২৩ নভেম্বর ২০২৫

সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব


 ইসলামী জীবন

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০


 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যা কিছু আছে, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনিই সর্বশক্তিমান। সব কিছুর কর্মবিধায়ক একমাত্র তিনিই। তাঁর রাজত্বের সীমানা অতিক্রম করার সাধ্য কারো নেই।


তিনি ছাড়া আর কোনো আশ্রয়দাতা নেই। তিনি যা চান, তাই হয়। এমনকি তিনি যদি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ধ্বংস করতে চান, তা মুহূর্তেই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমার আদেশ তো কেবল একটি কথা, চোখের পলকের মতো।

’ (সুরা : আল ক্বামার, আয়াত : ৫০)

অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটনের জন্য আমাকে কোনো বড় প্রস্তুতি নিতে হবে না কিংবা তা সংঘটিত করতে কোনো দীর্ঘ সময়ও ব্যয়িত হবে না। আমার পক্ষ থেকে একটি নির্দেশ জারি হওয়ার সময়টুকু মাত্র লাগবে। নির্দেশ জারি হওয়া মাত্রই চোখের পলকে তা সংঘটিত হয়ে যাবে।


যার একটি ঝলক শুক্রবার ঢাকাবাসী অনুভব করেছে।


হঠাৎ কেঁপে ওঠা ঢাকা শহরের এক মুহূর্তের জন্য সবাই মৃত্যুকে স্মরণ করেছে। মহান আল্লাহর দয়া না থাকলে হয়তো পরশু দিনই শহরের বহু মানুষ প্রাণ হারাত। সাজানো-গোছানো এই শহর রূপান্তরিত হতো এক মৃত্যুপুরীতে। দুনিয়াকে ঘিরে করা মানুষের সব আয়োজন এক নিমেষে মাটিতে মিশে যেত। মহান আল্লাহ চাইলে এভাবেই এক মুহূর্তে সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেন।

তাঁর প্রবল ক্ষমতার জানান দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে কোনো কিছুকে তিনি যদি ‘হও’ বলতে চান, তখনই তা হয়ে যায়।’

(সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৮২)


তিনি যদি কাউকে মৃত্যু অথবা কোনো বিপদ দিতে চান, তা থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যু অনিবার্য সত্য। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে আস্বাদন করতে হবে। এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব সবাইকে দিতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ, তা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন, যা তোমরা করতে।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৮)


তবে এই আয়াতে এই কথা উদ্দেশ্য নয় যে কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখা দিলে মানুষ তার নিরাপত্তার জন্য সেখান থেকে প্রস্থানের চেষ্টা করবে না। বরং এ রকম পরিস্থিতি দেখা দিলে অবশ্যই তা থেকে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কোথাও অগ্নি দুর্ঘটনা দেখা দিলে সেখান থেকে অবশ্যই নিরাপদে সরে যেতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) একবার একটি কাত হয়ে পড়া প্রাচীরের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় দ্রুত চলে গিয়েছিলেন। (মুসনাদে আহমদ)


মূল বিষয় হলো, মৃত্যু যেহেতু আমাদের জন্য অনিবার্য, আমাদের সবাইকেই ডাক পড়া মাত্র আল্লাহর কাছে ফেরত যেতে হবে এবং কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে, তাই আমাদের উচিত হচ্ছে, সর্বদা কৃত গুনাহের জন্য মহান আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা। সামনের দিনগুলোতে পাপ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।


মহান আল্লাহ যাতে ঈমান অবস্থায় তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার তাওফিক দান করেন, সে জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে প্রতিদিন শোয়ার সময় এসব বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।


আল-বারাআ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তুমি শোয়ার জন্য বিছানায় যেতে চাও সে সময় নামাজের অজুর মতো অজু করো, অতঃপর তোমার ডান কাতে শয়ন করো, অতঃপর বলো, ‘হে আল্লাহ! আমার চেহারা আমি তোমার দিকে সোপর্দ করলাম, আমার সমস্ত বিষয় তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আশা ও ভয় নিয়ে তোমার দিকে আমার পিঠ সঁপে দিলাম, তোমার হতে (পালিয়ে) আশ্রয় নেওয়ার এবং রক্ষা পাওয়ার তুমি ব্যতীত আর কোনো জায়গা নেই। আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের ওপর এবং তোমার পাঠানো নবীর ওপর।’ তারপর যদি ওই রাতে তুমি মারা যাও, তাহলে দ্বিনের (ইসলামের) ওপরই মৃত্যুবরণ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৪)


মৃত্যু সম্পর্কে আবু বকর (রা.)-এর সুন্দর একটি উক্তি আছে। আয়েশা‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনায় শুভাগমন করলে আবু বকর (রা.) ও বিলাল (রা.) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবু বকর (রা.) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতাংশটি আবৃত্তি করতেন—


‘প্রত্যেকেই স্বীয় পরিবারের মাঝে দিনাতিপাত করছে, অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতা অপেক্ষা সন্নিকটবর্তী।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯)


তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো, সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা। পরকালের প্রস্তুতি নেওয়া। গুনাহ ছেড়ে দেওয়া এবং যতটা সম্ভব নেক আমল করার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ও অকর্মণ্য সেই ব্যক্তি যে তার নফসের দাবির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে বৃথা আশা করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৬০)


কারণ আমরা কেউ জানি না, আগামীকাল আমাদের সঙ্গে কী ঘটবে। আমরা কেউই জানি না যে কখন আমাদের মৃত্যু চলে আসবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’


(সুরা লোকমান, আয়াত : ৩৪)


মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঈমানদার অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন এবং মৃত্যুর সময়ও ঈমান অবস্থায় মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

ইসলামী জীবন

প্রকাশ: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০

কোরআন থেকে শিক্ষা

পর্ব-৯৬১

কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ


‘কোনো বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না; কোনো ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকে তা বহন করতে আহবান করে, তবে তার কিছুই বহন করা হবে না—নিকটাত্মীয় হলেও...আর না ছায়া ও রৌদ্র এবং সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহই যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান; তুমি শোনাতে সমর্থ হবে না, যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১৮-২২)


আয়াতগুলোতে পাপের পরিণতি, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি ও ভালো-মন্দের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


 


শিক্ষা ও বিধান


 


১. কেউ অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না।


তবে যারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে এবং পাপে লিপ্ত করে তারা পাপের অংশীদার হবে।

২. পিতা-মাতা ও সন্তানের মতো আপনজনরাও পরকালের পাপের দায় গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে।


৩. ‘না দেখে ভয় করে’ বাক্য দ্বারা জাহান্নাম না দেখে ভয় করা অথবা একান্তে লোকচক্ষুর অগোচরে আল্লাহকে ভয় করা উদ্দেশ্য।


৪. আয়াত দ্বারা আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।


আত্মশুদ্ধি ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব নয়।

৫. আয়াতে অন্ধ ও চক্ষুষ্মান দ্বারা অবিশ্বাসী ও বিশ্বাসী, অন্ধকার ও আলো দ্বারা হক ও বাতিল, ছায়া ও রৌদ্র দ্বারা সওয়াব ও শাস্তি, মৃত ও জীবিত দ্বারা কাফির ও মুমিন উদ্দেশ্য। (তাফসিরে আবু সাউদ : ৭/১৪৯)

প্রাসঙ্গিক

ইসলামী জীবন

প্রকাশ: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০

ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া মানুষ বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে : ধর্ম উপদেষ্টা

 ইসলামী জীবন ডেস্ক

ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া মানুষ বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে : ধর্ম উপদেষ্টা

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম  খালিদ হোসেন বলেছেন, আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে দ্বিনি শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো গেলে সমাজ পরিবর্তন করা যায়। ধর্ম ব্যতীত শিক্ষায় মানুষ বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে ওয়েল পার্ক রেসিডেন্সের সভাকক্ষে আসসুন্নাহ মডেল মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল ও সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।


তিনি আরো বলেন, বিশ্বের সব উন্নত দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপাসনালয় রয়েছে।


সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে দ্বিনি শিক্ষার সমন্বয় করা না হলে মানুষ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। শিক্ষা থেকে ধর্মকে আলাদা করা হলে ডাকাত তৈরি হবে, মাস্তান তৈরি হবে।

ড. খালিদ বলেন, এ দেশকে দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ ও চাঁদাবাজমুক্ত করতে হলে আল্লাহওয়ালাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। অন্তরে যাদের আল্লাহভীতি রয়েছে এবং যাদের চরিত্র ইস্পাতের মতো শক্ত ও অটুট তাদের নির্বাচিত করতে হবে।


এ জন্য তরুণ ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।

আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদরাসাটির প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম আযহারীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. মমতাজ উদ্দীন কাদেরী, অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির খালভী, উম্মা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি আবুল কালাম আল আজাদ, আল্লামা আবুল খাইর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা সুহাইল সালেহ ও কোর্টহিল জামে মসজিদের খতিব শায়েখ নাসির উদ্দীন প্রমুখ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অন্যান্যের মধ্যে আসসুন্নাহ মডেল মাদরাসার পরিচালক মুফতি মাসউদুর রহমান বক্তব্য দেন। পরে উপদেষ্টা ২০২৫ সালে আসসুন্নাহ মডেল মাদরাসার হিফজ বিভাগের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন।


 


news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

প্রাসঙ্গিক

ইসলামী জীবন

প্রকাশ: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০

রবিআহ ইবনে হারিছ (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

 মাইমুনা আক্তার

রবিআহ ইবনে হারিছ (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

মহানবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও বিখ্যাত সাহাবি রবিআহ ইবনে হারিছ (রা.)। তাঁর নাম মূলত রবিআহ। উপনাম আবু আরওয়া। পিতা হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।


মা গাযিয়্যাহ বিনতে ক্বাইস। বংশপরম্পরা তাঁর ভাই আবু সুফিয়ান ইবনে হারিছের জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই। বয়সের দিক থেকে চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব থেকে দুই বছরের বড়।

(আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৩৫)

ইসলাম গ্রহণ


খন্দক যুদ্ধের সময় আব্বাস (রা.) ও নাওফল ইবনে হারিছ (রা.) হিজরতের উদ্দেশ্যে যখন মক্কা ত্যাগ করছিলেন, তখন রবিআহ ইবনে হারিছ (রা.) তাদের বিদায় দিতে গিয়ে ‘আবওয়া’ পর্যন্ত যান। সেখান থেকে ফিরে যেতে চাইলেন মক্কায়। তখন আব্বাস (রা.) ও নাওফল (রা.) তাকে ভর্ত্সনা দিয়ে বললেন, আরে কোথায় যাচ্ছ! শিরকের ভূমিতে, যেখানকার লোকেরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করছে এবং মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে চলছে। চলো, মদিনায়।


তাদের কথায় রবিআহ সাড়া দিল। মক্কায় না গিয়ে তাদের সঙ্গে পথ ধরল মদিনার। এভাবে তিনি মুসলমান অবস্থায় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মিলিত হলেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৩৬; সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১/২৫৮)

যুদ্ধ-জিহাদ


রবিআহ ইবনে হারিছ (রা.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মক্কা বিজয়, তায়িফ-অভিযান ও হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে হুনাইন যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় মুহূর্তে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তিনিও রাসুল (সা.)-এর সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


(আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৩৬)

ছেলেসন্তান


রবিআহ ইবনে হারিছের একাধিক স্ত্রী থেকে আট ছেলে ও দুই মেয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর একটি ছেলে শিশু অবস্থায়ই মারা যায়। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৪/৩৬; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১/২৫৭)


রবিআর এই শিশুটির ব্যাপারেই রাসুল (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সাবধান! আমি জাহেলি যুগের সকল রক্তের দাবি (তথা কিসাস) আমার পায়ের নিচে রাখলাম, অর্থাৎ রহিত করলাম। প্রথমে আমি আমার বংশের রক্তের দাবির মধ্যে রবিআর ছেলের রক্তের দাবি রহিত করলাম। সে সাদ গোত্রে শিশু অবস্থায় লালিত-পালিত হচ্ছিল, তখন হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল। (মুসলিম ১/৩৯৭)


ইন্তেকাল : তিনি উমর (রা.)-এর খেলাফতামলে ইন্তেকাল করেন। এর আগে তাঁর দুই ভাই নওফল ও আবু সুফিয়ান (রা.) ইন্তেকাল করেছেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা

প্রাসঙ্গিক

ইসলামী জীবন

প্রকাশ: রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০

ফিলিস্তিনে ইসহাক (আ.)-এর স্মৃতি ও সমাধি

 আলেমা হাবিবা আক্তার

ফিলিস্তিনে ইসহাক (আ.)-এর স্মৃতি ও সমাধি

মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে ইসহাক (আ.) ছিলেন ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র এবং আল্লাহর সম্মানিত নবী। বনি ইসরাঈল ইসহাক (আ.)-এর পুত্র ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর। ইসহাক (আ.) মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি সব আসমানি ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি সম্মানিত। ফিলিস্তিনের হেবরনে হারাম আল-ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে নবী ইসহাক (আ.) ও তাঁর স্ত্রী রেবেকার কবর আছে।


একই কমপ্লেক্সে ইবরাহিম (আ.), ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.)-এর কবর আছে।

ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে মুসলিমদের মসজিদ এবং ইহুদিদের সিনাগগ রয়েছে। প্রত্যেকের প্রার্থনার স্থান ও প্রবেশপথ ভিন্ন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে উভয় সম্প্রদায় নিজ নিজ উৎসবের সময় বছরের ১০ দিন করে পুরো কমপ্লেক্সে প্রবেশাধিকার লাভ করে থাকে।


তবে সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার মুসলিমদের ইবরাহিমি কমপ্লেক্সে প্রবেশে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। অবশ্য ১৯৬৭ সালের আগ পর্যন্ত এখানে শুধু মুসলমানরাই ইবাদত করার সুযোগ পেত।

কোরআন ও হাদিসে ইসহাক (আ.) সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স যখন ১০০ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সারাহর বয়স ৮০ বছর তখন ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয়।


বড় ভাই ইসমাইল (আ.)-এর ১৪ বছর পর তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন।

ইবরাহিম (আ.) যখন জীবনছায়াহ্নে উপনীত হন, তখন তিনি ইচ্ছা করেন ছেলে ইসহাককে বিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না যে ইসহাক (আ.) কোনো কেনানি নারীকে বিয়ে করুক। কেননা তারা ছিল পৌত্তলিক। ইবরাহিম (আ.) ছেলের জন্য পাত্রী অনুসন্ধান করতে তাঁর বিশ্বস্ত ভৃত্যদের ইরাকের হারানে পাঠালেন।


তারা ইবরাহিম (আ.)-এর ভাই বেথুয়েল ইবনে নাহুরের মেয়ে রেবেকাকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেন। ইবরাহিম (আ.) রেবেকার সঙ্গে ছেলে ইসহাকের বিয়ে দেন। তাদের ঔরসে যমজ সন্তান আল-ইস ও ইয়াকুব (আ.)-এর জন্ম হয়।

যৌবনে পদার্পণের পর ইয়াকুব (আ.) নবুয়ত ও ধর্মীয় নেতৃত্ব লাভ করলে ভাই আল-ইস চরম ক্ষুব্ধ হয় এবং ভাইকে হত্যার চিন্তা করে। ফলে ইয়াকুব (আ.) দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। রেবেকা ছাড়াও ইয়াকুব (আ.)-এর আরো তিনজন স্ত্রী ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, রোমানরা আল-ইসের বংশধর।


ইসহাক (আ.) কেনানের হেবরন গ্রামে বসবাস করতেন, যা আধুনিক ফিলিস্তিনের হেবরন শহর নামে পরিচিত। এখানে ইবরাহিম (আ.)-ও তাঁর জীবনের শেষ সময়টুকু কাটান। হেবরনেই ইসহাক (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। তিনি ১৮০ বছর বয়স পেয়েছিলেন। তাঁকে পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর পাশে একটি গুহার ভেতর দাফন করা হয়।


পবিত্র কোরআনের ১৭ স্থানে ইসহাক (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাঁকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, সে ছিল এক নবী, সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। আমি তাঁকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও; তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১১২-১১৩)


ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার তিন আসমানি ধর্মের অনুসারীদের কাছেই অত্যন্ত সম্মানিত। ফলে ইসলামপূর্ব যুগেও তাঁদের কবরের স্থানটি মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম হারাম আল-ইবরাহিমের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন রাজা প্রথম হেরোড, তিনি রোমানদের সমর্থনে জেরুজালেম শাসন করতেন। জেরুজালেম মুসলমানদের অধীনে আসার পর ধারাবাহিকভাবে সব মুসলিম শাসকই হারাম আল-ইবরাহিমের সংস্কার ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। উমাইয়ারা হারাম আল-ইবরাহিমে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন।


মুসলিম শাসকদের মধ্যে আমির বদরুদ্দিন জামালি, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি, আমির তানজাক আন-নাসিরি, সুলতান জাহির বারবাক, আমির আলামুদ্দিন সানজার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এর ভেতর সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবির ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা তিনি ইউরোপীয় দখলদারদের হাত থেকে জেরুজালেম উদ্ধার করেন। ক্রুসেডাররা প্রাচীন ইবরাহিমি মসজিদ ভেঙে গির্জা তৈরি করেছিল। সুলতান সালাউদ্দিন পুনরায় সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন. 


স্বত্ব © ২০২৫ কালের কণ্ঠ


বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব

 ইসলামী জীবন প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০০  মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা সর্বদা পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যা কিছু আছে...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ