মুফতি তানজিল আমির
জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাতে পেরেছি? নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত করতে পেরেছি? আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি কতটুকু হয়েছে এতদিনে?
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একবার রমজান মাস এলো, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ মাস তোমাদের কাছে এসেছে, এতে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে সব ধরনের কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়েছে। মূলত এর কল্যাণ থেকে চিরবঞ্চিত ব্যক্তিরাই বঞ্চিত ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ)। এ মাসে আল্লাহর জন্য নিজেকে সঁপে দিয়ে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। নিজের পাপরাশি ক্ষমার জন্য কি এখন আমার অশ্রু ঝরে?
মালিকের সান্নিধ্য লাভের জন্য কদিন বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি? কিয়ামূল লাইলে রবের সঙ্গে মধুর আলাপচারিতার স্বাদ কতটুকু অর্জন করেছি? কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতে কতটুকু সময় বরাদ্দ করেছি? কুরআন বোঝার জন্য অনুবাদ বা তাফসির অধ্যয়ন কী পরিমাণ করেছি? সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে দান-সদকা কী পরিমাণ করেছি? গরিব-অসহায়ের ইফতারি বা দু’মুঠো খাবারের জন্য সামর্থ্যরে কতটুকু ব্যয় করতে পেরেছি? সুদ, ঘুস, হারাম ও দুর্নীতি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি কতটুকু?
প্রতিদিন হিসাব করা দরকার। নেক আমলের পাল্লা বাড়ানো দরকার। বেশি থেকে বেশি দোয়া করা দরকার। দোয়া ইবাদতে সাহায্য করে। দোয়ার মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে রবের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। দোয়ার মাধ্যমে অপরাধপ্রবণতা কমে আসে। নেক আমলের আগ্রহ বাড়ে। সুন্দর ও সৎ হওয়া যায়। নৈতিকতা সৃষ্টি হয়। রোজাদারের দোয়া আল্লাহ যখন-তখন কবুল করেন।
নবিজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতায়ালা ফেরত দেন না। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। দুই. সিয়াম আদায়কারীর দোয়া, যতক্ষণ না সে ইফতার করে। তিন. মজলুম ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ : ৯৭০৪)।
রোজাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতায়ালা ফেরত দেন না, রোজার উসিলায় দোয়া কবুল করেন। হাদিসে বিশেষভাবে ইফতারের সময়ের দোয়ার কথা বলা হয়েছে। যে কোনোভাবে দোয়া করলেই হলো। আল্লাহ তার বান্দার প্রকাশ্য ও মনে মনে দোয়া সবই কবুল করেন।
রমজান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা ও অশেষ প্রাপ্তির মাস হয়ে। রমজানের রোজা, তারাবিহ, সেহরি, ইফতার, এতেকাফ, সদকাহসহ সব ধরনের আমলের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আঁচল ভরে রহমত দান করেন।
তাই রমজানের এ শেষ সময়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্প করতে হবে যে, আমরা রমজানের অফুরন্ত কল্যাণ থেকে অবশ্যই উপকৃত হব। বাকি আর যে কয়টি দিন আছে, একটি মুহূর্তও অবহেলায় নষ্ট করব না। পবিত্র এ মাসে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশিক্ষণ কাজে লাগাব।
লেখক : তরুণ আলেম ও ধর্মীয় গবেষক