Text Message

Islamic News লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Islamic News লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০১ নভেম্বর ২০২০

কুরআন না বুঝে পড়লে লাভ আছে কি ?

    সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন  রক  গান শোনার কারণে ছেলে মেয়েরা হিংস্র খুনি হয়ে ওঠে। এক তরুণী তার বাবা মাকে হত্যা করে ফেলেছে কোনো কারণ ছাড়াই। পরে তাকে নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হলে দেখা গেল তার মস্তিষ্কে কেবল রক গানের মিউজিক ঘুরছে। মিউজিকটি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা গেল তাতে বলা হচ্ছে কিল্ হিম্, কিল্ হার। কিল্ ইয়োর ফাদার কিল্ ইয়োর মাদার। কিল্ কিল্ কিল্। কিল্ হিম্ কিল্ হার। দেখা যাচ্ছে এসব মিউজিকের কোনো অর্থ বোঝা না গেলেও অবচেতনে এটি মানব মস্তিষ্কে বিভিন্ন ম্যাসেজ দিতে পারে। চেতন মনের চেয়েও যা অধিক কাজ করে।নবীজীর সাহাবিদের যুগেই পবিত্র কোরআন অনারব সব অঞ্চলে প্রবেশ করে। সাহাবিরা কখনও এমন ফতোয়া দেননি যে, কোরআন না বুঝে পড়লে কোনো সওয়াব হবে না। 

তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়ি থেকে নিয়ে চৌদ্দশ বছর ধরে একজন মনীষীও এমন ফতোয়া দেননি। কিন্তু সময় বদলেছে। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি কিছু স্কলার বলতে চাচ্ছেন আরবি কোরআন যদি কেউ আরবি থেকে না বোঝে তাহলে তার জন্য  আরবি না বুঝে তেলাওয়াতের চেয়ে বাংলা বা ইংলিশ ট্রান্সলেট পড়া অধিক উত্তম। 

বিভিন্ন হাদীসে কোরআন পড়ার যে ফজীলতের কথা রয়েছে তা এই বাংলা বা ইংরেজিতে পড়লেও অর্জিত হবে। আর আরবি না বুঝে তেলাওয়াত করলে বিন্দু মাত্র ফায়দা নেই, সওয়াবও নেই। কারণ কোরআনকে বলা হয়েছে হেদায়াত ও পথনির্দেশ। যদি কেউ না বুঝে কোরআন পড়ে তাহলে তোতা পাখির মত উচ্চারণ করার দ্বারা তার জন্য কোনো পথনির্দেশ সে অর্জন করতে পারছে না। কাজেই তার কোনো সওয়াব হবে না। অর্থহীন যারা খতমের পর খতম করছে অথচ একটি আয়াতের অর্থও বুঝতে পারছে না তারা এত খতম না করে একটি সুরা বাংলা বা ইংলিশ তরজমা দেখে পড়লে আরও বেশি সওয়াব লাভ হবে। 

এর সপক্ষে তারা নানা যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কোরআন হাদীস থেকেও দলীল দেয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, ‘না বুঝেও কোরআন পড়লে সওয়াব হবেএমন একটি আয়াত বা হাদীস নেই। অথচ না বুঝে পড়লে সওয়াব হবে না এমন কোনো দলীলও তাদের সামনে নেই। মূলত যেসব বর্ণনায় কোরআন পাঠের সওয়াবের কথা লেখা আছে সেগুলোতে বুঝে বা না বুঝে এমন কোনো কথা যুক্ত নেই। 

সে হিসেবে যে কোনো ভাবেই পাঠ করুক বর্ণিত সওয়াব অর্জিত হবার কথা। কুতর্ক করে তারা বলছেন, ‘না, এখানে পড়ার দ্বারা বুঝে পড়া উদ্দেশ্য।অথচ কেরাআত ও তেলাওয়াতের অর্থ আরবি অভিধানসমূহের কোথাও বুঝে পড়ার কথা নেই।

সমাজের কিছু মানুষ এমন আছে যারা একজীবন পার হয়ে যায় কখনও পবিত্র কোরআন বোঝার চেষ্টাটুকুও করেন না। অথচ তারা দ্বীনদার। কেবল তেলাওয়াতেই সন্তুষ্ট থাকেন। অন্য নতুন শ্রেণী গড়ে উঠছে, যারা কখনও তেলাওয়াত করবেন না। না বুঝে তেলাওয়াতকে অনর্থক মনে করেন। বাংলা বা ইংরেজি থেকে তরজমা পড়ে কোরআন চর্চা করেন। এই দুই দলই প্রান্তিকতার শিকার।

 প্রথম দল কোরআনকে বরকত মনে করছেন। কোরআন অবশ্যই বরকতের। কিন্তু এই বরকতের পূর্ণতা এটি বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার মাঝে। নিঃসন্দেহে তারা কোরআনের বিধান আলেমদের কাছ থেকে শুনে আমল করছেন। কিন্তু তারা ইচ্ছা করলে নিজেরা বুঝে বিধানসমূহের জ্ঞান অর্জন করতে পারতেন। তাদের এ জ্ঞান চর্চার দ্বারা হৃদয় প্রশস্ত হতো এবং অন্তর আলোকিত হতো। তাদের ভেতর অন্যরকম এক নুরানিয়াত ও রুহানিয়াত তারা উপলব্ধি করতে পারতেন। এই বিরাট অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

দ্বিতীয় দল কোরআনকে অন্য সাধারণ বই পুস্তকের মত মনে করছেন, যা না বুঝে পড়লে কোনো উপকারিতা নেই। মূলত তাদের ইমানের ত্রুটি রয়েছে। 

পবিত্র কোরআনের আছে তুলনাহীন এক সুর আর ছন্দ। কবিতার ছন্দ নয়, অপার্থিব অলৌকিক এক তাল লয় ও শৈলী। হৃদয়ের পরতে পরতে রেখাপাত করে যায় এর শব্দের ঝংকার। 

অন্তরে দোলা দিয়ে যায় কোরআনের তেলাওয়াত। কি যে মধু মাখা। কি যে স্বাদ আর গন্ধ। সত্যি পবিত্র কোরআনের সেই স্বাদ যে পায়নি তার জীবনটা শুষ্ক মরুভূমি। অশান্ত জীবনে কোরআনের একটি আয়াতের তেলাওয়াত এনে দিতে পারে পরম শান্তি। 

কোরআন পড়তে পড়তে সুফি সাধকরা চলে যান আরশে আযীমের কাছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, সুফিবাদের এসব কথা হয়ত নাও বুঝতে পারি কিন্তু আমরা কোরআন তেলাওয়াতের স্বাদ হৃদয়ঙ্গম করতে পারি যে কোনো সময়। 

বুঝুক আর না বুঝুক সে তো পাঠ করছে মহান মালিকের কালাম। সাত আকাশের ওপর থেকে আসা এক অনন্য বাণী। যা স্রষ্টার পক্ষ থেকে নাযিল পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে কোরান হেদায়েত ও বাইয়িনাত। এ থেকেই এ দ্বিতীয় শ্রেণীর সরল মুসলিমরা এটাকে কোরআনের একমাত্র বৈশিষ্ট্য মনে করে বসে আছেন অথচ এ বৈশিষ্ট্যের পূর্বে আল্লাহ সবখানে প্রধান বৈশিষ্ট্য নিজেই বলে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে, উনযিলা, আনযালা, নাযযালা, নুযযিলা..। অর্থাৎ কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা সপ্তাকাশের ওপার থেকে আরশে আযীম ও লাওহে মাহফুজ থেকে মুহাম্মাদের সিনা মুবারকে নাযিল হয়েছে। মুনাযযাল মিনাল্লাহ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। 

মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এর প্রতিটি শব্দ আল্লাহর কালাম। এ কালাম কোনো সৃষ্ট বস্তু নয়। পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াতে একথা ঘোষণা করা হচ্ছে। 

পাঠকারী কোরআন পাঠের সময় এ ইমান নিয়ে যখন পাঠ করে তখন না বুঝলেও প্রতিটি আয়াত তার ভেতর যিকর হিসেবে প্রবেশ করে। বের হয় তাকওয়ার রূপ নিয়ে। 

কারণ যতই যে পড়ে ততই তার ভেতর তাকওয়ার অনুভূতি তৈরি হয়। তবে এর পূর্ণতা হয় যদি সে বুঝে আত্মনিমগ্ন হয়ে পড়তে পারে। কোরআনের কোনো তুলনা নেই, তার কালামেরও কোনো তুলনা

দিন দিন কোরআন আমাদের মাঝ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। হাদীসে আছে কেয়ামতের আগে একসময় কোরআনকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হবে। সেসময় কোরআন খুলে কেবল সাদা পাতা দেখতে পাবেন। 

আল্লাহর কালাম আল্লাহ রাখবেন না। এমন দিন আসার আগেই কোরআন পড়তে শিখুন। যারা তেলাওয়াত শিখেছেন তারা এর অনুবাদ পড়ুন। আর সবচেয়ে ভালো হয় আরবি ভাষা শিখে সরাসরি আরবি কোরআন বোঝার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। 

আমিন ।


 

 Source :Jugantor

প্রিয় নবী (সা.) এর কিছু অসিয়ত

 

নিম্নে  তুলে ধরা হল ঃ-

নামাজে যত্নবান হতে হবে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আর সালাত দ্বিনের স্তম্ভ।’  আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর অন্তিম মুহূর্তে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং তাঁর মুখের ভাষায় এই অসিয়ত ছিল, ‘সালাত, সালাত (অর্থাৎ নামাজ পড়বে)।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২৬৬৮৪)

কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে নামিরায় তাঁর দীর্ঘ খুতবায় বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে যে জিনিস রেখে যাচ্ছি, তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কী বলবে? তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছেন, আপনার দায়িত্ব আদায় করেছেন এবং নসিহত বা কল্যাণ কামনা করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, অথচ তোমরা শুনছ।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২০)

নবী পরিবারকে সম্মান করবে : রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান দেখাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭০১)

আল্লাহ বলেন, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তাঁর স্ত্রীরা তাদের মা-স্বরূপ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬)

আনসারদের ভালোবাসবে : ঈমানের চিহ্ন হলো, আনসারদের ভালোবাসা এবং মুনাফিকির চিহ্ন হলো, আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭)

আমিরের অনুসরণ : হে মানবসকল! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করো, তোমাদের ধন-সম্পদের জাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমিরের অনুসরণ করো, তবেই তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৬)

মুসলমানদের সম্মান রক্ষায় যত্নবান হবে :   আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১০)

নারীদের সম্মান করবে : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে আরাফাতের ময়দানের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। কেননা তোমরা তাদের আল্লাহর দেওয়া নিরাপত্তার মাধ্যমে গ্রহণ করেছ। আর তাদের লজ্জাস্থান তোমরা হালাল করেছ আল্লাহর কলেমা তথা ওয়াদার মাধ্যমে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)

অধীনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে : আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তিমমুহূর্তে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং তাঁর মুখের ভাষায় এই অসিয়ত ছিল যে...তোমাদের দাস-দাসীর ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে (অর্থাৎ তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে)।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬৬০৫)

আমানত রক্ষা করবে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! কারো কাছে অন্যের আমানত থাকলে সে যেন তা আমানতদাতার কাছে দিয়ে দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২০৬৯৫)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৯৪)

শিরক মুক্ত থাকবে : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, যে রোগ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) আর সুস্থ হয়ে ওঠেননি সেই রোগাবস্থায় তিনি বলেছেন, ‘ইহুদিদের প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫২৯)

বিদআত মুক্ত থাকবে : একদিন ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে ফিরে এমন এক নসিহত করলেন যে তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল।...একপর্যায়ে তিনি বলেন, তোমাদের কর্তব্য হলো আমার সুন্নত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে (বিদআতে) লিপ্ত হওয়া থেকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)

ফিতনা থেকে দূরে থাকবে : ইরশাদ হয়েছে, ‘কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে (হারজ অর্থ খুনখারাবি)।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৩৬)

সুদের কাছেও যাবে না : বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) সব ধরনের সুদ বাতিল ঘোষণা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আর জাহেলি যুগের সুদ প্রথা বাতিল ঘোষিত হলো। এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম আমি আমাদের প্রাপ্য সুদ, যা আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ বাতিল ঘোষণা করলাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)

দ্বিন (ধর্ম) প্রচারে আত্মনিয়োগ করবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এখানে উপস্থিত ব্যক্তি (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয় (বুখারি, হাদিস : ৬৭)


 

২৪ অক্টোবর ২০২০

নবীজির প্রিয় তিন আমল



নবীজির প্রিয় তিন আমল

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন—এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া, তিন. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)

আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) তিনটি বিশেষ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। যা থেকে নফল রোজা ও নামাজের গুরুত্ব বুঝে আসে। হাদিসবিশারদরা বলেন, যদিও এ হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.)-কে সম্বোধন করা হয়েছে, তবু তা উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। সবার উচিত আমল তিনটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।

Source: Kalerkontho

১৯ অক্টোবর ২০২০

ইসলামে নারীদের পেশা


ইসলামে নারীদের  ভূমিকা 

ইসলাম ও ইসলামী সমাজে নারীর অবস্থান ও মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু ইসলামের সোনালি যুগের ইতিহাসে নারীর ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে তাদের এই দাবির সত্যতা মেলে না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে সহস্র বছরের ইসলামী খিলাফতের যুগে নারী জ্ঞানচর্চা থেকে শুরু করে যে আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ভোগ করেছে তা আধুনিক যুগেও অপ্রতুল। এই সময় তারা বিভিন্ন পেশায় পুরুষের মতো যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দেয়। তবে হ্যাঁ, পর্দা-শালীনতা ও ইসলামের ধর্মীয় ও সামাজিক বিধান-রীতি মান্য করেই তারা তা করেছে।

 জ্ঞানচর্চায় নারী
মহানবী (সা.) নানাভাবে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করেন। তিনি মদিনার আনসারি নারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আনসারি নারীরা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনোই তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭২)
মুসলিম নারীদের আবেদনের প্রেক্ষাপটে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের দ্বিন শেখানোর জন্য পৃথক দিন নির্ধারণ করেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নারীরা একবার নবী (সা.)-কে বললেন, ‘পুরুষরা আপনার কাছে আমাদের চেয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন। তিনি তাঁদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করেন; সেদিন তিনি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁদের নসিহত করলেন ও নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০১)
রাসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে নারীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন নারী সাহাবি মুহাদ্দিস, ফকিহ (আইনজ্ঞ) ও মুফতি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যে নারী
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যও করত। কায়লা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো ওমরা আদায়কালে মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একজন নারী (ব্যবসায়ী)। আমি বেচাকেনা করি। আমি কোনো জিনিস কিনতে চাইলে আমার ঈপ্সিত মূল্যের চেয়ে কম দাম বলি। এরপর দাম বাড়িয়ে বলতে বলতে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে গিয়ে পৌঁছি। আবার আমি কোনো জিনিস বিক্রয় করতে চাইলে কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য চাই। এরপর দাম কমাতে কমাতে অবশেষে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে নেমে আসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে কায়লা! এরূপ কোরো না। তুমি কিছু কিনতে চাইলে তোমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যই বলো, হয় তোমাকে দেওয়া হবে, নয় দেওয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, তুমি কোনো কিছু বিক্রয় করতে চাইলে তোমার কাঙ্ক্ষিত দামই চাও, হয় তুমি দেবে অথবা না দেবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২০৪)
 নারী চিকিৎসক
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা চিকিৎসক হিসেবেও দক্ষতা অর্জন করেন। যাঁরা শৈল্যবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আয়েশা (রা.) অপেক্ষা দক্ষ মানুষ দেখিনি। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, খালা! আপনি এই জ্ঞান কোথা থেকে অর্জন করলেন? তিনি বলেন, আমি মানুষকে রোগীর চিকিৎসা করতে দেখেছি এবং তা মনে রেখেছি। (সিয়ারু আলামুন নুবালা : ২/১৮২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, উম্মে সুলাইম (রা.) ও তাঁর সঙ্গের আনসার নারীদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা পানি পান করাতেন এবং আহতদের জখমে ওষুধ লাগিয়ে দিতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫৭৫)
মিসরে মুসলিম শাসক কর্তৃক প্রথম আবাসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে নারীরাও চিকিৎসক ও শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁদের কেউ কেউ মাশিখাতুত-তিব’ (প্রধান অধ্যাপক) পদেও অধিষ্ঠিত হন। বিখ্যাত চিকিৎসক শিহাবুদ্দিন আহমদের মেয়ে কায়রোর দারুশ-শিফা মানসুরিয়ার মাশিখাতুত-তিবপদে দায়িত্ব পালন করেন।  (আহমদ ঈসা বেগ, তারিখুল বিমারিস্তান ফিল ইসলাম)
 কৃষিকাজে নারী
মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ করতেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন জোবায়ের আমাকে বিয়ে করেন, তখন তাঁর কোনো ধন-সম্পদ ছিল না, এমনকি কোনো স্থাবর জমিজমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু কুয়া থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম, কিন্তু ভালো রুটি তৈরি করতে পারতাম না। ... রাসুল (সা.) জোবায়েরকে একখণ্ড জমি দিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আঁটির বোঝা বহন করে আনতাম। ওই জমির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল। একদিন আমি মাথায় করে খেজুরের আঁটি বহন করে নিয়ে আসছিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, তখন রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কয়েকজন আনসারও ছিলেন। নবী (সা.) আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে তাঁর উটের পিঠে বসার জন্য উটকে আখ্! আখ্! বললেন, যাতে উটটি বসে এবং আমি তার পিঠে আরোহণ করতে পারি। ...’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২৪)
 হস্তশিল্প
মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা হস্তশিল্পের কাজ করেও অর্থ উপার্জন করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সঙ্গে মিলিত হবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা। সুতরাং তারা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়েশা (রা.) বলেন, অবশেষে আমাদের মধ্যে জয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা স্থির হলো। কেননা, তিনি হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬০৯৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী রায়িতা (রা.) হস্তশিল্পে দক্ষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বিক্রি করতেন এবং উপার্জিত অর্থ দান করে দিতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬০৩০)
 রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব
ইসলামের সোনালি যুগে নারীরা রাজনীতির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে না থাকলেও তাঁরা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আয়েশা (রা.) মুয়াবিয়া ও আলী (রা.)-এর মধ্যকার সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেন। তেমনি সাওদা বিনতে আম্মারা বিন আশতার হামদানি তাঁর গোত্রের প্রতিনিধি হয়ে মুয়াবিয়া (রা.)-এর কাছে যান এবং দাবি ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। মুয়াবিয়া (রা.) তাঁদের দাবি মেনে নেন এবং ইবনে আরতাকে বরখাস্ত করেন। (আকদুল ফারিদ, পৃষ্ঠা ৩৪৪-৪৬)
 সমাজসেবা
ইসলামের সোনালি যুগে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজেও অংশগ্রহণ করতেন। তাঁরা অসংখ্য শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা দীর্ঘ খাল খনন করে  হাজিদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন। সেলজুক শাসক সুলতান মালিক শাহর স্ত্রী তুরকান বিনতে তুরাজ বাগদাদে তিনটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তা পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াক্ফ করেন। (তারিখু দাওলাতুল আব্বাসিয়া, পৃষ্ঠা ৯৭)
এ ছাড়া একাদশ শতাব্দীতে মামলুক শাসনামলে মুসলিম নারীরা দামেস্কে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হতো।
G Qvov I
স্পেনের অধিবাসী আয়েশা বিনতে আহমদ বিন কাদিম ছিলেন ক্যালিগ্রাফিশিল্পী। লুবনি (রহ.) ছিলেন বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে পারদর্শী। রাবিয়া কসিসাহ সুপ্রসিদ্ধ বক্তা ছিলেন। শিফা বিনতে আবদিল্লাহ ছিলেন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ। ওমর (রা.) তাঁকে ইসলামী আদালতের কাজাউল হাসাবাহ’ (Accountability Court) কাজাউস সুক’ (Market Administration) ইত্যাদির দায়িত্বভার অর্পণ করেন। (তাবকাতে ইবনে সাদ : ৮/৪৫-৪৮; দালায়িলুন নাবুওয়াহ : ৫/৪১৬; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/৭৮)
ইসলামের সোনালি যুগে নারীর প্রতি মুসলিম সমাজের মনোভাব স্পষ্ট করতে আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রহ.)-এর বিখ্যাত উক্তিটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে। তিনি বলেন,  Women are one-half of the society which gives birth to the other half, so it is as if they are the entire society.অর্থাৎ নারী সমাজের অর্ধেক। কিন্তু অবশিষ্ট অর্ধেকেরও জন্ম দেয় নারী। সুতরাং নারীরাই যেন পুরো সমাজ।




বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

পারিবারিক সুখ শান্তির জন্য দোয়া।

 আল কুরআন, ২৫  আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪ وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ ا...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ