৩০ জানুয়ারী ২০২২

সূরা আল ইখলাস পাঠের উপকারিতা ও ফজিলত

 

সূরা আল ইখলাস মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনের ১১২ নম্বর সূরা, এর আয়াত সংখ্যা এবং রূকুর সংখ্যা ১টি।

    এই সূরাটিতে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব সত্তার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম ছোট একটি সূরা হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। এই সূরাটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়।

      হজরত ওকবা ইবনে আমের বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সূরা বলছি, যা; তাওরাত, ইঞ্জিল, জবুর এবং কোরআন সহ সব কিতাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। রাতে তোমরা ততক্ষণ নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ সূরা ইখলাস, ফালাক নাস না পাঠ কর। ওকবা বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনো আমল পরিত্যাগ করিনি (ইবনে কাসীর)

তা ছাড়া আবু দাউদ, তিরমিজী এবং নাসায়ীর এক দীর্ঘ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয় (ইবনে কাসীর)

সহিহ হাদিসে আছে সূরা ইখলাস বার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমান সওয়াব পাওয়া যায়। বোখারিতে আয়েশা (রা.) থেকে এক রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে, এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে আমির নিযুক্ত করে দেন, তিনি সেনা সদস্যদের নামাজে ইমামতিকালে সূরা ফাতিহা অন্য সূরা শেষে প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা ব্যাপারে অভিযোগ কররে তিনি তাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, আমির বা নেতা উত্তর দেন যে আমি এই সূরাকে ভালোবাসি। একথা শুনে রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসে। -বোখারি কিতাবুল মাগাযী দেখুন।

বোখারীর কিতাবুস সালাতে আনাস (রা.) এর সূত্রে অনুরুপ আরেকটি হাদিস বর্ণিত, কুবা মসজিদে এক আনসার সাহাবি ইমামতি করতেন, তিনি প্রত্যেক রাকাতে ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পাঠ করে অন্য সূরা পড়তেন। লোকেরা ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি (সা.) তাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, উক্ত আনসারী বললেন আমি সূরাকে ভালোবাসি। তাই এরূপ করি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এই সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (বোখারি: ১০৭ নম্বর পৃ:)

নবী (সা.) ইরশাদ করেছন, যে ব্যক্তি কুলহু আল্লাহু আহাদ সূরাটি ১০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য একটি বালাখানা তৈরি করে দেন। আর যে ২০ বার পাঠ করে তার জন্য দুটি বালাখানা এবং ৩০ বার পাঠ করবে তার জন্য তিনটি বালাখানা তৈরি করেন।

কথা শুনে উমর (রা.) বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক বালাখানার মালিক হয়েছি! রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ তো এর চেয়ে বেশি দানকারী। (তাফ: : কাসীর ৪র্থ : ৭৩৮ পৃ:)

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ঈমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। () যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। () যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। () এবং যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে। (তাফ: : কাসীর ৪র্থ : ৭৩৮ পৃ:)

সূরা আল-ইখলাসের শানে নুযুল:

মুশরিকরা মুহাম্মাদ (সা.)-কে আল্লাহ তায়ালার বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সূরা নাজিল হয়। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, মদিনার ইহুদিরা প্রশ্ন করেছিল। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, তারা আরো প্রশ্ন করেছিল, আল্লাহ তায়ালা কিসের তৈরি, স্বর্ণ-রৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে

সূরা আল-ইখলাস

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আরবি উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

() قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

আরবি উচ্চারণ: কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ্।

বাংলা অনুবাদ: বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।

() اللَّهُ الصَّمَد 

আরবি উচ্চারণ: আল্লা-হুচ্ছমাদ্।

বাংলা অনুবাদ: আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।

() لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

আরবি উচ্চারণ: লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্।

বাংলা অনুবাদ: তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।

() وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد

আরবি উচ্চারণ: অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্।

বাংলা অনুবাদ: আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা; মুসলিম উম্মাহকে সূরা ইখলাস পাঠের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।  

Collection from:ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

 



বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ