২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

কোরআনের আলোকে অর্থ উপার্জনের অবৈধ পন্থা


  • খবর
  •  

  • শুভসংঘ
  • রাসুলে কারিম (সা.)-এর হাদিসে এবং ইসলামী আইনজ্ঞদের ফিকাহ গ্রন্থাবলিতে অর্থোপার্জনের অবৈধ পন্থার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অবৈধ পন্থার কথা পবিত্র কোরআনেও সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। নিম্নে কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো—ক) মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের পরস্পরের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। আর জেনে-বুঝে অপরাধমূলক পন্থায় অপরের সম্পদের কিছু অংশ ভক্ষণ করার উদ্দেশ্যে তা শাসকদের কাছে উপস্থাপন করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

    খ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি অন্যের ওপর আস্থা স্থাপন করে তার দায়িত্বে কোনো আমানত রাখে, তাহলে যার ওপর আস্থা স্থাপন করা হয়েছে, সে যেন আস্থাস্থাপনকারীর আমানত ফেরত দেয় এবং নিজের মনিব আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে যেন আত্মরক্ষা করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৩)

    গ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আত্মসাৎ (জনগণের অর্থসম্পদরে খিয়ানত) করবে, কিয়ামতের দিন সে অবশ্যই এ আত্মসাৎসহ হাজির হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সেখানে তার কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফল প্রদান করা হবে।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ১৬১)

    ঘ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘চো পুরুষ ও চোর নারী উভয়ের হাত কেটে দাও।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৮)

    অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটায় (অর্থাৎ সেসব লোক, যারা ডাকাতি, রাহাজানির মতো অপরাধ করে বেড়ায়) তাদের দণ্ড হলো তাদের হত্যা করে ফেলা কিংবা শূলে চড়ানো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৩)

    ঙ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে এতিমের অর্থসম্পদ ভক্ষণ করে তারা মূলত নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ১০)

    চ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস সেই সব ঠকবাজদের জন্য, যারা অপর লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের ওজন বা পরিমাপ করে দেওয়ার সময় কম দিয়ে থাকে।’ (সুরা আল মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)

    ছ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা চায় যে ঈমানদার লোকদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্য পৃথিবীর জীবনে এবং পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছে।’ (সুরা আন নুর, আয়াত : ১৯)

    অন্য আয়াতে এসেছে, ‘এমন কিছু লোকও আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার জন্য মন ভোলানো কথা ক্রয় করে আনে, এমন লোকদের জন্য অপমানকর শাস্তি আছে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ৬)

    এখানে মন ভোলানো কথা মানে গান-বাদ্য, গল্পগুজব ও এমন সব খেলাধুলা, যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। (তাফসিরে তাবারি, ২১তম খণ্ড)

    জ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘বৈষয়িক স্বার্থে নিজেদের দাসীদের বেশ্যাবৃত্তির জন্য বাধ্য করো না, যখন তারা নিজেরা এরূপ কাজ থেকে আত্মরক্ষা করতে চায়।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৩)

    এ আয়াতের প্রকৃত লক্ষ্য পতিতাবৃত্তির উচ্ছেদ। দাসীর কথা উল্লেখ করার কারণ হলো, প্রাচীন আরবে দাসীদের দিয়েই পতিতাবৃত্তির ব্যবসা চালানো হতো। লোকেরা তাদের যুবতী সুন্দরী দাসীদের গলিতে বসিয়ে দিত এবং তাদের উপার্জন ভক্ষণ করত। (ইবনে জারির তাবারি, ১৮/৫৫-৫৮, ১০৩-১০৪; তাফসির ইবনে কাসির, ৩/২৮৮-২৮৯)

    অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। এ এক চরম অশ্লীলতা আর নোংরা নিকৃষ্ট পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

    ঝ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, মদ, জুয়া, আসতানা (বেদি) ও পাশা—এসব নোংরা শয়তানি কাজ। অতএব তোমরা এসব পরিত্যাগ করো।’ (সুরা আল মায়িদা, আয়াত : ৯০)

    কোরআনে যেসব জিনিস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন ও ব্যবসাও নিষিদ্ধ। কেননা, কোনো জিনিস নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিই হলো, ওই জিনিস দ্বারা কোনোভাবে লাভবান হওয়া যাবে না। (আল জাসসাস : আহকামুল কোরআন, ২/২১২)

    ঞ) মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন, আর সুদকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

    এ থেকে বোঝা গেল, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি মূলধনের ওপর যে মুনাফা অর্জন করবে কিংবা যৌথ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অংশহারে যে মুনাফা অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হবে তা বৈধ। কিন্তু ঋণের ক্ষেত্রে ঋণদাতা যদি ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে মূল্যের চেয়ে কিছু বেশি আদায় করে, তবে তা হারাম। এটাকে আল্লাহ তাআলা ব্যাবসায়িক মুনাফার মতো বৈধ মুনাফা বলে ঘোষণা করেননি।

    এভাবে কোরআন অর্থসম্পদ লাভের যেসব উপায় পন্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ:

    ১. কারো অর্থসম্পদ তার ইচ্ছা ও বিনিময় ছাড়া গ্রহণ করা কিংবা বিনিময় দিয়ে ও রাজি করিয়ে অথবা বিনিময় ছাড়া রাজি করিয়ে নেওয়া। এমনভাবে রাজি করিয়ে নেওয়া, যে রাজি করানোর পেছনে থাকে দমন-পীড়ন ও চাপ প্রয়োগ, ২. ঘুষ, ৩. জবরদখল, লুণ্ঠন ও আত্মসাৎ, ৪. খিয়ানত, চাই তা ব্যক্তির অর্থসম্পদ হোক কিংবা জনগণের অর্থসম্পদ; ৫. চুরি-ডাকাতি, ৬. এতিমের অর্থসম্পদের বল্গাহীন ভোগ ব্যবহার, ৭. মাপ ও ওজনে কম-বেশি করা, ৮. অশ্লীলতা প্রসারকারী উপায়-উপকরণের ব্যবসা, ৯. গান-বাজনার পেশা, ১০. পতিতাবৃত্তি ও ব্যভিচার, ১১. মদ উৎপাদন, তার ব্যবসা ও পরিবহন; ১২. জুয়া ও এমন সব উপায়-পন্থা, যেসবের মাধ্যমে কিছু লোকের অর্থ অন্যদের হাতে শুধু ভাগ্য বা ঘটনাচক্রের মাধ্যমে চলে যায়, ১৩. (মুসলমানের জন্য) মূর্তি তৈরি, মূর্তির ক্রয়-বিক্রয়; ১৪. ভাগ্য গণনা ও শকুন বিদ্যা প্রভৃতির ব্যবসা, ১৫. সুদ, পরিমাণ বেশি হোক কিংবা কম; ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ নেওয়া হয়ে থাকুক কিংবা ব্যবসা, শিল্প বা কৃষি কাজের জন্য ঋণ নেওয়া হোক—সর্বাবস্থায় সুদ নিষিদ্ধ।

    https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2022/09/21/1185510

    বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

    World map

      World Map Satalite Map of world

    জনপ্রিয় লেখা সমূহ