সব কিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনিই আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। নবী-রাসুল ও আসমানি কিতাব নাজিল করে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা এ দুনিয়ায় চিরকাল থাকতে পারব না। আমাদের এ পার্থিব জগৎ ছাড়তে হবে। এ জীবনের পর অনন্ত কালের আরেকটি জীবন আছে। যে জীবনের পাথেয় ও পুঁজি হাসিলের জন্যই আমাদের প্রেরণ করা হয়েছে। সেই জীবনে আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ পার পাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ শুধু তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না...।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৭৯)
নেক আমলের পাশাপাশি আল্লাহর রহমত থাকলেই নাজাত পাওয়া যাবে, সফলকাম হওয়া যাবে। আল্লাহর রহমত লাভের সবচেয়ে সহজ পথ হলো তাঁর সৃষ্টির প্রতি সহযোগিতা ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
যে আমল জান্নাতিরা করেন : জান্নাতিদের আলোচনায় মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)
যে আমলে শঙ্কামুক্ত হওয়া যায় : সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাজিল হলে নবীজি (সা.) ভয় পেয়ে যান। নবীজির প্রতি এটিই ছিল প্রথম ওহি নাজিলের ঘটনা। স্বীয় স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর কাছে ফিরে এসে বলেন, ‘আমি নিজের ব্যাপারে আশঙ্কা বোধ করছি।’ খাদিজা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম, কখনো নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায়-দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারি করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন...। (বুখারি, হাদিস : ৩)
যে আমলে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায় : রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানবকল্যাণমুখী কাজ বিপদাপদ ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। গোপন দান আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে। রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আয়ু বৃদ্ধি করে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৩/১১৫)
যে আমলে নবীজির পাশের জান্নাতে থাকা যাবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এতিম-অনাথের রক্ষণাবেক্ষণ বা লালনপালন করে সে আমার সঙ্গে পাশাপাশি জান্নাতে থাকবে। এ কথা বলে—তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙুল পাশাপাশি রেখে দেখান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৮)
যাদের সেবা আল্লাহর সেবার নামান্তর : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি! সে বলবে, হে রব, আপনি তো রাব্বুল আলামিন। আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব? তিনি বলবেন, তুমি তো জেনেছিলে যে আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তবু তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি। সে বলবে, হে রব, আপনি তো রাব্বুল আলামিন। আমি কিভাবে আপনাকে খাদ্য দেব? তিনি বলবেন, তুমি তো জেনেছিলে যে আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে খাদ্য দাওনি। তুমি কি জানতে না যে তুমি যদি তাকে খাদ্য দিতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, হে রব, আপনি তো রাব্বুল আলামিন। আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করতে দেব? তিনি বলবেন, তুমি তো জেনেছিলে যে আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি কি জানতে না যে তুমি যদি তাকে পানি পান করতে দিতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের বেশি উপকার করে। তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হলো, কোনো মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ দেওয়া। তার বিপদ-কষ্ট দূর করা। তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া। তার ক্ষুধা দূর করা...।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৮/১৯১)
যে কাজে দানের সওয়াব মিলে : রাসুল (সা.) বলেন, দুজন মানুষের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে ন্যায়-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা দান বলে গণ্য। কোনো মানুষকে তার বাহন পরিচালনা করতে সাহায্য করা দান বলে গণ্য। কারো বাহনে তার জিনিসপত্র তুলে দেওয়া দান বলে গণ্য। সুন্দর আনন্দদায়ক কথা দান বলে গণ্য। মসজিদে গমনের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ দান বলে গণ্য। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক দ্রব্য সরিয়ে দেওয়া দান বলে গণ্য। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)
যে আমলে ক্ষমা মেলে : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তায় চলতে চলতে একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পায়। সে ডালটি সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন। তাকে ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৫২)
জীব-জন্তুর সেবায় যে লাভ : যেকোনো জীব-জন্তুর সেবাতেই সওয়াব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো প্রাণের সেবাতেই তোমরা সওয়াব পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
যে আমলে অবিরাম সাহায্য আসতে থাকে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহ তার সহযোগিতায় থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
যে আমলে দয়া লাভ হয় : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দয়াময় আল্লাহ দয়ালুদের দয়া করেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)
Source : Kalerkantha