মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে কল্যান লাভের জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তার নিকট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইস্তেখারা করতে হয় বা সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়,যেন তিনি তার সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী জন্য উপকারী হয়।
বিয়ে, চাকুরী, ব্যবসা,সফরসহ ইত্যাদি বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা হয় বা করা উত্তম।
ইস্তেখারা করার নিয়ম:
১) ওযু করতে হবে।
২) ২ রাকায়াত নফল নামায পড়তে হবে। (নামাজের নিয়ত ও নিয়ম ভিডিও শেষে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ)
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পেশ করার পর ইস্তেখারার দুয়াটি পাঠ করতে হবে:
জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ছাড়া দুই রাক’আত নামায আদায় করে নেয়,(নফল নামাজ) অতঃপর বলেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ.
”আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না “হাযাল আমরা” খাইরুল্লি ফীহ- দ্বীনী ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী ওয়া-্ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা’আশী ওয়াআকীবাতি আমরি,ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী।”
অর্থ “হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে, ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। এবং যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”।
(তিরমিজি ৪৮০ ইবনু মাজাহ (১৩৮০,রিয়াদুস সলিহীন ৭২২)
এ দু’আর মধ্যে যেখানে “হাজাল আমরা” শব্দটি আসবে, সেখানে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন সেটি স্মরণ করবেন। উক্ত দু’আ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবেন। সে কাজের মধ্যে আপনার জন্য কল্যাণ রয়েছে ।
আর যদি ঘুমানোর সময় না থাকে অর্থাৎ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান, তাহলে দোয়াটি শেষ করার পর, যেদিকে আপনার মন আগ্রহ পোষণ করবে সেটাই ফলাফল বলে মনে করতেন । ইনশাল্লাহ বিপদ আপদ থেকে বেঁচে যাবেন এবং সেই কাজে সফল হবে
জরুরী কিছু কথা:–
(১) ইস্তিখারার দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে পারবেন অসুবিধা নেই। তবে মুখস্ত পড়া বেশি ভাল।
(২) ইস্তিখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
(৩) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান। পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
(৪) সালাতুল ইস্তিখারা ও দোয়া পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়েয আছে।
(৫) এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে।
(৬) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও ইস্তিখারা করা জায়েজ নেই।
মানসিক চাপ কমানোর উপায়-মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে এখানে ক্লিক করে লেখাটি পড়ুন ।
সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম
যেমনভাবে যোহর, মাগরিব ও এশার নামাজের পর শেষে দুই রাকাত নফল পড়া হয় সেই নিয়মে পড়লেই যথেষ্ট হবে । তবে ইস্তেখারার উদ্দেশ্য থাকতে হবে ।
ইস্তেখারার উদ্দেশ্যে নফল নামাজ আদায় করার কথা ভাবলেই নিয়ত হয়ে যাবে । তারপর প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর, যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর যেকোনো অন্য আরেকটি সূরা পড়তে হবে ।
এছাড়া আরেকটি নিয়মে নামাজ আদায় করতে পারেন,প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ৩ বার করে সূরা ইখলাসও পড়তে পারেন । যে নিয়ম আপনার জন্য সহজ মনে হয় সেই নিয়মই আপনি নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন কোন সমস্যা নেই ।
কেউ যদি আরবীতে বা বাংলাতে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে চান, তাহলে করতে পারেন ।
نويت ان اصلي لله تعالى ركعتى صلواة الاستخارة نفل متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
বাংলায় উচ্চারণ:- নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ইস্তেখারাতি নাফলা, মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ/বাংলায় নিয়াত:-
“আমি দুই রাকাত ইস্তেখারা নফল নামাজের নিয়াত করছি আল্লাহ তা’আলার জন্য, মুখ আমার কা’বা শরিফের দিকে আল্লাহু আকবার” ।
আশাকরি ইস্তেখারার নামাজ ও ইস্তেখারার দোয়া সম্পর্কে আপনারা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন । এরপর যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।