সিরিয়া: রক্তক্ষয়ী এক অধ্যায়ের নাম!
সিরিয়ার যুদ্ধের অমানবিক কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবিগুলা যেকোন বিবেকসম্পন্ন মানুষকে মর্মবেদনায় ভোগাবে। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের অদূরে ইস্টার্ন ঘৌটা নামক শহরের ছবি এগুলো।
সিরিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপট কি?
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকা, সৌদি এবং ইসরায়েলি মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা (ফ্রি সিরিয়ান আর্মি) যুদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ বাশার শিয়া, ইরানের মিত্র। মার্কিন-সৌদি-ইসরায়েল চেয়েছিল আঞ্চলিক প্রাধান্য রক্ষায় একে হটাতে। তখন মনে হচ্ছিল আরবের অন্যান্য দেশের মত সিরিয়াতেও বাশারের পতন ঘটবে। কিন্তু শিয়া বাশার আল আসাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ইরান।
গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু এই বাস্তবতায় উত্থান হয় আইএস এর যারা কিনা বাশারের বিরুদ্ধে ছিল। আইএস এবং অন্যান্য বিদ্রোহীদের মিলিত আক্রমণে বাশারের পতন যখন নিশ্চিত তখন নাটকীয়ভাবে রাশিয়া বাশার আল আসাদের পাশে দাঁড়ায় এবং আইএসকে প্রায় হটিয়ে দেয়। এরপরে আমেরিকা সিনে নিয়ে আসে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে যারা মূলত কুর্দি মিলিশিয়া দিয়ে গঠিত। এখন বিভিন্ন ফ্রন্টে এদের সাথেই বাশার এবং রাশিয়ার অনুগত সেনাদের সাথে যুদ্ধ চলছে।
ঘৌটা শহরটি টার্গেট কেন?
এই শহরটিতে বাশারবিরোধী তিনটি শক্তির একটি বড় ঘাঁটি আছে বলে মনে করা হয়। এরা হচ্ছে ,
>জইশ আল ইসলাম (সৌদি সমর্থিত সালাফিস্ট গ্রুপ)
>কাতার সমর্থিত ফাইলাক আল ইসলাম (যারা এককালে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে এফিলিয়েটেড ছিল) এবং
>আহরার-আল-শাম এবং হায়াত-তাহরির আল-শাম (আল-কায়েদা সমর্থিত নুসরাহ ফ্রন্টের সাথে এফিলিয়েটেড) ।
ধারণা করা হচ্ছে এখানে বাশারবিরোধী প্রায় হাজার দশেক যোদ্ধা অবস্থান করছে। এখানকার সাধারণ মানুষ আছে প্রায় চারলাখ পয়ত্রিশ হাজার যারা এই যুদ্ধের নির্মম শিকার।
বাশার আল আসাদ কি করছেন?
এ শহরকে শত্রুমুক্ত করতে আসাদ ২০১১ থেকে একে অবরুদ্ধ রেখেছেন। খাবার, পানি এবং চিকিৎসার মত সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করেছেন। ২০১৩ সালে কেমিক্যাল ওয়েপন (সারিন গ্যাস) ব্যবহার করে প্রায় ১৫০০ মানুষ হত্যা করেছেন।
২০১৮ তে নতুন এমন কি হল যে আবার ঘৌটা আক্রান্ত হল?
এ মাসের শুরুতে দেইর আল জর নামক শহরে আমেরিকা ব্যাকড মিলিশিয়াদের হাতে ৮০ থেকে ১০০ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তারই প্রতিশোধ নিতে ঘৌটার আমেরিকা সমর্থিত সেনাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে রুশ এবং বাশার বাহিনী।
সাধারণ মানুষ মরছে কেন?
ঘৌটায় বাশারবিরোধী সেনারা সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে গেছে। তাই গণবিধ্বংসী বোমা ফেলা হচ্ছে। এবং অনেক নিরীহ নারী, পুরুষ এবং শিশু নিহত হচ্ছে। পাশাপাশি খাবার, পানি এবং চিকিৎসার অভাবে ও অনেকে মারা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহের যুদ্ধে তিন থেকে চারশো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু মঙ্গলবারেই মারা গেছে ৬১ জন।
তথ্য ও ছবি: সংগৃহীত