১৬ জানুয়ারী ২০২১

আল্ কুরআনে সৌরজগতের ধারনা

 আল্ কুরআন,  সুরা: ইয়াছিন
আয়াত নং :-40

لَا الشَّمْسُ یَنْۢبَغِیْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَ لَا الَّیْلُ سَابِقُ النَّهَارِؕ وَ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ
অনুবাদ:  না সূর্যের ক্ষমতা আছে চাঁদকে ধরে ফেলে (১)এবং না রাত দিনের ওপর অগ্রবর্তী হতে পারে,(২) সবাই এক একটি কক্ষপথে সন্তরণ করছে।(৩)

তাফসীর : 
টিকা:১) এ বাক্যের দু’টি অর্থ হতে পারে এবং দু’টি অর্থই সঠিক। একটি হচ্ছে, চাঁদকে ধরে নিজের দিকে টেনে নেবার অথবা তার গতিপথে প্রবেশ করে তার সাথে সংঘাত বাঁধাবার ক্ষমতা সূর্যের নেই। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, চাঁদের উদয়ের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সূর্য কখনো তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। রাতে চাঁদ আকাশে আলো ছড়াচ্ছে এ সময় হঠাৎ দিগন্তে সূর্যের উদয় সম্ভব নয়।


টিকা:২) অর্থাৎ দিনের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবার আগে কখনো রাত এসে যাওয়া এবং দিনের আলোর জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে তার মধ্যে অকস্মাৎ নিজের অন্ধকার নিয়ে তার উপস্থিত হওয়া কখনো সম্ভব নয়।


টিকা:৩) মুলে “ফালাক” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় “ফালাক” মানে গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথ ( Orbit ) এবং এর অর্থ আকাশের অর্থ থেকে ভিন্ন। “সবাই একটি কক্ষপথে সাঁতরাচ্ছে” এ উক্তি চারটি সত্যের প্রতি আঙ্গুলি নির্দেশ করছে। এক, কেবলমাত্র সূর্য ও চন্দ্র নয় বরং সমস্ত তারকা ও গ্রহ এবং সমগ্র আকাশ জগত আবর্তন করছে। দুই, এদের প্রত্যেকের আকাশ অর্থাৎ প্রত্যকের আবর্তন পথ বা কক্ষপথ আলাদা। তিন, আকাশসমূহ তারকারাজিকে নিয়ে আবর্তন করছে না বরং তারকারাজি আকাশসমূহে আবর্তন করছে। চার, আকাশসমূহে তারকাদের আবর্তন এমনভাবে হচ্ছে যেমন কোন তরল পদার্থে কোন জিনিস ভেসে চলে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনা এ আয়াতগুলোর মুল উদ্দেশ্য নয় বরং মানুষকে একথা বুঝানোই এর উদ্দেশ্য যে, যদি সে চোখ মেলে তাকায় এবং নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে তাহলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই তার সামনে আল্লাহ‌র অস্তিত্ব এবং তাঁর একত্বের অসংখ্য ও অগণিত যুক্তি-প্রমাণের সমাবেশ দেখতে পাবে। এ অবস্থায় সে কোথাও নাস্তিক্যবাদ ও শিরকের সপক্ষে একটি যুক্তি-প্রমাণও পাবে না। আমাদের এ পৃথিবী যে সৌরজগতের ( Solar System ) অন্তর্ভুক্ত তার বিশালত্বের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার কেন্দ্রীয় সূর্যটি পৃথিবীর তিন লক্ষ গুণ বড় এবং তার সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ নেপচুনের দূরত্ব সূর্য থেকে কমপক্ষে ২শ’ ৭৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল । বরং যদি প্লুটোকে দূরবর্তী গ্রহ ধরা হয় তাহলে সূর্য থেকে তার দূরত্ব ৪শ’ ৬০ কোটি মাইলে গিয়ে পৌঁছে। এ বিশালত্ব সত্ত্বেও এ সৌরজগত একটি বিরাট বিশাল ছায়াপথের নিছক একটি ছোট অংশ মাত্র। আমাদের এ সৌরজগত যে ছায়াপথটির ( Galaxy ) অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন (৩শ’ কোটি) সূর্য রয়েছে এবং তার নিকটবর্তী সূর্যটি আমাদের পৃথিবী থেকে এত দূরে অবস্থান করছে যে, তার আলো এখানে পৌঁছতে ৪ বছর সময় লাগে। তারপর এ ছায়াপথই সমগ্র বিশ্ব-জাহান নয়। বরং এতদিনকার পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমান করা হয়েছে যে, প্রায় ২০ লক্ষ নীহারিকাপুঞ্জের মধ্যে এটিও একটি এবং এদের নিকটতম নীহারিকা আমাদের থেকে এত বেশী দূরত্বে অবস্থিত যে, তার আলো আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছতে ১০ লক্ষ বছর লাগে। আর আমাদের অত্যাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সবচেয়ে দূরের যে নীহারিকা দৃষ্টিগোচর হয় তার আলো দুনিয়ায় পৌঁছতে ১০ কোটি বছর লাগে। এরপরও মানুষ সমগ্র বিশ্ব-জাহান দেখে নিয়েছে, একথা বলা যায় না। আল্লাহ‌র সার্বভৌম কর্তৃত্বের সামান্যতম অংশমাত্র এতদিন পর্যন্ত মানুষ পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছে। সামনের দিকে আরো অত্যাধুনিক পর্যবেক্ষণ উপকরণ উদ্ভাবিত ও সংগৃহীত হলে আরো কতো ব্যাপকতা মানুষের সামনে উন্মুক্ত হবে তা বলা সম্ভব নয়। 

বিশ্ব-জাহান সম্পর্কে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে তা থেকে প্রমাণিত হয়, আমাদের এ ক্ষুদ্র পৃথিবীটি যেসব উপাদানে গঠিত এ সমগ্র বিশ্ব-জাহান সে একই উপাদানে গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে আমাদের পৃথিবীর মতো একই নিয়ম সক্রিয় রয়েছে। নয়তো এ পৃথিবীতে বসে আমরা যে অতি দূরবর্তী বিশ্বগুলো পর্যবেক্ষণ করছি, তাদের দূরত্ব পরিমাপ করছি এবং তাদের গতির হিসেব কষছি এসব কোনক্রমেই সম্ভবপর হতো না। এসব কি একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এ সমস্ত বিশ্ব-জাহান একই আল্লাহ‌র সৃষ্টি এবং একই শাসকের রাজ্য? তারপর যে নিয়ম-শৃংখলা, প্রজ্ঞা-কলাকৌশল, দক্ষতা-শিল্পকারিতা ও সম্পর্ক-সম্বন্ধ এসব লাখো লাখো ছায়াপথ ও তাদের মধ্যে সঞ্চরণশীল শত শত কোটি গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পাওয়া যায় তা দেখে কি কোন বুদ্ধিমান মানুষ একথা কল্পনা করতে পারে যে, এসব কিছু আপনা-আপনিই হয়ে গেছে? এ নিয়ম-শৃংখলার পেছনে কি কোন ব্যবস্থাপক, এ কলা-কৌশলের পেছনে কোন জ্ঞানী কৌশলী, এ শিল্পকর্মের পেছনে কোন শিল্পী এবং এ সমন্বয় ও সম্পর্কের পেছনে কোন পরিকল্পনাকারী নেই? অবশ্যই আল্লাহই সর্ব শ্রেষ্ঠ কলাকৌশলী। 


বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ