Text Message

২৪ ডিসেম্বর ২০২১

ইউসুফ আঃ এর জীবন বৃত্তান্ত-আল কুরআন

 ১২-ইউসুফ

(12:4)

অনুবাদ:    এটা সেই সময়ের কথা, যখন ইউসুফ তাঁর বাপকে বললোঃ “আব্বাজান! আমি স্বপ্ন দেখেছি, এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চাঁদ আমাকে সিজদা করছে।”

(12:5)

অনুবাদ:    জবাবে তাঁর বাপ বললোঃ “হে পুত্র! তোমার এ স্বপ্ন তোমার ভাইদেরকে শুনাবে না; শুনালে তারা তোমার ক্ষতি করার জন্য পেছনে লাগবে। আসলে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু

(12:6)

অনুবাদ:    এবং ঠিক এমনটিই হবে (যেমনটি তুমি স্বপ্নে দেখেছো যে,) তোমার রব তোমাকে (তাঁর কাজের জন্য) নির্বাচিত করবেন এবং তোমাকে কথার মর্মমূলে পৌঁছানো শেখাবেন আর তোমার প্রতি ও ইয়াকূবের পরিবারের প্রতি তাঁর নিয়ামত ঠিক তেমনিভাবে পূর্ণ করবেন যেমন এর আগে তিনি তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি করেছেন। নিঃসন্দেহে তোমার রব সর্বজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়।


(12:7)

অনুবাদ:    আসলে ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের ঘটনার মধ্যে এ প্রশ্নকারীদের জন্য বড় বড় নিদর্শন রয়েছে।

(12:8)

অনুবাদ:    এ ঘটনা এভাবে শুরু হয়ঃ তাঁর ভাইয়েরা পরস্পর বলাবলি করলো, “এ ইউসুফ ও তাঁর ভাই, এরা দু’জন আমাদের পিতার কাছে আমাদের সবার চাইতে বেশী প্রিয়, অথচ আমরা একটি পূর্ণ সংঘবদ্ধ দল। সত্যি বলতে কি আমাদের পিতা একেবারেই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।

(12:9)

অনুবাদ:    চলো আমরা ইউসুফকে মেরে ফেলি অথবা তাকে কোথাও ফেলে দেই, যাতে আমাদের পিতার দৃষ্টি কেবল আমাদের দিকেই ফিরে আসে। এ কাজটি শেষ করে তারপর তোমরা ভালো লোক হয়ে যাবে।”

(12:10)

অনুবাদ:    এ কথায় তাদের একজন বললো, “ইউসুফকে মেরে ফেলো না। যদি কিছু করতেই হয় তাহলে তাঁকে কোন অন্ধ কূপে ফেলে দাও, আসা-যাওয়ার পথে কোন কাফেলা তাঁকে তুলে নিয়ে যাবে।”

(12:11)

অনুবাদ:    (এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে) তারা তাদের বাপকে গিয়ে বললো, “আব্বাজান! কি ব্যাপার, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদের ওপর ভরসা করেন না? অথচ আমরা তাঁর সত্যিকার শুভাকাংখী।

(12:12)

নুবাদ:    আগামীকাল তাঁকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, সে কিছু ফলমূল খাবে এবং দৌড়ঝাঁপ করে মন চাঙ্গা করবে। আমরা তাঁর হেফাজত করবো।”

(12:13)

অনুবাদ:    বাপ বললো, “তোমরা তাঁকে নিয়ে যাবে, এটা আমাকে কষ্ট দেবে এবং আমার আশঙ্কা হয়, তোমরা তাঁর প্রতি অমনোযোগী থাকবে এবং নেকড়ে তাঁকে খেয়ে ফেলবে।”

(12:14)

অনুবাদ:    তারা জবাব দিল, “যদি আমাদের সংঘবদ্ধ দল থাকতে তাকে নেকড়ে খেয়ে ফেলে তাহলে তো আমরা হবো বড়ই অকর্মন্য।”

(12:15)

অনুবাদ:    এভাবে চাপ দিয়ে যখন তারা তাঁকে নিয়ে গেলো এবং সিদ্ধান্ত করলো তাঁকে একটি অন্ধ কূপে ফেলে দেবে তখন আমি ইউসুফকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলাম, “এক সময় আসবে যখন তুমি তাদেরকে তাদের এ কৃতকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাদের কাজের ফলাফল সম্পর্কে তারা জানে না।”

(12:16)

অনুবাদ:    রাতে তারা কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে এসে

(12:17)

অনুবাদ:    বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়ে বাঘ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।”

(12:18)

অনুবাদ:    তারা ইউসুফের জামায় মিথ্যা রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এসেছিল। একথা শুনে তাদের বাপ বললো, “বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি বড় কাজকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক আছে, আমি সবর করবো এবং খুব ভালো করেই সবর করবো। তোমরা যে কথা সাজাচ্ছো তার ওপর একমাত্র আল্লাহ‌র কাছেই সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।”

(12:19)

অনুবাদ:    ওদিকে একটি কাফেলা এলো। তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পানি নেবার জন্য পাঠালো। সে কূয়ার মধ্যে পানির ডোল নামিয়ে দিল। সে (ইউসুফকে দেখে) বলে উঠলো, “কী সুখবর! এখানে তো দেখছি একটি বালক।” তারা তাকে পণ্য দ্রব্য হিসেবে লুকিয়ে ফেললো। অথচ তারা যা কিছু করছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত ছিলেন।

(12:20)

অনুবাদ:    শেষে তারা তাঁকে সামান্য দামে কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল। আর তার দামের ব্যাপারে তারা বেশী আশা করছিল না।

(12:21)

অনুবাদ:    মিসরে যে ব্যক্তি তাঁকে কিনেছিল সে তার স্ত্রীকে বললো, “একে ভালোভাবে রাখো, বিচিত্র নয় সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা আমরা তাকে পুত্র বানিয়ে নেবো।” এভাবে আমি ইউসুফের জন্য সে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভের পথ বের করে দিলাম এবং তাঁকে সমস্যা ও বিষয়াবলী অনুধাবন করার জন্য যথোপযোগী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলাম। আল্লাহ্‌ তাঁর কাজ সম্পন্ন করেই থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।

(12:22)

অনুবাদ:    আর যখন সে তাঁর পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাঁকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

(12:23)

অনুবাদ:    যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, “চলে এসো।” ইউসুফ বললো, “আমি আল্লাহ‌র আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি এ কাজ করবো!)। এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।”

(12:24)

অনুবাদ:    মহিলাটি তাঁর দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো। এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি। আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

(12:25)

অনুবাদ:    শেষ পর্যন্ত ইউসুফ ও সে আগে-পিছে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো এবং সে পেছন থেকে ইউসুফের জামা (টেনে ধরে) ছিঁড়ে ফেললো। উভয়েই দরজার ওপর তার স্বামীকে উপস্থিত পেলো। তাকে দেখতেই মহিলাটি বলতে লাগলো, “তোমার পরিবারের প্রতি যে অসৎ কামনা পোষণ করে তার কি শাস্তি হতে পারে? তাকে কারাগারে প্রেরণ করা অথবা কঠোর শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কি শাস্তি দেয়া যেতে পারে?”


(12:26)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “সে-ই আমাকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছিল।” মহিলাটির নিজের পরিবারের একজন (পদ্ধতিগত) সাক্ষ্য দিল, “যদি ইউসুফের জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যুক

(12:27)

অনুবাদ:    আর যদি তাঁর জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে সত্যবাদী।”

(12:28)

অনুবাদ:    স্বামী যখন দেখলো ইউসুফের জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া তখন সে বললো, “এসব তোমাদের মেয়ে লোকদের ছলনা। সত্যিই বড়ই ভয়ানক তোমাদের ছলনা!

(12:29)

অনুবাদ:    হে ইউসুফ! এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করো। আর হে নারী! তুমি নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, তুমিই আসল অপরাধী।”-(ক)

(12:30)

অনুবাদ:    শহরের মেয়েরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, “আযীযের স্ত্রী তার যুবক গোলামের পেছনে পড়ে আছে, প্রেম তাকে উন্মাদ করে দিয়েছে। আমাদের মতে সে পরিষ্কার ভুল করে যাচ্ছে।”

(12:31)

অনুবাদ:    সে যখন তাদের এ শঠতাপূর্ণ কথা শুনলো তখন তাদেরকে ডেকে পাঠালো। তাদের জন্য হেলান দিয়ে বসার মজলিসের আয়োজন করলো। খাওয়ার বৈঠকে তাদের সবার সামনে একটি করে ছুরি রাখলো। (তারপর ঠিক সেই মুহূর্তে যখন তারা ফল কেটে কেটে খাচ্ছিল) সে ইউসুফকে তাদের সামনে বের হয়ে আসার ইশারা করলো। যখন ঐ মেয়েদের দৃষ্টি তাঁর ওপর পড়লো, তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলো এবং নিজের হাত কেটে ফেললো। তারা বললো, “আল্লাহর কী অপার মহিমা! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা।”

(12:32)

অনুবাদ:    আযীযের স্ত্রী বললো, “দেখলে তো! এ হলো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে তোমরা আমার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করতে। অবশ্যই আমি তাঁকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করেছে। যদি সে আমার কথা না মেনে নেয় তাহলে কারারুদ্ধ হবে এবং নিদারুণভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।”

(12:33)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “হে আমার রব! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”

(12:34)

অনুবাদ:    ---তাঁর রব তাঁর দোয়া কবুল করলেন এবং তাদের অপকৌশল থেকে তাঁকে রক্ষা করলেন। অবশ্যি তিনি সবার কথা শোনেন এবং সবকিছু জানেন।

(12:35)

অনুবাদ:    তারপর তারা মনে করলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে কারারুদ্ধ করতে হবে, অথচ তারা (তার নিষ্কুলুষতা এবং নিজেদের স্ত্রীদের অসতিপনার) সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দেখে নিয়েছিল।

(12:36)

অনুবাদ:    কারাগারে তার সাথে আরো দু’টি ভৃত্যও প্রবেশ করলো। একদিন তাদের একজন তাঁকে বললো, “আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি মদ তৈরী করছি।” অন্যজন বললো, “আমি দেখলাম আমার মাথায় রুটি রাখা আছে এবং পাখিরা তা খাচ্ছে।” তারা উভয়ে বললো, “আমাদের এর তা’বীর বলে দিন। আমরা আপনাকে সৎকর্মশীল হিসেবে পেয়েছি।”

(12:37)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললোঃ “এখানে তোমরা যে খাবার পাও তা আসার আগেই আমি তোমাদের এ স্বপ্নগুলোর অর্থ বলে দেবো। আমার রব আমাকে যা দান করেছেন এ জ্ঞান তারই অন্তর্ভুক্ত। আসল ব্যাপার হচ্ছে, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং আখেরাত অস্বীকার করে তাদের পথ পরিহার করে।

(12:38)

অনুবাদ:    আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের পথ অবলম্বন করেছি। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। আসলে এটা আমাদের এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ (যে, তিনি আমাদের তাঁর ছাড়া আর কারোর বান্দা হিসেবে তৈরী করেননি) কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

(12:39)

অনুবাদ:    হে জেলখানার সাথীরা! তোমারা নিজেরাই ভেবে দেখো, ভিন্ন ভিন্ন বহু সংখ্যক রব ভালো, না এক আল্লাহ, যিনি সবার ওপর বিজয়ী।”

(12:40)

অনুবাদ:    তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের বন্দেগী করছো তারা শুধুমাত্র কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃ-পুরুষরা রেখেছো, আল্লাহ‌ এগুলোর পক্ষে কোন প্রমাণ পাঠাননি। শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর নেই। তাঁর হুকুম- তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না। এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।

(12:41)

অনুবাদ:    হে জেলখানার সাথীরা! তোমাদের স্বপ্নের তা’বীর হচ্ছে, তোমাদের একজন তার নিজের প্রভুকে (মিসর রাজ) মদ পান করাবে আর দ্বিতীয় জনকে শূলবিদ্ধ করা হবে এবং পাখি তার মাথা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। তোমরা যে কথা জিজ্ঞেস করছিলে তার ফায়সালা হয়ে গেছে।

(12:42)

অনুবাদ:    আবার তাদের মধ্য থেকে যার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে ইউসুফ তাকে বললোঃ “তোমার প্রভুকে (মিসরের বাদশাহ) আমার কথা বলো।” কিন্তু শয়তান তাকে এমন গাফেল করে দিল যে, সে তার প্রভুকে (মিসরের বাদশাহ) তার কথা বলতে ভুলে গেলো। ফলে ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে পড়ে রইলো।

(12:43)

অনুবাদ:    একদিন বাদশাহ বললো, “আমি স্বপ্ন দেখেছি, সাতটি মোটা গাভীকে সাতটি পাতলা গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুকনো শীষ। হে সভাসদবৃন্দ! আমাকে এ স্বপ্নের তা’বীর বলে দাও, যদি তোমরা স্বপ্নের মানে বুঝে থাকো।”

(12:44)

অনুবাদ:    লোকেরা বললো, “এসব তো অর্থহীন স্বপ্ন, আর আমরা এ ধরনের স্বপ্নের মানে জানি না।”

(12:45)

অনুবাদ:    সেই দু’জন কয়েদীর মধ্য থেকে যে বেঁচে গিয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে এখন যার মনে পড়েছিল, সে বললো, “আমি আপনাদের এর তা’বীর বলে দিচ্ছি, আমাকে একটু (কারাগারে ইউসুফের কাছে) পাঠিয়ে দিন।”

(12:46)

অনুবাদ:    সে গিয়ে বললো, “হে সত্যবাদিতার প্রতীক ইউসুফ! আমাকে এ স্বপ্নের অর্থ বলে দাওঃ সাতটি মোটা গাভীকে সাতটি পাতলা গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি শীষ সবুজ ও সাতটি শীষ শুকনো সম্ভবত আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারবো এবং তারা জানতে পারবে।

(12:47)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “তোমরা সাত বছর পর্যন্ত লাগাতার চাষাবাদ করতে থাকবে। এ সময় তোমরা যে ফসল কাটবে তা থেকে সামান্য পরিমাণ তোমাদের আহারের প্রয়োজনে বের করে নেবে এবং বাদবাকি সব শীষ সমেত রেখে দেবে।

(12:48)

অনুবাদ:    তারপর সাতটি বছর আসছে বড়ই কঠিন। এ সময়ের জন্য তোমরা যে শস্য জমা করবে তা সমস্ত এ সময়ে খেয়ে ফেলা হবে। যদি কিছু বেঁচে যায় তাহলে তা হবে কেবলমাত্র সেটুকুই যা তোমরা সংরক্ষণ করবে।

(12:49)

অনুবাদ:    এরপর আবার এক বছর এমন আসবে যখন রহমতের বৃষ্টি ধারার মাধ্যমে মানুষের আবেদন পূর্ণ করা হবে এবং তারা রস নিংড়াবে।”

(12:50)

অনুবাদ:    বাদশাহ বললো, “তাঁকে আমার কাছে আনো।” কিন্তু বাদশাহর দূত যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছল তখন সে বললো, তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে মহিলারা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের ব্যাপারটা কি? আমার রব তো তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত।

(12:51)

অনুবাদ:    একথায় বাদশাহ সেই মহিলাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা যখন ইউসুফকে অসৎকাজে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলে তোমাদের তখনকার অভিজ্ঞতা কি?” সবাই এক বাক্যে বললো, “আল্লাহর কী অপার মহিমা! আমরা তার মধ্যে অসৎ প্রবণতার গন্ধই পাইনি।” আযীযের স্ত্রী বলে উঠলো, “এখন সত্য প্রকাশ হয়ে গেছে। আমিই তাঁকে ফুসলাবার চেষ্টা করেছিলাম, নিঃসন্দেহে সে একদম সত্যবাদী।”

(12:52)

অনুবাদ:    (ইউসুফ বললোঃ) “এ থেকে আমার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আযীয জানতে পারুক, আমি তার অবর্তমানে তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং আল্লাহ‌ বিশ্বাসঘাতকতাকারীদের চক্রান্ত সফল করেন না।

(12:53)

অনুবাদ:    আমি নিজের নফ্‌সকে দোষমুক্ত করছি না। নফ্‌স তো খারাপ কাজ করতে প্ররোচিত করে, তবে যদি কারোর প্রতি আমার রবের অনুগ্রহ হয় সে ছাড়া। অবশ্যি আমার রব বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”

(12:54)

অনুবাদ:    বাদশাহ বললো, “তাঁকে আমার কাছে আনো, আমি তাঁকে একান্তভাবে নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নেব।”ইউসুফ যখন তার সাথে আলাপ করলো, সে বললো, “এখন আপনি আমাদের এখানে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং আপনার আমানতদারীর ওপর পূর্ণ ভরসা আছে।”

(12:55)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “দেশের অর্থ-সম্পদ আমার হাতে সোপর্দ করুন। আমি সংরক্ষণকারী এবং জ্ঞানও রাখি।”

(12:56)

অনুবাদ:    এভাবে আমি পৃথিবীতে ইউসুফের জন্য কর্তৃত্বের পথ পরিষ্কার করেছি। সেখানে সে যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারতো। আমি যাকে ইচ্ছা নিজের রহমতে অভিষিক্ত করি। সৎকর্মশীল লোকদের প্রতিদান আমি নষ্ট করি না।

(12:57)

অনুবাদ:    আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া সহকারে কাজ করতে থেকেছে আখেরাতের প্রতিদান তাদের জন্য আরো ভালো।

(12:58)

অনুবাদ:    ইউসুফের ভাইয়েরা মিসরে এলো এবং তাঁর কাছে হাযির হলো। সে তাদেরকে চিনে ফেললো। কিন্তু তারা তাঁকে চিনতে পারলো না।

(12:59)

অনুবাদ:    তারপর সে যখন তাদের জিনিসপত্র তৈরী করালো তখন চলার সময় তাদেরকে বললো, “তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে আমাদের কাছে আনবে, দেখছো না আমি কেমন পরিমাপ পাত্র ভরে দেই এবং আমি কেমন ভালো অতিথিপরায়ণ?

(12:60)

অনুবাদ:    যদি তোমরা তাকে না আনো তাহলে আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন শস্য নেই বরং তোমরা আমার ধারে-কাছেও এসো না।”

(12:61)

অনুবাদ:    তারা বললো, “আমরা চেষ্টা করবো যাতে আব্বাজান তাঁকে পাঠাতে রাযী হয়ে যান এবং আমরা নিশ্চয়ই এমনটি করবো।”

(12:62)

অনুবাদ:    ইউসুফ নিজের গোলামদেরকে ইশারা করে বললো, “ওরা শস্যের বিনিময়ে যে অর্থ দিয়েছে তা চুপিসারে ওদের জিনিসপত্রের মধ্যেই রেখে দাও।” ইউসুফ এটা করলো এ আশায় যে, বাড়িতে পৌঁছে তারা নিজেদের ফেরত পাওয়া অর্থ চিনতে পারবে (অথবা এ দানশীলতার ফলে তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে) এবং বিচিত্র নয় যে, তারা আবার ফিরে আসবে।

(12:63)

অনুবাদ:    যখন তারা তাদের বাপের কাছে ফিরে গেলো তখন বললো, “আব্বাজান! আগামীতে আমাদের শস্য দিতে অস্বীকার করা হয়েছে, কাজেই আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা শস্য নিয়ে আসতে পারি এবং অবশ্যি আমরা হেফাজতের জন্য দায়ী থাকবো।”

(12:64)

অনুবাদ:    বাপ জবাব দিল, “আমি কি ওর ব্যাপারে তোমাদের ওপর ঠিক তেমনি ভরসা করবো যেমন ইতিপূর্বে তার ভাইয়ের ব্যাপারে করেছিলাম? অবশ্য আল্লাহ সবচেয়ে ভালো হেফাজতকারী এবং তিনি সবচেয়ে বেশী করুণাশীল।”


(12:65)

অনুবাদ:    তারপর যখন তারা নিজেদের জিনিসপত্র খুললো, তারা দেখলো তাদের অর্থও তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে তারা চিৎকার করে উঠলো, “আব্বাজান, আমাদের আর কী চাই! দেখুন এই আমাদের অর্থও আমাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। ব্যস্‌ এবার আমরা যাবো আর নিজেদের পরিজনদের জন্য রসদ নিয়ে আসবো, নিজেদের ভাইয়ের হেফাজতও করবো এবং অতিরিক্ত একটি উট বোঝাই করে শস্যও আনবো, এ পরিমাণ শস্য বৃদ্ধি অতি সহজেই হয়ে যাবে।”

(12:66)

অনুবাদ:    তাদের বাপ বললো, “আমি কখনোই তাকে তোমাদের সাথে পাঠাবো না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে আমার কাছে অঙ্গীকার করবে। এ মর্মে যে তাকে নিশ্চয়ই আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তবে হ্যাঁ, যদি কোথাও তোমরা ঘেরাও হয়ে যাও তাহলে ভিন্ন কথা।” যখন তারা তার কাছে অঙ্গীকার করলো তখন সে বললো, “দেখো আল্লাহ আমাদের এ কথার রক্ষক।”

(12:67)

অনুবাদ:    তারপর সে বললো, “হে আমার সন্তানরা! মিসরের রাজধানীতে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না বরং বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারি না। তাঁর ছাড়া আর কারোর হুকুম চলে না, তাঁর ওপরই আমি ভরসা করি এবং যার ভরসা করতে হয় তাঁর ওপরই করতে হবে।”

(12:68)

অনুবাদ:    আর ঘটনাক্ষেত্রে তা-ই হলো, যখন তারা নিজেদের বাপের নির্দেশ মতো শহরে (বিভিন্ন দরজা দিয়ে) প্রবেশ করল তখন তার এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আল্লাহর ইচ্ছার মোকাবিলায় কোন কাজে লাগলো না। তবে হ্যাঁ,, ইয়াকূবের মনে যে একটি খটকা ছিল তা দূর করার জন্য সে নিজের মনমতো চেষ্টা করে নিল। অবশ্যি সে আমার দেয়া শিক্ষায় জ্ঞানবান ছিল কিন্তু অধিকাংশ লোক প্রকৃত সত্য জানে না।

(12:69)

অনুবাদ:    তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছলে সে তাঁর সহোদর ভাইকে নিজের কাছে আলাদা করে ডেকে নিল এবং তাকে বললো, “আমি তোমার সেই (হারানো) ভাই, এখন আর সেসব আচরণের জন্য দুঃখ করো না যা এরা করে এসেছে।”

(12:70)

অনুবাদ:    যখন ইউসুফ তাদের মালপত্র বোঝাই করাতে লাগলো তখন নিজের ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে নিজের পেয়ালা রেখে দিল। তারপর একজন নকীব চীৎকার করে বললো, “হে যাত্রীদল! তোমরা চোর।”

(12:71)

অনুবাদ:    তারা পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের কি হারিয়ে গেছে?”

(12:72)

অনুবাদ:    সরকারী কর্মচারী বললো, “আমরা বাদশাহর পানপাত্র পাচ্ছি না,” (এবং তাদের জমাদার বললোঃ) “যে ব্যক্তি তা এনে দেবে তার জন্য রয়েছে পুরস্কার এক উট বোঝাই মাল। আমি এর দায়িত্ব নিচ্ছি।”

(12:73)

অনুবাদ:    এ ভাইয়েরা বললো, “আল্লাহর কসম! তোমরা খুব ভালোভাবেই জানো, আমরা এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে আসিনি এবং চুরি করার মতো লোক আমরা নই।”


(12:74)

অনুবাদ:    তারা বললো, “আচ্ছা, যদি তোমাদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে চোরের কি শাস্তি হবে?”

(12:75)

অনুবাদ:    তারা জবাব দিল, “তার শাস্তি” যার মালপত্রের মধ্যে ঐ জিনিস পাওয়া যাবে তার শাস্তি হিসেবে তাকেই রেখে দেয়া হবে। আমাদের এখানে তো এটাই এ ধরনের জালেমদের শাস্তির পদ্ধতি।”

(12:76)

অনুবাদ:    তখন ইউসুফ নিজের ভাইয়ের আগে তাদের থলের তল্লাশী শুরু করে দিল। তারপর নিজের ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে হারানো জিনিস বের করে ফেললো। ---এভাবে আমি নিজের কৌশলের মাধ্যমে ইউসুফকে সহায়তা করলাম। বাদশাহর দ্বীন (অর্থাৎ মিসরের বাদশাহর আইন) অনুযায়ী নিজের ভাইকে পাকড়াও করা তার পক্ষে সঙ্গত ছিল না, তবে যদি আল্লাহই এমনটি চান। যাকে চাই তার মর্তবা আমি বুলন্দ করে দেই আর একজন জ্ঞানবান এমন আছে যে প্রত্যেক জ্ঞানবানের চেয়ে জ্ঞানী।

(12:77)

অনুবাদ:    এ ভাইয়েরা বললো, “এ যদি চুরি করে থাকে তাহলে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ এর আগে এর ভাইও (ইউসুফ) চুরি করেছিল।” ইউসুফ তাদের একথা শুনে আত্মস্থ করে ফেললো, সত্য তাদের কাছে প্রকাশ করলো না, শুধুমাত্র (মনে মনে) এতটুকু বলে থেমে গেলো, “বড়ই বদ তোমরা (আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ওপর) এই যে দোষারোপ তোমরা করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ প্রকৃত সত্য ভালোভাবে অবগত।”


(12:78)

অনুবাদ:    তারা বললো, “হে ক্ষমতাসীন সরদার (আযীয)! এর বাপ অত্যন্ত বৃদ্ধ, এর জায়গায় আপনি আমাদের কাউকে রেখে দিন। আমরা আপনাকে বড়ই সদাচারী ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি।”

(12:79)

অনুবাদ:    ইউসুফ বললেন, “আল্লাহর পানাহ! অন্য কাউকে আমরা কেমন করে রাখতে পারি? যার কাছে আমরা নিজেদের জিনিস পেয়েছি তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে রাখলে আমরা জালেম হয়ে যাবো।”

(12:80)

অনুবাদ:    যখন তারা ইউসুফের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে গেলো তখন একান্তে পরামর্শ করতে লাগলো। তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বয়সে বড় ছিল সে বললোঃ “তোমরা কি জান না, তোমাদের বাপ তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর নামে কি অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং ইতিপূর্বে ইউসুফের ব্যাপারে তোমরা যেসব বাড়াবাড়ি করেছো তাও তোমরা জানো। এখন আমি তো এখান থেকে কখনোই যাবো না যে পর্যন্ত না আমার বাপ আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার ব্যাপারে কোন ফায়সালা করে দেন, কেননা তিনি সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী।


(12:81)

অনুবাদ:    তোমরা তোমাদের বাপের কাছে ফিরে গিয়ে বলো, “আব্বাজান, আপনার ছেলে চুরি করেছে, আমরা তাকে চুরি করতে দেখিনি, যতটুকু আমরা জেনেছি শুধু ততটুকুই বর্ণনা করছি এবং অদৃশ্যেরই রক্ষণাবেক্ষণ করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।

(12:82)

অনুবাদ:    আমরা যে পল্লীতে ছিলাম সেখানকার লোকজনদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন এবং যে কাফেলার সাথে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমরা যা বলছি সত্য বলছি।”

(12:83)

অনুবাদ:    ইয়াকূব এ কাহিনী শুনে বললো, “আসলে তোমাদের মন তোমাদের জন্য আরো একটি বড় ঘটনাকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক আছে, এ ব্যাপারেও আমি সবর করবো এবং ভালো করেই করবো। হয়তো আল্লাহ‌ এদের সবাইকে এনে আমার সাথে মিলিয়ে দেবেন। তিনি সবকিছু জানেন এবং তিনি জ্ঞানের ভিত্তিতে সমস্ত কাজ করেন।”

(12:84)

অনুবাদ:    তারপর সে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে গেলো এবং বলতে লাগলো, “হায় ইউসুফ”- সে মনে মনে দুঃখে ও শোকে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছিল এবং তার চোখগুলো সাদা হয়ে গিয়েছিল,

(12:85)

অনুবাদ:    ছেলেরা বললো, “আল্লাহর দোহাই! আপনি তো শুধু ইউসুফের কথাই স্মরণ করে যাচ্ছেন। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তার শোকে আপনি নিজেকে দিশেহারা করে ফেলবেন অথবা নিজের প্রাণ সংহার করবেন।”

(12:86)

অনুবাদ:    সে বললো, “আমি আমার পেরেশানি এবং আমার দুঃখের ফরিয়াদ আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো কাছে করছি না। আর আল্লাহর ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি তোমরা ততটুকু জানো না।

(12:87)

অনুবাদ:    হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তাঁর ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু অনুসন্ধান চালাও। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তাঁর রহমত থেকে তো একমাত্র কাফেররাই নিরাশ হয়।”

(12:88)

অনুবাদ:    যখন তারা মিসরে গিয়ে ইউসুফের সামনে হাযির হলো তখন আরয করলো, “হে পরাক্রান্ত শাসক! আমরা ও আমাদের পরিবার-পরিজন কঠিন বিপদের মুখোমুখি হয়েছি এবং আমরা মাত্র সামান্য পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদের পূর্ণমাত্রায় শস্য দিয়ে দিন এবং আমাদেরকে দান করুন, আল্লাহ দানকারীদেরকে প্রতিদান দেন।”

(12:89)

অনুবাদ:    (একথা শুনে ইউসুফ আর চুপ থাকতে পারলো না) সে বললো, “তোমরা কি জানো, তোমরা ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে কি ব্যবহার করেছিলে, যখন তোমরা অজ্ঞ ছিলে?”

(12:90)

অনুবাদ:    তারা চমকে উঠে বললো, “হায় তুমিই ইউসুফ নাকি?” সে বললো, “হ্যাঁ, আমি ইউসুফ এবং এই আমার সহোদর। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আসলে কেউ যদি তাকওয়া ও সবর অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহর কাছে এ ধরণের সৎলোকদের কর্মফল নষ্ট হয়ে যায় না।”

(12:91)

অনুবাদ:    তারা বললো, “আল্লাহর কসম, আল্লাহ‌ তোমাকে আমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং যথার্থই আমরা অপরাধী ছিলাম।”

(12:92)

অনুবাদ:    সে জবাব দিল, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ‌ তোমাদের মাফ করে দিন। তিনি সবার প্রতি অনুগ্রহকারী।

(12:93)

অনুবাদ:    যাও, আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার পিতার চেহারার ওপর রেখো, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের সমস্ত পরিবার-পরিজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”

(12:94)

অনুবাদ:    কাফেলাটি যখন (মিসর থেকে) রওয়ানা দিল তখন তাদের বাপ (কেনানে) বললো, “আমি ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি, তোমরা যেন আমাকে একথা বলো না যে, বুড়ো বয়সে আমার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে।”

(12:95)

অনুবাদ:    ঘরের লোকেরা বললো, “আল্লাহর কসম, আপনি এখনো নিজের সেই পুরাতন পাগলামি নিয়েই আছেন।”

(12:96)

অনুবাদ:    তারপর যখন সুখবর বহনকারী এলো তখন সে ইউসুফের জামা ইয়াকূবের চেহারার ওপর রাখলো এবং অকস্মাত তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো। তখন সে বললো, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সব কথা জানি যা তোমরা জানো না?”

(12:97)

অনুবাদ:    সবাই বলে উঠলো, “আব্বাজান। আপনি আমাদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করুন, সত্যিই আমরা অপরাধী ছিলাম।”

(12:98)

অনুবাদ:    তিনি বললেন, “আমি আমার রবের কাছে তোমাদের মাগফেরাতের জন্য আবেদন জানাবো, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”

(12:99)

অনুবাদ:    তারপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছলো তখন সে নিজের বাপ-মাকে নিজের কাছে বসালো এবং (নিজের সমগ্র পরিবার-পরিজনকে) বললো, “চলো, এবার শহরে চলো, আল্লাহ চাহেতো শান্তি ও নিরপত্তার মধ্যে বসবাস করবে।”

(12:100)

অনুবাদ:    (শহরে প্রবেশ করার পর) সে নিজের বাপ-মাকে উঠিয়ে নিজের পাশে সিংহাসনে বসালো এবং সবাই তার সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিজদায় ঝুঁকে পড়লো। ইউসুফ বললো, “আব্বাজান! আমি ইতিপূর্বে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম এ হচ্ছে তার তা’বীর। আমার রব তাকে সত্য পরিণত করেছেন। আমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে তিনি আমাকে কারাগার থেকে বের করেছেন এবং আপনাদেরকে মরু অঞ্চল থেকে এনে আমার সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন, অথচ শয়তান আমার এবং আমার ভাইদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। আসলে আমার রব অননুভূত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করেন। নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছু জানেন ও সুগভীর প্রজ্ঞার অধিকারী।

(12:101)

অনুবাদ:    হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো এবং আমাকে কথার গভীরে প্রবেশ করা শিখিয়েছো। হে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়ায় ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক। ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো।”

(12:102)

অনুবাদ:    হে মুহাম্মাদ! এ কাহিনী অদৃশ্যলোকের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি। নয়তো, তুমি তখন উপস্থিত ছিলে না যখন ইউসুফের ভাইয়েরা একজোট হয়ে যড়যন্ত্র করেছিল।

(12:103)

অনুবাদ:    কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না।

(12:104)

অনুবাদ:    অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না। এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়।

(12:105)

অনুবাদ:    আকাশসমুহে ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো তারা অতিক্রম করে যায় কিন্তু সেদিকে একটুও দৃষ্টিপাত করে না।

(12:106)

অনুবাদ:    তাদের বেশীর ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।

(12:107)

অনুবাদ:    তারা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আল্লাহর আযাবের কোন আকস্মিক আক্রমণ তাদেরকে গ্রাস করে নেবে না অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে তাদের ওপর সহসা কিয়ামত এসে যাবে না?

(12:108)

অনুবাদ:    তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাওঃ আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও। আর আল্লাহ পাক-পবিত্র এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

(12:109)

অনুবাদ:    হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি যে নবীদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাঁরা সবাই মানুষই ছিল, এসব জনবসতিরই অধিবাসী ছিল এবং তাঁদের কাছেই আমি অহী পাঠাতে থেকেছি। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্বে যেসব জাতি চলে গেছে তাদের পরিণাম দেখেনি? নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের আবাস তাদের জন্য আরো বেশী ভালো যারা (নবীর কথা মেনে নিয়ে) তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। এখনো কি তোমরা বুঝবে না?

(12:110)

অনুবাদ:    (আগের নবীদের সাথেও এমনটি হতে থেকেছে। অর্থাৎ তাঁরা দীর্ঘদিন উপদেশ দিয়ে গেছেন কিন্তু লোকেরা তাঁদের কথা শোনেনি।) এমনকি যখন নবীরা লোকদের থেকে হতাশ হয়ে গেলো এবং লোকেরাও ভাবলো তাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছিল তখন অকস্মাত আমার সাহায্য নবীদের কাছে পৌঁছে গেলো। তারপর এ ধরনের সময় যখন এসে যায় তখন আমার নিয়ম হচ্ছে, যাকে আমি চাই তাকে রক্ষা করি এবং অপরাধীদের প্রতি আমার আযাব তো রদ করা যেতে পারে না।

(12:111)

অনুবাদ:    পূর্ববর্তী লোকদের এ কাহিনীর মধ্যে বুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। কুরআনে এ যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে এগুলো বানোয়াট কথা নয় বরং এগুলো ইতিপূর্বে এসে যাওয়া কিতাবগুলোতে বর্ণিত সত্যের সমর্থন এবং সবকিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।



বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

পারিবারিক সুখ শান্তির জন্য দোয়া।

 আল কুরআন, ২৫  আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪ وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ ا...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ