প্রত্যেক মুসলমান এর জন্য নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। এখানে পাবেন-
নামাজের সাধারণ কিছু নিয়ম
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম
যুহরের সালাত আদায়ের পদ্ধতি
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম
মাগরিবের সালাত কীভাবে পড়তে হয়
এশার নামাজ পড়ার নিয়মাবলী।
নামাজের সাধারণ কিছু নিয়ম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কিছু জেনারেল নিয়ম আছে। যা প্রতি ওয়াক্ত বা প্রত্যেক নামাজে এক ও অভিন্ন থাকে।
এমন কিছু নিয়ম নিচে তুলে ধরছি
তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে নামাজে প্রবেশ করবে। এরপর সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা…) পড়বে।
সানা পাঠের শেষে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। সুরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য কোনো সুরা যেমন সুরা ফিল বা সুরা কুরাইশ বা সুরা কাফিরুন বা অন্য যে কোনো সুরা পাঠ করতে হবে।
সুরা ফাতিহা পাঠের পর পবিত্র কুরআন থেকে যে আয়াত বা সুরা তেলাওয়াত করা হয় সেটাকে কিরাত বলা হয়।
আর কিরাতের নিময় হলো মুসল্লির কাছে পবিত্র কুরআনের যে অংশটুকু সব চেয়ে সহজ ও সাবলিল সেখান থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করবে।
তেলাওয়াতের পরিমাণ ছোট ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত হতে হবে। যেমন সুরা কাওসারের পুরো সুরা মিলে তিন আয়াত।
আবার আয়াতুল কুরসি বড় একটি আয়াত কিন্তু তা ছোট একটি সুরার সমান। এরকম এক আয়াতই তেলাওয়াত করে নিলে হয়ে যাবে।
কিরাত পাঠ করে নিলে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে সর্বনিম্ন তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম’ বলবে।
এরপর ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা’ বলে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ বলবে।
তারপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় চলে যাবে। সিজদায় তিনবার ‘সুবাহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলবে।
অতপর আল্লাহু আকবার বলে বসবে। বসার পর ‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়ারহুমনি… পড়বে।
অতপর আবার সিজদা করে উক্ত তাসবিহ তিনবার পড়বে।
এরপর আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবে। এবং পূর্বের মতো সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে রুকু করে সিজদা করবে।
আত-তাহিয়াতু পড়ার নিয়ম
দুই নাম্বার রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর না দাঁড়িয়ে বসে যাবে। এবং ‘আত-তাহিয়াতু…’ পড়বে।
নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে ‘আত-তাহিয়াতু… পাঠের পর ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা… ও বারিকালা.. এবং আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসি…। দোয়াটি বা অন্য দোয়া পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নিবে।
কিন্তু নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে কেবল আত-তাহিয়াতু… পাঠ করে দাঁড়িয়ে যাবে।
চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ হলে শেষের দু রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে অন্য কোনো সুরা বা কিরাত তেওয়াত করতে হয় না।
তখন কেবল সুরা ফাতিহা পাঠের পরই রুকু করে সিজদায় চলে যাবে।
তবে চার রাকাত বিশিষ্ট সুন্নত নামাজ হলে শেষের দু রাকাতেও সুরা ফাতিহার পর অন্য সুরা বা কিরাত মিলাতে হয়।
এটা নামাজের সাধারণ কয়েকটি নিয়ম। যা পাঁচ ওয়াক্তে এবং ফরজ সুন্নত ও নফল সকল প্রকার নামাজের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য।
ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম
সুবহে সাদিকের পর ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত।
ফরজ দুই রাকাত আর সুন্নতে মুয়াক্কাদা দুই রাকাত। প্রথমে সুন্নত দু রাকাত পড়তে হয় এরপর ফরজ দু রাকাত।
ফজরের সুন্নত দু – রাকাত পড়ার নিয়ম
ফজরে সুন্নত দু – রাকাত নামাজ আদায়ের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। উপরে আলোচিত নিয়মেই পড়তে হবে।
প্রথমে আল্লাহু আকবার বা তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজে প্রবেশ করবে। এরপর সুরা ফাতিহা ও কিরাত পাঠ অন্যান্য বাকি নিয়মে নামাজ পুরো করবে।
সুরা ফাতিহা, কেরাত ও অন্যান্য তাসবিহ সকল কিছু নিম্নস্বরে আদায় করবে।
ফজরের ফরজ নামাজ আদায়ের নিময়
ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। তাই জামাতে ইমাম সাহেবর ইক্তেদা করে নিলে বিশেষ কিছু করতে হয় না।
কেবল ইমাম সাহেবের ইক্তেদা করে তার সাথে সাথে কুরু সিজদা ও তাসবিহগুলো পাঠ করে নিলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
ইমাম সাহেব সুরা ফাতিহা উচ্চস্বরে পাঠ করবেন আর মুক্তাদি মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবে।
কিন্তু কেউ যদি কোনো কারণে জামাতে শরীক হতে না পারে তাহলে সে পূর্বে আলোচিত নিয়মে একাএকা পড়ে নিবে।
তবে সুরা ফাতিহা কেরাত উচ্চস্বরে বা নিম্মস্বরে তার ইচ্ছা মতো পড়তে পারেব। সাধারণত নিম্নস্বরে পড়াটাই ভালো।
যুহরের সালাত আদায়ের পদ্ধতি
যুহরের নামাজ দশ রাকাত। প্রথমে সুন্নত চার রাকাত। ফরজ দুই রাকাত। এরপর সুন্নত দুই রাকাত।
ফরজ আদায়ের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত আদায় করে নিবে। এই চার রাকাত আদায়ের নিয়ম উপরে আলোচিত হয়েছে।
সুন্নত চার রাকাত আদায়ের পর ফরজ চার রাকাত আদায় করতে হয়। আর ফরজ নামাজ যেহেতু জামাতে পড়া ওয়াজিব তাই ইমাম সাহেবের ইক্তেদা করে নিলেই হবে।
ইমাম সাহেবের সাথে ফরজ চার রাকাত আদায় করে তার সাথে সালাম ফিরিয়ে মাসনুন তাসবিহ তাহলিল পাঠ করবে।
এরপর সুন্নত দুই রাকাত পড়বে। যুহরের ফরজ ও সুন্নত সকল প্রকার নামাজেই সুরা কিরাত নিম্নস্বরে তেলাওয়াত করতে হয়।
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম
আসরের নামাজ আট রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদা। পরে চার রাকাত ফরজ।
সুন্নত চার রাকাত যেহেতু সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদা তাই তা পড়া ভালো। সওয়াব হবে। কিন্তু না পড়লে গোনাহ হবে না।
এরপর ফরজ চার রাকাত আদায় করবে। ইমাম সাহেবের সাথে জামাতে আদায় করে নিলে কেবল ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করবে।
নামাজ পড়ার নিয়ম
আর কোনো কারণে জামাতে শরীক হতে না পারলে উপরে আলোচিত নিয়মে একএকা আদায় করে নিবে।
মাগরিবের সালাত কীভাবে পড়তে হয়
মাগরিবের নামাজ পাঁচ রাকাত। প্রথমে ফরজ তিন রাকাত এরপর সুন্নত দুই রাকাত।
ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করে নিলে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করা ও জায়গায় জায়গায় তাসবিহ তাকবির বললেই নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
আর একএকা পড়লে প্রথমে সুরা কিরাত নিম্নস্বরে পাঠ করে দুই রাকাত পূর্ণ করবে। এরপর প্রথম বৈঠক করে দাঁড়িয়ে যাবে।
তৃতীয় রাকাতে কেবল সুরে ফাতিহা পড়ে রুকু সিজদা করে আত-তাহিয়াতু ও আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা… বারিকালা… পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে।
অতপর দু রাকাত সুন্নত আদায় করে নিবে। সুন্নত নামাজের নিময় উপরে আলোচিত হয়েছে। এই সুন্নতেও সুরা কিরাত নিম্নস্বরে পড়বে।
এশার নামাজ পড়ার নিয়মাবলী
আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। তার মধ্যে থাকে ফরজ, সুন্নত ও নফল। ফরজ হলো আবশ্যিক নামাজ। যা না পড়লে জবাবদিহি করতে হবে।
তাই কোনো ওয়াক্তের নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করার সময় শুধু ফরজ নামাজের রাকাতকে গণনায় আনা যেতে পারে।
কেননা ফরজ নামাজ ব্যতীত বাকি সকল প্রকার নামাজই নফল নামাজের অন্তর্ভুক্ত।
আমার যে নামাজকে সুন্নত নামে অবহিত সেটা মূলত নফল নামাজেরই একটি স্তর।
নফল অর্থ হলো – অতিরিক্ত। অর্থাৎ ফরজের অতিরিক্ত। কেননা নফল নামাজগুলো আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেন নি।
রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – ফরজ নামাজ আদায়ের আগে ও পরে নিজ ইচ্ছায় কিছু নামাজ পড়তেন।
যেহেতু সেই নামাজগুলো ফরজের অতিরিক্ত ছিলো। যা তিনি স্বেচ্ছায় আদায় করতেন তাই সে নামাজকে নফল নামাজ বলা হয়।
আর রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – যে নামাজগুলো নফল হিসাবে আদায় করতে। তা আমাদের জন্য সুন্নত হয়ে গেছে।
কেননা রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – যে আমল করতেন সেটা আমাদের জন্য সুন্নত হিসাবে গণ্য হয়।
সুতরাং বলা যায় এশার নামাজ মূলত চার রাকাত। যেহেতু ফরজ কেবল চার রাকাত।
সুন্নতসহ এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা
এশার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসাবে আদায় করা হয়।
এই দিক বিবেচনায় রেখে বলা যেতে পারে এশার নামাজ দশ রাকাত। ফরজ চার রাকাত এবং সুন্নত ছয় রাকাত।
তবে ফরজের আগে চার এবং পরে দুই রাকাত সুন্নত নামাজের মধ্যেই এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা সীমাবদ্ধ নয়।
এই দশ রাকাত আদায় করার দুই রাকাত দুই রাকাত করে দুই বারে মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে। যা সুন্নত গায়ব মুয়াক্কাদা হিসাবে গণ্য হবে।
এই চার রাকাত আদায় করার পর দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়া যাবে। যার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই।
এভাবে বিতির নামাজকেও এশার নামাজের সাথে পড়া হয়। যদিও বিতির নামাজ এশার নামাজের অংশ নয় তবুও এশার নামাজের শেষে বিতির পড়ে নেওয়া হয়।
তাহলে এশার নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাসহ দশ রাকাত। সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদাসহ চৌদ্দ রাকাত। এভাবে বিতিরসহ সতের রাকাত।
বেতের নামাজ পড়ার নিয়ম
বেতের তিন রাকাত নামাজ ওয়াজিব। নিয়ত করার পর প্রথম দুই রাকাত আদায়ের পর 'তাশাহুদ পড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা পড়ার পর তাকবির বলে হাত কাধ পরযন্ত তুলে আবার হাত বাধতে হবে। তার পর দোয়া কূনুত পড়ে রুকু, সেজদা শেষ করে। সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
এশার নামাজ আদায়ের নিয়ম
প্রথমে চার রাকাত সুন্নত পড়তে হয়। এই চার রাকাত সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদা। পড়লে ভালো। আর না পড়লে গোনাহ নেই।
এর পর জামাতের সাথে ফরজ চার রাকাত আদায় করবে। ইমাম সাহের ইক্তেদা করে তাকে অনুসরন করবে।
যদি একা পড়ে তবে সুরা কিরাত মিলিয়ে উপরে আলোচিত নিয়মে আদায় করে নিবে।
ফরজ চার রাকাত আদায়ের পর সুন্নত দুই রাকাত আদায় করে নিবে। এই দু রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
সুন্নতে মুয়াক্কাদা মানে হলো – তাগিদযুক্ত সুন্নত। অর্থাৎ এমন সুন্নত যা আদায় করার জন্য শরিয়ত দৃঢ় তাগিদ দিয়েছে।
আর সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদা মানে হলো – সাধারণ সুন্নত। যা আদায়ের প্রতি শরিয়ত তেমন তাগিদ দেননি। সাধারণভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে এমন।
রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – ফরজ নামাজের আগে বা পরে যে নফল নামাজ খুবই গুরুত্বসহ নিয়মিত পড়তেন।
অন্যদের পড়তে উৎসাহ দিতেন সে সব নফল নামাজকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসাবে গণ্য করা হয়।
এভাবে সে নামাজগুলো আদায় করার জন্য শরিয়ত বেশ গুরুত্বারোপ করেনি। তাকে সুন্নতে গায়র মুয়াক্কাদা বলা হয়।
এশার নামজ চাই ফরজ হোক বা সুন্নত যদি একএকা আদায় করা হয় তবে সুরা কিরাত নিম্নস্বরে আদায় করবে।
তবে কেউ চাইলে উচ্চস্বরে সুরা কেরাত পড়তে পারবে। এতে তার নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না।
নামাজ শেষে মাসনুন তাসবিহ তাহলিল ও দোয়া দুরদ করবো। তবে কোনো প্রকার বিদআতে লিপ্ত হওয়া যাবে না।