কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ও সর্বশেষ আলামত হচ্ছে— মালাউল দাজ্জালের আগমন। ইসলামি আকিদার একটি প্রমাণিত বিশ্বাস এটি।
দাজ্জাল কখন আসবে বা কীভাবে আসবে এটি সবারই অজানা। কিন্তু এর ফিতনা হবে খুবই মারাত্মক। মিথ্যে জান্নাত-জাহান্নামের চিত্র দেখিয়ে ও মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। তাই এই ভয়াবহ ফিতনা থেকে বাঁচতে ইসলাম সমাধানও দিয়ে দিয়েছে।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য ইসলামি শরিয়তে এমন একটি আমল স্বীকৃত, যাতে রয়েছে একাধিক নিয়ামত পূর্ণ ফজিলত। আর সেই আমলটি হচ্ছে— সুরা কাহাফ তিলাওয়াত।
সুরা কাহাফ কুরআন মাজিদের ১৮তম সুরা। এই সুরা অবতীর্ণ হয় মক্কায়। এর আয়াত সংখ্যা ১১০টি। ইহুদিদের কিছু প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এই সুরাটি নাজিল হয়। প্রতি জুমাবারে এই সুরাটি পড়ার কথা ইসলামে স্বীকৃত।
সুরা কাহাফ কেন পড়বেন?
হজরত নাওয়াস ইবনে সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করলেন। তিনি আওয়াজকে উঁচু-নিচু করছিলেন। ফলে আমরা মনে করলাম দাজ্জাল খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে।
অতঃপর যখন আমরা উনার কাছে গেলাম, তখন তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমাদের কী হলো। আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করেছিলেন, আওয়াজকে উঁচু-নিচু করেছিলেন, তাই আমরা মনে করলাম দাজ্জাল হয়তো খেজুর বাগানেই আছে।
তিনি বললেন, তোমাদের ক্ষেত্রে দাজ্জাল ছাড়া অন্যকিছুতে এত বেশি ভয় আমাকে দেখানো হয়নি।
যদি আমি তোমাদের মাঝে থাকাবস্থায় সে বের হয়, তা হলে তোমাদের ছাড়া আমি সর্বপ্রথম তার প্রতিরোধ করব।
আর যদি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় সে বের হয়, তা হলে প্রত্যেকে তার প্রতিরোধ করবে।
আল্লাহর শপথ! প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আমার খলিফা রয়েছে। নিশ্চয়ই দাজ্জাল কোঁকড়া চুলবিশিষ্ট যুবক হবে এবং তার চোখ কানা হবে।
যেন আমি আবদুল ওযা ইবনে কাতালের মতো তাকে দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যে তাকে পাবে সে যেন সুরা কাহাফের শুরু অংশ পড়ে। (সহিহ মুসলিম ২৯৩৭, সুনানে আবু দাউদ ৪৩২১, তিরমিজি ২২৪১) (কিছু বর্ণনায় শেষের ১০ আয়াত সম্পর্কে জানা যায় )
২. এক জুমা থেকে আরেক জুমা নূর হিসেবে
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাআলা তাকে পরবর্তী জুমা পযর্ন্ত বিশেষ নূর (আলো) দ্বারা আলোকিত করে দেবেন (বায়হাকি ৬২০৯)।
এক জুমা থেকে আরেক জুমা ছগিরা গুনাহ মাফ
আরেক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পযর্ন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কিয়ামতের দিন আলো দেবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পযর্ন্ত তার সব গুনাহ (ছগিরা) মাফ করে দেওয়া হবে। (আত তারগিব ওয়াতারহিব ১\২৯৭)
অর্থাৎ সুরা কাহাফ তিলাওয়াত একজন মুমিনের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিটি বর্ণে যেমন ১০টি করে নেকি হবে। (তিরমিজি ২৯১০) এবং তার পাশাপাশি উল্লিখিত ফজিলতও আদায় হবে ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন
লেখিকা: শিক্ষার্থী: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর
---_-----
আল কুরআন, ১৮ আল-কাহাফ, আয়াত: ২
একদম সোজা কথা বলার কিতাব, যাতে লোকদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তি থেকে সে সাবধান করে দেয় এবং ঈমান এনে যারা সৎকাজ করে তাদেরকে সুখবর দিয়ে দেয় এ মর্মে যে, তাদের জন্য রয়েছে ভাল প্রতিদান।