিকার প্রত্যাহার করতেও প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় তাদের সম্মতিক্রমে লটারীর মাধ্যমে ফয়সালা করা যেতে পারে অথবা দু’টি একই ধরনের সঠিক ও জায়েয কাজ। যুক্তির মাধ্যমে তাদের কোন একটিকে অগ্রাধিকার দেবার ব্যাপারে এক ব্যক্তি দোটানায় পেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন হলে লটারী করা যেতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন দু’জন সমান হকদারের মধ্যে একজনকে প্রাধান্য দেবার প্রশ্ন দেখা দিতো এবং তাঁর আশংকা হতো যে, তিনি একজনকে প্রাধান্য দিলে তা অন্যজনের মনোকষ্টের কারণ হবে তখন তিনি সাধারণত এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করতেন।

টিকা:১৫) ‘আজ’ বলতে কোন বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তারিখ বুঝানো হয়নি বরং যে যুগে ও সময়ে এ আয়াত নাযিল হয় সেই সময়কালকে বুঝানো হয়েছে। আমাদের ভাষায়ও ‘আজ’ শব্দটি একইভাবে সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

“তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে।”-অর্থাৎ তোমাদের দ্বীন এখন একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে এবং সে তার নিজস্ব শাসন ও কর্তৃত্ব ক্ষমতার জোরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কাফেররা এতদিন তার পথে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল। কিন্তু এখন তারা এ দ্বীনকে ধ্বংস করার এবং তোমাদেরকে আবার জাহেলিয়াতের অন্ধকার গর্ভে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েছে। “কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো।” অর্থাৎ এ দ্বীনের বিধান এবং এর হেদায়াত কার্যকর করার ব্যাপারে এখন তোমাদের আর কোন কাফের শক্তির প্রভাব, পরাক্রম, প্রতিবন্ধকতা, প্রাধান্য ও হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হতে হবে না। এখন আর মানুষকে ভয় করার কোন কারণ নেই। তোমাদের এখন আল্লাহকে ভয় করা উচিত। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার ব্যাপারে এখন যদি তোমরা কোন ত্রুটি করো তাহলে এ জন্য তোমাদের কাছে এমন কোন ওজর থাকবে না যার ভিত্তিতে তোমাদের সাথে কোমল ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন আর শরীয়াতের বিরুদ্ধাচরণের অর্থ এ হবে না যে, এ ব্যাপারে তোমরা অন্যদের প্রভাবে বাধ্য হয়ে এমনটি করেছো। বরং এর পরিষ্কার অর্থ হবে, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করতে চাও না।

টিকা:১৬) দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেবার অর্থই হচ্ছে তাকে একটি স্বতন্ত্র চিন্তা ও কর্ম ব্যবস্থা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা হয়েছে। তার মধ্যে জীবনের সমস্ত প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এখন আর কোন অবস্থায়ই তার বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই। নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দেবার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা আমার আনুগত্য ও বন্দেগী করার যে অঙ্গীকার করেছিল তাকে যেহেতু তোমরা নিজেদের প্রচেষ্টা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য ও আন্তরিক অঙ্গীকার হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছো, তাই আমি তাকে গ্রহণ করে নিয়েছি এবং তোমাদেরকে কার্যত এমন অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছি যে, এখন তোমাদের গলায় প্রকৃতপক্ষে আমার ছাড়া আর কারোর আনুগত্য ও বন্দেগীর শৃংখল নেই। এখন আকীদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যেমন তোমরা আমার মুসলিম (আনুগত্যকারী) ঠিক তেমনি কর্মজীবনেও আমার ছাড়া আর কারোর মুসলিম (আনুগত্যকারী) হয়ে থাকতে তোমরা কোনত্রুমেই বাধ্য নও। এ অনুগ্রহগুলোর কথা উচ্চারণ করার পর মহান আল্লাহ নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কিন্তু এ বাক পদ্ধতি থেকে একথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটে ওঠে, যেন এখানে আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন, আমি যখন তোমাদের ওপর এ অনুগ্রহগুলো করেছি তখন এর দাবী হচ্ছে, এখন আমার আইনের সীমার মধ্যে অবস্থান করার ব্যাপারে তোমাদের পক্ষ থেকে যেন আর কোন ত্রুটি দেখা না দেয়। 


বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, এ আয়াতটি বিদায় হজ্জের সময় ১০ হিজরীতে নাযিল হয়েছিল। কিন্তু যে বক্তব্যের ধারাবাহিকতার সাথে এর সম্পর্ক তা ৬ হিজরীতে হোদাইবিয়া চুক্তির সমসাময়িক কালের। বর্ণনা রীতির কারণে বাক্য দু’টি পরস্পর এমনভাবে মিশে গেছে যার ফলে কোন ক্রমেই ধারণা করা যাবে না যে, শুরুতে এ বাক্যগুলো ছাড়াই এ ধারবাহিক বক্তব্যটি নাযিল হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে এ বাক্যগুলো নাযিল হবার পর তা এখানে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য প্রকৃত ব্যাপার একমাত্র আল্লাহই জানেন, তবে আমার অনুমান, প্রথম এ আয়াতটি এ একই প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিল। তাই লোকেরা তখন এর আসল গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। পরে যখন সমগ্র আরব ভূখণ্ড বিজিত হল এবং ইসলাম শক্তি অর্জন করে পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেলো তখন মহান আল্লাহ পুনর্বার এ বাক্য তাঁর নবীর প্রতি নাযিল করেন এবং এটি ঘোষণা করে দেবার নির্দেশ জারি করেন।

টিকা:১৭) সূরা বাকারার ১৭২ টীকা দেখুন।

টিকা: 172

এই আয়াতে তিনটি শর্ত সাপেক্ষে হারাম জিনিস ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এক যথার্থ অক্ষমতার মুখোমুখি হলে, যেমন ক্ষুধা বা পিপাসা প্রাণ সংহারক প্রমাণিত হতে থাকলে, অথবা রোগের কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকলে এবং এ অবস্থায় হারাম জিনিস ছাড়া আর কিছু না পাওয়া গেলে। দুই, মনের মধ্যে আল্লাহ‌র আইন ভঙ্গ করার ইচ্ছা পোষণ না করলে। তিন, প্রয়োজনের সীমা অতিক্রম না করলে যেমন কোন হারাম পানীয়ের কয়েক ফোঁটা বা কয়েক ঢোক পান করলে অথবা হারাম খাদ্যের কয়েক মুঠো খেলে যদি প্রাণ বাঁচে তাহলে বেশী ব্যবহার না করা।

৫-মায়েদা


(5:4)


অনুবাদ:    লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? বলে দাও, তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস হালাল করা হয়েছে। আর যেসব শিকারী প্রাণীকে তোমরা শিক্ষিত করে তুলেছো, যাদেরকে আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমরা শিকার করা শিখিয়েছো, তারা তোমাদের জন্য যেসব প্রাণী ধরে রাখে, তাও তোমরা খেতে পারো। তবে তার ওপর আল্লাহর নাম নিতে হবে। আর আল্লাহর আইন ভাঙ্গার ব্যাপারে সাবধান! অবশ্যি হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।



(5:5)


অনুবাদ:    আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র বস্তু হালাল দেয়া হয়েছে। আহ্‌লি কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। আর সংরক্ষিত মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা এমন জাতিদের মধ্য থেকে হোক, যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না। আর যে ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে অস্বীকার করবে, তার জীবনের সকল সৎ কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এবং আখেরাতে সে হবে নিঃস্ব ও দেউলিয়া।






বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ