১৮ এপ্রিল ২০২২

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টাই মূল উদ্দেশ্য

 



 মুফতি তানজিল আমির 
 

আজ ১৬ রমজান। দেখতে দেখতে রমজানের পুরো অর্ধেকটা সময় বিদায় নিয়েছে আমাদের থেকে। পবিত্র এ মাস শুরু হওয়ার পরও অনেকে জীবনের গতিপথ বদলায়নি, ভেবেছিল কয়েকদিন পর আমলের হিসাব কিতাব শুরু করব, মাত্র তো রমজান শুরু! কিন্তু হায়, চোখের পলকেই যেন ১৫টি রোজা চলে গেল।

সিয়াম সাধনা প্রকৃত অর্থেই একটি ভালোবাসা-জাগানিয়া প্রকল্পের নাম। আল্লাহর জন্য এ ভালোবাসায় বান্দার ইমান পরিপূর্ণ হয়। পরিপক্বতা আসে।

রাসূল (সা.) বলেন, যে আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য বারণ করে, আল্লাহর জন্য মহব্বত করে, আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, আল্লাহর জন্য বিয়ে-শাদি দেয়, তার ইমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। (জামে তিরমিজি)।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বান্দাদের তার রঙে রঙিন হওয়ার আদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা বলো, আমরা গ্রহণ করেছি আল্লাহর রং। আল্লাহর রঙের চেয়ে কার রং উত্তম? এবং আমরা তারই ইবাদত করি।’ [সূরা বাকারা : ১৩৮]।

আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেওয়ার উৎকৃষ্ট সময় হলো রমজান। রমজানের এ মাঝ সময়ে এসে এখনই হিসাব মিলাতে হবে, বিশ্বজনীন এ ক্ষমা ও পুণ্য লাভের মাসে আমার সংগ্রহ কতটুকু? খোদার কাছ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে নিতে পেরেছি কি? আমি কি পেরেছি আল্লাহর রঙে রঙিন হতে?

রমজানে আমরা কেন রোজা রাখি?

রোজায় কী উপলব্ধি হয় আমাদের? আমরা নির্ধারিত সময়ে কিছু খাই না। পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকি। এর কারণ কী? যে ভাই ক্ষুধায় দিন কাটায়, নিজে ক্ষুধার্ত না হয়ে তা তো বুঝে আসার কথা নয়। রোজায় আমরা হতদরিদ্র মানুষের সেই ক্ষুধায় কাতর হওয়া উপলব্ধি করতে পারি। গরিবের প্রতি দয়াশীল হতে পারি।

বুখারি শরিফের এক হাদিসে বিবৃত হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন- তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসাপরায়ণ হইও না, পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হইও না, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদন করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। কখনো কোনো মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখে। নবি (সা.) বলেছেন, রোজা হলো সহমর্মিতার মাস।

হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহতায়ালার গুণবাচক ৯৯ নাম। আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সে গুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য কাজকর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের অধিকারী হিসাবে গড়ে তোলা।

রমজানে মুমিনের যে প্রশিক্ষণ চলে তার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো-আল্লাহতায়ালার নামগুলোর জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা। আজীবন তার ধারকবাহক হয়ে তা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তার সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

রমজান মাসের যাবতীয় আমল ও কল্যাণগুলোর প্রতি লক্ষ করলে আমরা দেখব যে, রোজার সামগ্রিক শিক্ষাও এটি। মানুষের ইমান আমলের সংশোধন, ব্যক্তি জীবনে তার প্রতিফলন, পরোপকার ও হিতকামী মনন ও দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ইমান রাখা এগুলোর প্রশিক্ষণই নিতে হয় রমজানে। রোজায় নিজের দেহ ও মনকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে নিতে হবে। তবেই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ পাবে তার কাক্সিক্ষত সফলতা।

লেখক : তরুণ আলেম ও ধর্মীয় গবেষক

সংগ্রহডেইলীযুগান্তর

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ