০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

তোমরা অহংকারী ও আল্লাহর পথে বাধা দানকারীদের মত হইও না।

 আল কুরআন, 

৮-সুরা: আনফাল,

আয়াত নং :-(৮:৪৭)

আর তোমরা এমন লোকদের মত আচরণ করো না, যারা অহংকার করতে করতে ও লোকদেরকে নিজেদের মাহাত্ম্য দেখাতে দেখাতে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং যারা আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখে। ১* তারা যা কিছু করছে তা আল্লাহর নাগালের বাইরে নয়।

(৮:৪৮)

অনুবাদ:    সেই সময়ের কথা একটু মনে করো, যখন শয়তান এদের কার্যকলাপকে এদের চোখে ঔজ্জ্বল্যময় করে দেখিয়েছিল এবং এদেরকে বলেছিল, আজ তোমাদের ওপর কেউ বিজয়ী হতে পারে না এবং আমি তোমাদের সাথে আছি। কিন্তু যখন উভয় বাহিনীর সামানাসামনি মোকাবিলা শুরু হলো তখনই সে পিছনের দিকে ফিরে গেলো এবং বলতে লাগলোঃ তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখো না। আমি আল্লাহকে ভয় পাচ্ছি। আল্লাহ‌ বড় কঠোর শাস্তিদাতা।

(৮:৪৯)

অনুবাদ:    যখন মুনাফিকরা এবং যাদের দিলে রোগ আছে তারা সবাই বলছিল, এদের দ্বীনই তো এদের মাথা বিগড়ে দিয়েছে। অথচ যদি কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে আল্লাহ‌ অবশ্যি বড়ই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী।

(৮:৫০)

অনুবাদ:    হায়, যদি তোমরা সেই অবস্থা দেখতে পেতে যখন ফেরেশতারা নিহত কাফেরদের রূহ কবয করেছিল। তারা তাদের চেহারায় ও পিঠে আঘাত করছিল এবং বলে চলছিল “নাও এবং জ্বালাপোড়ার শাস্তি ভোগ করো।

(৮:৫১)

অনুবাদ:    এ হচ্ছে সেই অপকর্মের প্রতিফল যা তোমরা আগেই করে রেখে এসেছো। নয়তো আল্লাহ‌ তার বান্দাদের ওপর জুলুমকারী নন।”

তাফসীর : (আয়াত-৪৭)

 ১*এখানে কুরাইশ গোত্রভুক্ত কাফেরদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। বাদ্য-গীত পারদর্শীনী ক্রীতদাসী পরিবেষ্টিত হয়ে তারা চলছিল। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, শরাব পান ও আনন্দ উল্লাসের মাহফিল জমিয়ে তুলেছিল। পথে যেসব গোত্র ও জনবসতির ওপর দিয়ে তারা যাচ্ছিল, তাদের ওপর নিজেদের শান-শওকত, সংখ্যাধিক্য ও শক্তির দাপট এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের ভীতি ও প্রভাব বিস্তার করে চলছিল। তারা এমনভাবে বাহাদুরী দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়াবার মত কেউ নেই। এমনি একটা উৎকট অহংকারের ভাব তাদের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছিল। এ ছিল তাদের নৈতিক অবস্থা। আর যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের এ নৈতিক অবস্থার চাইতেও আরো বেশী নোংরা ও অপবিত্র এবং তা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল অতিরিক্ত অভিশাপের বোঝা। তারা সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝাণ্ডা যাতে বুলন্দ করার জন্য ধন ও প্রাণ উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসেনি। বরং এ ঝাণ্ডা বুলন্দ না হয় এবং যে একটি মাত্র দল সত্যের এ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এগিয়ে এসেছে, তাকেও যাতে খতম করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই তারা বের হয়েছিল। তারা চাইছিল, দুনিয়ায় এ ঝাণ্ডা বহনকারী আর কেউ থাকবে না। এ ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা এমনটি হয়ে যেয়ো না। আল্লাহ‌ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে, তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ। এ নির্দেশ শুধুমাত্র সেই যুগের জন্য নির্দিষ্ট ছিল না। আজকের জন্যও এবং চিরকালের জন্য এ নির্দেশ প্রযোজ্য। সেদিন কাফেরদের সেনাবাহিনীর যে অবস্থা ছিল আজো তার মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। বেশ্যালয়, ব্যভিচারের আড্ডা ও মদের পিপা যেন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মত তাদের সাথে জড়িয়ে আছে। গোপনে নয়, প্রকাশ্যে তারা অত্যন্ত নির্লজ্জতার সাথে মেয়ে ও মদের বেশী বেশী বরাদ্দ দাবী করে। তাদের সৈন্যরা নিজেদের জাতির কাছে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নিজেদের সমাজের বেশী সংখ্যক যুবতী মেয়েদেরকে তাদের হাতে তুলে দেবার দাবী জানাতে লজ্জাবোধ করে না। এ অবস্থায় অন্য জাতিরা এদের থেকে কি আশা করতে পারে যে, এরা নিজেদের নৈতিক আবর্জনার ফাঁকে তাদেরকে ডুবিয়ে দেবার ব্যাপারে কোন প্রকার চেষ্টার ত্রুটি করবে না? আর এদের দম্ভ ও অহংকারের ব্যাপারে বলা যায়, এদের প্রত্যেকটি সৈনিক ও অফিসারের চাল-চলন ও কথাবার্তার ধরন থেকে তা একেবারে পরিষ্কার দেখা যেতে পারে। আর এদের প্রত্যেক জাতির নেতৃস্থানীয় পরিচালকবৃন্দের বক্তৃতাবলীতে لاغالب لكم اليوم (আজ তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারে দুনিয়াতে এমন কেউ নেই) এবং من اشد منا قوة (কে আমাদের চেয়ে শক্তিশালী? ) ধরনের দম্ভোক্তিই শ্রুত হয়ে থাকে। এদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, এ নৈতিক পূতিগন্ধময় আবর্জনা থেকেও বেশী কুৎসিত ও নোংরা। এদের প্রত্যেকেই অত্যন্ত প্রতারণাপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করে দুনিয়াবাসীকে একথার নিশ্চয়তা দিয়ে যায় যে, মানবতার কল্যাণ ছাড়া তার সামনে আর কোন লক্ষ্য নেই। কিন্তু আসলে শুধুমাত্র মানবতার কল্যাণটাই তাদের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়, বাকী সবকিছুই সেখানে আছে। এদের যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ‌ তাঁর এ পৃথিবীতে সমগ্র মানবজাতির জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার জাতি একাই হবে তার ওপর দখলদার এবং অন্যদের তার চাকর ও কৃপাপ্রার্থী হয়ে থাকতে হবে। কাজেই এখানে ঈমানদারদেরকে কুরআন এ স্থায়ী নির্দেশ দিয়েছে যে, এ ফাসেক ও ফাজেরদের আচার-আচরণ থেকেও দূরে থাকো। আবার যেসব অপবিত্র ও পূতিগন্ধময় উদ্দেশ্য নিয়ে এরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সেই ধরনের উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন-প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্যোগী হয়োনা।




বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ