২২ মে ২০২৪

আল্লাহর নুরের বর্ণনা

আল কুরআন, সুরা: ২৪-আন্-নূর

আয়াত নং :-35

টিকা নং:61, 62, 63, 64, 65, 66, 67, 


اَللّٰهُ نُوْرُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ مَثَلُ نُوْرِهٖ كَمِشْكٰوةٍ فِیْهَا مِصْبَاحٌ١ؕ اَلْمِصْبَاحُ فِیْ زُجَاجَةٍ١ؕ اَلزُّجَاجَةُ كَاَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّیٌّ یُّوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبٰرَكَةٍ زَیْتُوْنَةٍ لَّا شَرْقِیَّةٍ وَّ لَا غَرْبِیَّةٍ١ۙ یَّكَادُ زَیْتُهَا یُضِیْٓءُ وَ لَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ١ؕ نُوْرٌ عَلٰى نُوْرٍ١ؕ یَهْدِی اللّٰهُ لِنُوْرِهٖ مَنْ یَّشَآءُ١ؕ وَ یَضْرِبُ اللّٰهُ الْاَمْثَالَ لِلنَّاسِ١ؕ وَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌۙ

আল্লাহ৬১ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর আলো।৬২ (বিশ্ব-জাহানে) তাঁর আলোর উপমা যেন একটি তাকে একটি প্রদীপ রাখা আছে, প্রদীপটি আছে একটি চিমনির মধ্যে, চিমনিটি দেখতে এমন যেন মুক্তোর মতো ঝকঝকে নক্ষত্র, আর এ প্রদীপটি যয়তুনের এমন একটি মুবারক৬৩ গাছের তেল দিয়ে উজ্জল করা হয়, যা পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়।৬৪ যার তেল আপনাআপনিই জ্বলে ওঠে, চাই আগুন তাকে স্পর্শ করুক বা নাকরুক। (এভাবে) আলোর ওপরে আলো (বৃদ্ধির সমস্ত উপকরণ একত্র হয়ে গেছে)৬৫ আল্লাহ যাকে চান নিজের আলোর দিকে পথনির্দেশ করেন।৬৬ তিনি উপমার সাহায্যে লোকদের কথা বুঝান। তিনি প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করেই জানেন।৬৭

তাফসীর : 

টিকা:৬১) এখান থেকে শুরু হয়েছে মুনাফিকদের প্রসঙ্গ। ইসলামী সমাজের মধ্যে অবস্থান করে তারা একের পর এক গোলযোগ ও বিভ্রাট সৃষ্টি করে চলছিল এবং ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী রাষ্ট্র ও দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ব্যাপারে ঠিক তেমনিভাবে তৎপর ছিল যেমন বাইরের প্রকাশ্য কাফের ও দুশমনরা তৎপর ছিল। তারা ছিল ঈমানের দাবীদার। মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তারা। মুসলমানদের বিশেষ করে আনসারদের সাথে ছিল তাদের আত্মীয়তা ও ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক। এ জন্য তারা মুসলমানদেরমধ্যে ফিতনা বিস্তারের সুযোগও বেশী পেতো এবং কোন কোন আন্তরিকতা সম্পন্ন মুসলমানও নিজের সরলতা বা দুর্বলতার কারণে তাদের ক্রীড়নক ও পৃষ্ঠপোষকেও পরিণত হয়ে যেতো। কিন্তু আসলে বৈষয়িক স্বার্থ তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছিল এবং ঈমানের দাবী সত্ত্বেও কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদৌলতে দুনিয়ায় যে আলো ছড়িয়ে পড়ছিল তা থেকে তারা ছিল একেবারেই বঞ্চিত। এ সুযোগে তাদেরকে সম্বোধন না করে তদের সম্পর্কে যা কিছু বলা হচ্ছে তার পিছনে রয়েছে তিনটি উদ্দেশ্য। প্রথমত তাদেরকে উপদেশ দেয়া। কারণ আল্লাহর রহমত ও রবুবিয়াতের প্রথম দাবী হচ্ছে, পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত মানুষকে তার সকল নষ্টামি ও দুষ্কৃতি সত্ত্বেও শেষ সময় পর্যন্ত বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে। দ্বিতীয়ত ঈমান ও মুনাফিকির পার্থক্যকে পরিষ্কার ও খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করে দেয়া। এভাবে কোন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য মুসলিম সমাজে মু’মিন ও মুনাফিকের মধ্যে ফারাক করা কঠিন হবে না। আর এ ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত বর্ণনার পরও যে ব্যক্তি মুনাফিকদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়বে অথবা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে সে তার নিজের এ কাজের জন্য পুরোপুরি দায়ী হবে। তৃতীয়ত মুনাফিকদেরকে পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করে দেয়া। তাদেরকে এ মর্মে জানিয়ে দেয়া যে, মু’মিনদের জন্য আল্লাহর যে ওয়াদা রয়েছে তা কেবলমাত্র তাদের জন্য যারা সাচ্চা দিলে ঈমান আনে এবং তারপর এ ঈমানের দাবী পূরণ করে। এ প্রতিশ্রুতি এমন লোকদের জন্য নয় যারা নিছক আদমশুমারীর মাধ্যমে মুসলমানদের দলে ভিড়ে গেছে। কাজেই মুনাফিক ও ফাসিকদের এ প্রতিশ্রুতির মধ্য থেকে কিছু অংশ পাওয়ার আশা করা উচিত নয়।

টিকা:৬২) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী শব্দ সাধারণভাবে কুরআন মজীদে “বিশ্ব-জাহান” অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই অন্য কথায় আয়াতের অনুবাদ এও হতে পারেঃ আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব-জাহানের আলো। আলো বলতে এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যার বদৌলতে দ্রব্যের প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ যে নিজে নিজে প্রকাশিত হয় এবং অন্য জিনিসকেও প্রকাশ করে দেয়। মানুষের চিন্তায় নূর ও আলোর এটিই আসল অর্থ। কিছুই না দেখা যাওয়ার অবস্থাকে মানুষ অন্ধকার নাম দিয়েছে। আর এ বিপরীতে যখন সবকিছু দেখা যেতে থাকে এবং প্রত্যেকটি জিনিস প্রকাশ হয়ে যায় তখন মানুষ বলে আলো হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলার জন্য “নূর” তথা আলো শব্দটির ব্যবহার ও মৌলিক অর্থের দিক দিয়েই করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ তিনি এমন কোন আলোকরশ্মি নন যা সেকেণ্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে চলে এবং আমাদের চোখের পর্দায় পড়ে মস্তিষ্কের দৃষ্টি কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে, আলোর এ ধরণের কোন অর্থ এখানে নেই। মানুষের মস্তিষ্ক এ অর্থের জন্য এ শব্দটি উদ্ভাবন করেছে, আলোর এ বিশেষ অবস্থা সে অর্থের মৌল তত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তার ওপর এ শব্দটি আমরা এ বস্তুজগতে আমাদের অভিজ্ঞতায় যে আলো ধরা দেয় তার দৃষ্টিতে প্রয়োগ করি। মানুষের ভাষায় প্রচলিত যতগুলো শব্দ আল্লাহর জন্য বলা হয়ে থাকে সেগুলো তাদের আসল মৌলিক অর্থের দৃষ্টিতে বলা হয়ে থাকে, তাদের বস্তুগত অর্থের দৃষ্টিতে বলা হয় না। যেমন আমরা তাঁর জন্য দেখা শব্দটি ব্যবহার করি। এর অর্থ এ হয় না যে, তিনি মানুষ ও পশুর মতো চোখ নামক একটি অংগের মাধ্যমে দেখেন। আমরা তাঁর জন্য শোনা শব্দ ব্যবহার করি। এর মানে এ নয় যে, তিনি আমাদের মতো কানের সাহায্যে শোনেন। তাঁর জন্য আমরা পাকড়াও ও ধরা শব্দ ব্যবহার করি। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি হাত নামক একটি অংগের সাহায্যে ধরেন। এসব শব্দ সবসময় তাঁর জন্য একটি প্রায়োগিক মর্যাদায় বলা হয়ে থাকে এবং একমাত্র একজন স্বল্প বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এ ভুল ধারণা করতে পারে যে, আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় শোনা, দেখা ও ধরার যে সীমাবদ্ধ ও বিশেষ আকৃতি রয়েছে তার বাইরে এগুলোর অন্য কোন আকৃতি ও ধরন হওয়া অসম্ভব। অনুরূপভাবে “নূর” বা আলো সম্পর্কেও একথা মনে করা নিছক একটি সংকীর্ণ চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয় যে, এর অর্থের ক্ষেত্র শুধুমাত্র এমন রশ্মিরই আকারে পাওয়া যেতে পারে যা কোন উজ্জ্বল অবয়ব থেকে বের হয়ে এসে চোখের পর্দায় প্রতিফলিত হয়। এ সীমিত অর্থে আল্লাহ আলো নন বরং ব্যাপক, সার্বিক ও আসল অর্থে আলো। অর্থাৎ এ বিশ্ব-জাহানে তিনিই এক আসল “প্রকাশের কার্যকারণ”, বাকি সবই এখানে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যান্য আলোক বিতরণকারী জিনিসগুলোও তাঁরই দেয়া আলো থেকে আলোকিত হয় ও আলো দান করে। নয়তো তাদের কাছে নিজের এমন কিছু নেই যার সাহায্যে তারা এ ধরনের বিস্ময়কর কাণ্ড করতে পারে। আলো শব্দের ব্যবহার জ্ঞান অর্থেও হয় এবং এর বিপরীতে অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতাকে অন্ধকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এ অর্থেও আল্লাহ বিশ্ব-জাহানের আলো। কেননা, এখানে সত্যের সন্ধান ও সঠিক পথের জ্ঞান একমাত্র তাঁর মাধ্যমেই এবং তার কাছ থেকেই পাওয়া যেতে পারে। তাঁর দান গ্রহণ করা ছাড়া মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার এবং তার ফলশ্রুতিতে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়।

টিকা:৬৩) মুবারক অর্থাৎ বহুল উপকারী, বহুমুখী কল্যাণের ধারক।

টিকা:৬৪) অর্থাৎ যা খোলা ময়দানে বা উঁচু জায়গায় অবস্থান করে। যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর রোদ পড়ে। তার সামনে পেছনে কোন আড় থাকে না যে, কেবল সকালের রোদটুকু বা বিকালের রোদটুকু তার ওপর পড়ে। এমন ধরনের যয়তুন গাছের তেল বেশী স্বচ্ছ হয় এবং বেশী উজ্জ্বল আলো দান করে। নিছক পূর্ব বা নিছক পশ্চিম অঞ্চলের যয়তুন গাছ তুলনামূলকভাবে অস্বচ্ছ তেল দেয় এবং প্রদীপে তার আলোও হালকা থাকে।

টিকা:৬৫) এ উপমায় প্রদীপের সাথে আল্লাহর সত্তাকে এবং তাদের সাথে বিশ্ব-জাহানকে তুলনা করা হয়েছে। আর চিমনি বলা হয়েছে এমন পর্দাকে যার মধ্যে মহাসত্যের অধিকারী সমস্ত সৃষ্টিকুলের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন, অর্থাৎ এ পর্দাটি যেন গোপন করার পর্দা নয় বরং প্রবল প্রকাশের পর্দা। সৃষ্টির দৃষ্টি যে তাঁকে দেখতে অক্ষম এর কারণ এটা নয় যে, মাঝখানে অন্ধকার আছে, বরং আসল কারণ হচ্ছে, মাঝখানের পর্দা স্বচ্ছ এবং এ স্বচ্ছ পর্দা অতিক্রম করে আগত আলো এত বেশী তীক্ষ্ম, তীব্র, অবিমিশ্র ও পরিবেষ্টনকারী যে, সীমিত শক্তি সম্পন্ন চক্ষু তা দেখতে অক্ষম হয়ে গেছে। এ দুর্বল চোখগুলো কেবলমাত্র এমন ধরনের সীমাবদ্ধ আলো দেখতে পারে যার মধ্যে কমবেশী হতে থাকে, যা কখনো অন্তর্হিত আবার কখনো উদিত হয়, যার বিপরীতে কোন অন্ধকার থাকে এবং নিজের বিপরীতধর্মীর সামনে এসে সে সমুজ্জ্বল হয়। কিন্তু নিরেট, ভরাট ও ঘন আলো, যার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগীই নেই, যা কখনো অন্তর্হিত ও নিশ্চিহ্ন হয় না এবং যা সবসময় একইভাবে সব দিক আচ্ছন্ন করে থাকে তাকে পাওয়া ও তাকে দেখা এদের সাধ্যের বাইরে। 

আর “এ প্রদীপটি যয়তুনের এমন একটি মুবারক গাছের তেল দিয়ে উজ্জ্বল করা হয় যা পূর্বেরও নয় পশ্চিমের নয়।” এ বক্তব্য কেবলমাত্র প্রদীপের আলোর পূর্ণতা ও তার তীব্রতার ধারণা দেবার জন্য বলা হয়েছে। প্রাচীন যুগে যয়তুনের তেলের প্রদীপ থেকে সর্বাধিক পরিমাণ আলোক লাভ করা হতো। এর মধ্যে আবার উঁচু ও খোলা জায়গায় বেড়ে ওঠা যয়তুন গাছগুলো থেকে যে তেল উৎপন্ন হতো সেগুলোর প্রদীপের আলো হতো সবচেয়ে জোরালো। উপমায় এ বিষয়বস্তুর বক্তব্য এই নয় যে, প্রদীপের সাথে আল্লাহর যে সত্তার তুলনা করা হয়েছে তা অন্য কোন জিনিস থেকে শক্তি (Energy) অর্জন করছে। বরং একথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, উপমায় কোন মামুলি ধরনের প্রদীপ নয় বরং তোমাদের দেখা উজ্জ্বলতম প্রদীপের কথা চিন্তা করো। এ ধরনের প্রদীপ যেমন সারা বাড়ি আলোকাজ্জল করে ঠিক তেমনি আল্লাহর সত্তাও সারা বিশ্ব-জাহানকে আলোক নগরীতে পরিণত করে রেখেছে। আর এই যে বলা হয়েছে, “তার তেল আপনা আপনিই জ্বলে ওঠে আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও”, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রদীপের আলোকে অত্যধিক তীব্র করার ধারণা দেয়া। অর্থাৎ উপমায় এমন সর্বাধিক তীব্র আলো দানকারী প্রদীপের কথা চিন্তা করো যার মধ্যে এ ধরণের স্বচ্ছ ও চরম উত্তেজক তেল রয়েছে। এ তিনটি জিনিস অর্থাৎ যয়তুন, তার পুরবীয় ও পশ্চিমী না হওয়া এবং আগুনের স্পর্শ ছাড়াই তার তেলের আপনা আপনি জ্বলে ওঠা উপমার স্বতন্ত্র অংশ নয় বরং উপমার প্রথম অংশের অর্থাৎ প্রদীপের আনুসঙ্গিক বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত। উপমার আসল অংশ তিনটিঃ প্রদীপ, তাক ও স্বচ্ছ চিমনি বা কাঁচের আবরণ। 

আয়াতের “তাঁর আলোর উপমা যেমন” এ বাক্যাংশটিও উল্লেখযোগ্য। “আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আলো” আয়াতের একথাগুলো পড়ে কারোর মনে যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারতো ওপরের বাক্যাংশটির মাধ্যমে তা দূর হয়ে যায়। এ থেকে জানা যায়, আল্লাহকে “আলো” বলার মানে এ নয় যে, নাউযুবিল্লাহ, আলোই তাঁর স্বরূপ। আসলে তিনি তো হচ্ছেন একটি পরিপূর্ণ ও পূর্ণাংগ সত্তা। তিনি জ্ঞানী, শক্তিশালী, প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ ইত্যাদি হবার সাথে সাথে আলোর অধিকারীও। কিন্তু তাঁর সত্তাকে আলো বলা হয়েছে নিছক তাঁর আলোকোজ্জলতার পূর্ণতার কারণে। যেমন কারোর দানশীলতা গুণের পূর্ণতার কথা বর্ণনা করার জন্য তাকেই “দান” বলে দেয়া অথবা তার সৌন্দর্যের পূর্ণতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে স্বয়ং তাকেই সৌন্দর্য আখ্যা দেয়া।

টিকা:৬৬) যদিও আল্লাহর এ একক ও একচ্ছত্র আলো সমগ্র বিশ্ব-জাহান আলোকিত করছে কিন্তু তা দেখার, জানার ও উপলব্ধি করার সৌভাগ্য সবার হয় না। তা উপলব্ধি করার সুযোগ এবং তার দানে অনুগৃহীত হবার সৌভাগ্য আল্লাহই যাকে চান তাকে দেন। নয়তো অন্ধের জন্য যেমন দিনরাত সমান ঠিক তেমনি অবিবেচক ও অদূরদর্শী মানুষের জন্য বিজলি, সূর্য, চাঁদ ও তারার আলো তো আলোই, কিন্তু আল্লাহর নূর ও আলো সে ঠাহর করতে পারে না। এ দিক থেকে এ দুর্ভাগার জন্য বিশ্ব-জাহানে সবদিকে অন্ধকারই অন্ধকার। দু’চোখ অন্ধ। তাই নিজের একান্ত কাছের জিনিসই সে দেখতে পারে না। এমনকি তার সাথে ধাক্কা খাওয়ার পরই সে জানতে পারে এ জিনিসটি এখানে ছিল। এভাবে ভিতরের চোখ যার অন্ধ অর্থাৎ যার অন্তর্দৃষ্টি নেই সে তার নিজের পাশেই আল্লাহর আলোয় যে সত্য জ্বলজ্বল করছে তাকেও দেখতে পায় না। যখন সে তার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিজের দুর্ভাগ্যের শিকলে বাঁধা পড়ে কেবলমাত্র তখনই তার সন্ধান পায়।

টিকা:৬৭) এর দু’টি অর্থ হয়। এক, তিনি জানেন কোন্ সত্যকে কোন্ উপমার সাহায্যে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বুঝানো যেতে পারে। দুই, তিনি জানেন কে নিয়ামতের হকদার এবং কে নয়। যে ব্যক্তি সত্যের আলোর সন্ধানী নয়, যে ব্যক্তি সমগ্র মনপ্রাণ দিয়ে নিজের পার্থিব স্বার্থেরই মধ্যে বিলীন হয়ে যায় এবং বস্তুগত স্বাদ ও স্বার্থের সন্ধানে নিমগ্ন থাকে আল্লাহ জানেন যে, সে এর সন্ধানী ও ঐকান্তিক সন্ধানী সে-ই এ দান লাভের যোগ্য।





বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ