আল কুরআন, সুরা: ৭-আ'রাফ
আয়াত নং :-157
টিকা নং:112, 113, 114, 115,
اَلَّذِیْنَ یَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِیَّ الْاُمِّیَّ الَّذِیْ یَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ١٘ یَاْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهٰىهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیْهِمُ الْخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَ الْاَغْلٰلَ الَّتِیْ كَانَتْ عَلَیْهِمْ١ؕ فَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِهٖ وَ عَزَّرُوْهُ وَ نَصَرُوْهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ١ۙ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ۠
(আজ তারাই এ রহমতের অংশীদার) যারা এ প্রেরিত উম্মী নবীর আনুগত্য করে,১১২ যার উল্লেখ নিকট এখানে তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১১৩ সে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পাক পবিত্র জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে১১৪ এবং তাদের ওপর থেকে এমন সব বোঝা নামিয়ে দেয়। যা তাদের ওপর চাপানো ছিল আর এমন সব বাঁধন থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যাতে তারা আবদ্ধ ছিল। ১১৫ কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সাহায্য সহায়তা দান করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোক রশ্মির অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভের অধিকারী।
তাফসীর :
টিকা:১১২) ওপরের বাক্যটি পর্যন্ত হযরত মূসার দোয়ার জওয়াব শেষ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর সুযোগ বুঝে এবার সাথে সাথেই বনী ইসরাঈলকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এ ভাষণটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হবার জন্য হযরত মূসা (আ) এর যুগে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছিল আজো সেগুলোই বহাল রয়ে গেছে। আর তোমাদের এ নবীর প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারটি আসলে সেই শর্তগুলোরই দাবী। তোমারদের বলা হয়েছিল, যারা আল্লাহর নাফরমানী থেকে দূরে থাকে আল্লাহর রহমত তাদেরই প্রাপ্য। তাইতো যে নবীকে আল্লাহ নিযুক্ত করেছেন, তার নেতৃত্ব গ্রহণকরতে অস্বীকার করাই হচ্ছে আজকের সবচেয়ে বড় মৌলিক নাফরমানী। কাজেই যতদিন তোমরা এ নাফরমানী থেকে বিরত হবে না, ততদিন তোমরা খুটিনাটি ও ছোটখাটো তাকওয়ার বিষয় নিয়ে যতই মাতামাতি কর না কেন তাকওয়ার ভিত্তিমূল প্রতিষ্ঠিত হবে না। তোমাদের বলা হয়েছিল যাকাতও আল্লাহর রহমতের অংশ পাওয়ার একটি শর্ত। তাইতো আজ এ নবীর নেতৃত্বে দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম চলছে, যতদিন তার সাথে সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা হবে না ততদিন কোন প্রকার অর্থ ব্যয় যাকাতের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কাজেই তোমরা যতই দান-খয়রাত করো এবং নজর-নিয়াজ দাও না কোন, এ পথে অর্থ ব্যয় না করা পর্যন্ত যাকাতের মৌলিক ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হবে না। তোমাদের বলা হয়েছিল, যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহর নিজের রহমত কেবল তাদের জন্যই লিখে রেখেছেন। তাইতো আজ এ নবীর ওপর যেসব আয়াত নাযিল হচ্ছে সেগুলো অস্বীকার করে তোমরা কোনক্রমেই আল্লাহর আয়াত মান্যকারী হিসেবে স্বিকৃতি পেতে পারনা। কাজেই তোমরা তাওরাতের প্রতি ঈমান রাখার যতই দাবী কর না কেন যতদিন তোমরা এ নবীর প্রতি ঈমান আনবে না ততদিন এ শেষ শর্তটিও পূর্ণ হবে না।
এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য “উম্মী” শব্দটি ব্যবহারও বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। বনী ইসরাঈলীরা নিজেদের ছাড়া দুনিয়ার অন্য জাতিদেরকে উম্মী (Gentiles) বলতো। কোন উম্মীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা তো দূরের কথা উম্মীদের জন্য নিজেদের সমান মানবিক অধিকার স্বীকার করাও ছিল তাদের জাতীয় মর্যাদা ও অহংকারের পরিপন্থী। তাই কুরআনেই বলা হয়েছেঃ لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ (উম্মীদের ধন-সম্পদ ভোগ দখল করার জন্য আমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না। (আলে ইমরান ৭৫ আয়াত ) কাজেই আল্লাহ এক্ষেত্রে তাদেরই পরিভাষা ব্যবহার করে বলছেন, এখন তো এ উম্মীর সাথে তোমাদের ভাগ্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর আনুগত্য স্বীকার করলে তোমরা আমার অনুগ্রহের অংশ লাভ করবে, নয়তো শত শত বছর থেকে তোমরা আমার যে ক্রোধের শিকার হয়ে আসছো এখনো তাই তোমাদের কপালে লেখা হবে।
টিকা:১১৩) দৃষ্টান্ত স্বরূপ তাওরাত ও ইনজীলের নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুন। এসব স্থানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮: ১৫-১৯, মথি ২১: ৩৩-৪৬, যোহন ১: ১৯-২১, যোহন ১৪: ১৫-১৭ এবং ২৫-৩০, যোহন ১৫: ২৫-২৬, যোহন ১৬: ৭-১৫)
https://alquranindex114.blogspot.com/2018/05/blog-post_6.html
টিকা:১১৪) অর্থাৎ যে পাক-পবিত্র জিনিসগুলো তারা হারাম করে রেখেছে, সেগুলো তিনি হালাল করে দেন এবং যেসব নাপাক ও অপবিত্র জিনিস তারা হালাল করে নিয়েছে, সেগুলো তিনি হারাম গণ্য করেন।
টিকা:১১৫) অর্থাৎ তাদের ফকীহরা নিজেদের আইনগত সূক্ষ্মতম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক নেতৃবর্গ নিজেদের ধার্মিকতা ও পরহেজগারীর অতি বাড়াবাড়ির সাহায্যে এবং মূর্খ সাধারণ মানুষ নিজেদের কল্প কুসংস্কার ও মনগড়া নীতি-নিয়মের বেড়াজালে আটকে তাদের জীবনকে যেসব বোঝার নীচে দাবিয়ে রাখে এবং যেসব বাঁধনে তাদেরকে বেঁধে রাখে, এ নবী সেই সমস্ত বোঝা নামিয়ে দেন এবং সমস্ত বাঁধন খুলে দেন।