Text Message

১৮ মে ২০২১

১২ ইউসুফ

  ১২-ইউসুফ



(12:0)

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ




অনুবাদ:    পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে




(12:1)

الٓرٰ١۫ تِلْكَ اٰیٰتُ الْكِتٰبِ الْمُبِیْنِ۫




অনুবাদ:    আলিফ-লাম-র। এগুলো এমন কিতাবের আয়াত যা নিজের বক্তব্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে।




(12:2)

اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ قُرْءٰنًا عَرَبِیًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ




অনুবাদ:    আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি, যাতে তোমরা (আরববাসীরা) একে ভালোভাবে বুঝতে পারো।




(12:3)

نَحْنُ نَقُصُّ عَلَیْكَ اَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَاۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ هٰذَا الْقُرْاٰنَ١ۖۗ وَ اِنْ كُنْتَ مِنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الْغٰفِلِیْنَ




অনুবাদ:    হে মুহাম্মাদ! আমি এ কুরআনকে তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে পাঠিয়ে উত্তম পদ্ধতিতে ঘটনাবলী ও তত্ত্বকথা তোমার কাছে বর্ণনা করছি। নয়তো ইতিপূর্বে তুমি (এসব জিনিস থেকে) একেবারেই বেখবর ছিলে।




(12:4)

اِذْ قَالَ یُوْسُفُ لِاَبِیْهِ یٰۤاَبَتِ اِنِّیْ رَاَیْتُ اَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَّ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ رَاَیْتُهُمْ لِیْ سٰجِدِیْنَ




অনুবাদ:    এটা সেই সময়ের কথা, যখন ইউসুফ তাঁর বাপকে বললোঃ “আব্বাজান! আমি স্বপ্ন দেখেছি, এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চাঁদ আমাকে সিজদা করছে।”




(12:5)

قَالَ یٰبُنَیَّ لَا تَقْصُصْ رُءْیَاكَ عَلٰۤى اِخْوَتِكَ فَیَكِیْدُوْا لَكَ كَیْدًا١ؕ اِنَّ الشَّیْطٰنَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌ




অনুবাদ:    জবাবে তাঁর বাপ বললোঃ “হে পুত্র! তোমার এ স্বপ্ন তোমার ভাইদেরকে শুনাবে না; শুনালে তারা তোমার ক্ষতি করার জন্য পেছনে লাগবে। আসলে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু




(12:6)

وَ كَذٰلِكَ یَجْتَبِیْكَ رَبُّكَ وَ یُعَلِّمُكَ مِنْ تَاْوِیْلِ الْاَحَادِیْثِ وَ یُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكَ وَ عَلٰۤى اٰلِ یَعْقُوْبَ كَمَاۤ اَتَمَّهَا عَلٰۤى اَبَوَیْكَ مِنْ قَبْلُ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ١ؕ اِنَّ رَبَّكَ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ۠




অনুবাদ:    এবং ঠিক এমনটিই হবে (যেমনটি তুমি স্বপ্নে দেখেছো যে,) তোমার রব তোমাকে (তাঁর কাজের জন্য) নির্বাচিত করবেন এবং তোমাকে কথার মর্মমূলে পৌঁছানো শেখাবেন আর তোমার প্রতি ও ইয়াকূবের পরিবারের প্রতি তাঁর নিয়ামত ঠিক তেমনিভাবে পূর্ণ করবেন যেমন এর আগে তিনি তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি করেছেন। নিঃসন্দেহে তোমার রব সর্বজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়।”




(12:7)

لَقَدْ كَانَ فِیْ یُوْسُفَ وَ اِخْوَتِهٖۤ اٰیٰتٌ لِّلسَّآئِلِیْنَ




অনুবাদ:    আসলে ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের ঘটনার মধ্যে এ প্রশ্নকারীদের জন্য বড় বড় নিদর্শন রয়েছে।




(12:8)

اِذْ قَالُوْا لَیُوْسُفُ وَ اَخُوْهُ اَحَبُّ اِلٰۤى اَبِیْنَا مِنَّا وَ نَحْنُ عُصْبَةٌ١ؕ اِنَّ اَبَانَا لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنِۚۖ




অনুবাদ:    এ ঘটনা এভাবে শুরু হয়ঃ তাঁর ভাইয়েরা পরস্পর বলাবলি করলো, “এ ইউসুফ ও তাঁর ভাই, এরা দু’জন আমাদের পিতার কাছে আমাদের সবার চাইতে বেশী প্রিয়, অথচ আমরা একটি পূর্ণ সংঘবদ্ধ দল। সত্যি বলতে কি আমাদের পিতা একেবারেই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।




(12:9)

اِ۟قْتُلُوْا یُوْسُفَ اَوِ اطْرَحُوْهُ اَرْضًا یَّخْلُ لَكُمْ وَجْهُ اَبِیْكُمْ وَ تَكُوْنُوْا مِنْۢ بَعْدِهٖ قَوْمًا صٰلِحِیْنَ




অনুবাদ:    চলো আমরা ইউসুফকে মেরে ফেলি অথবা তাকে কোথাও ফেলে দেই, যাতে আমাদের পিতার দৃষ্টি কেবল আমাদের দিকেই ফিরে আসে। এ কাজটি শেষ করে তারপর তোমরা ভালো লোক হয়ে যাবে।”




(12:10)

قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوْا یُوْسُفَ وَ اَلْقُوْهُ فِیْ غَیٰبَتِ الْجُبِّ یَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّیَّارَةِ اِنْ كُنْتُمْ فٰعِلِیْنَ




অনুবাদ:    এ কথায় তাদের একজন বললো, “ইউসুফকে মেরে ফেলো না। যদি কিছু করতেই হয় তাহলে তাঁকে কোন অন্ধ কূপে ফেলে দাও, আসা-যাওয়ার পথে কোন কাফেলা তাঁকে তুলে নিয়ে যাবে।”




(12:11)

قَالُوْا یٰۤاَبَانَا مَا لَكَ لَا تَاْمَنَّا عَلٰى یُوْسُفَ وَ اِنَّا لَهٗ لَنٰصِحُوْنَ




অনুবাদ:    (এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে) তারা তাদের বাপকে গিয়ে বললো, “আব্বাজান! কি ব্যাপার, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদের ওপর ভরসা করেন না? অথচ আমরা তাঁর সত্যিকার শুভাকাংখী।




(12:12)

اَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا یَّرْتَعْ وَ یَلْعَبْ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ




অনুবাদ:    আগামীকাল তাঁকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, সে কিছু ফলমূল খাবে এবং দৌড়ঝাঁপ করে মন চাঙ্গা করবে। আমরা তাঁর হেফাজত করবো।”




(12:13)

قَالَ اِنِّیْ لَیَحْزُنُنِیْۤ اَنْ تَذْهَبُوْا بِهٖ وَ اَخَافُ اَنْ یَّاْكُلَهُ الذِّئْبُ وَ اَنْتُمْ عَنْهُ غٰفِلُوْنَ




অনুবাদ:    বাপ বললো, “তোমরা তাঁকে নিয়ে যাবে, এটা আমাকে কষ্ট দেবে এবং আমার আশঙ্কা হয়, তোমরা তাঁর প্রতি অমনোযোগী থাকবে এবং নেকড়ে তাঁকে খেয়ে ফেলবে।”




(12:14)

قَالُوْا لَئِنْ اَكَلَهُ الذِّئْبُ وَ نَحْنُ عُصْبَةٌ اِنَّاۤ اِذًا لَّخٰسِرُوْنَ




অনুবাদ:    তারা জবাব দিল, “যদি আমাদের সংঘবদ্ধ দল থাকতে তাকে নেকড়ে খেয়ে ফেলে তাহলে তো আমরা হবো বড়ই অকর্মন্য।”




(12:15)

فَلَمَّا ذَهَبُوْا بِهٖ وَ اَجْمَعُوْۤا اَنْ یَّجْعَلُوْهُ فِیْ غَیٰبَتِ الْجُبِّ١ۚ وَ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُمْ بِاَمْرِهِمْ هٰذَا وَ هُمْ لَا یَشْعُرُوْنَ




অনুবাদ:    এভাবে চাপ দিয়ে যখন তারা তাঁকে নিয়ে গেলো এবং সিদ্ধান্ত করলো তাঁকে একটি অন্ধ কূপে ফেলে দেবে তখন আমি ইউসুফকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলাম, “এক সময় আসবে যখন তুমি তাদেরকে তাদের এ কৃতকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাদের কাজের ফলাফল সম্পর্কে তারা জানে না।”




(12:16)

وَ جَآءُوْۤ اَبَاهُمْ عِشَآءً یَّبْكُوْنَؕ




অনুবাদ:    রাতে তারা কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে এসে




(12:17)

قَالُوْا یٰۤاَبَانَاۤ اِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَ تَرَكْنَا یُوْسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَاَكَلَهُ الذِّئْبُ١ۚ وَ مَاۤ اَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَ لَوْ كُنَّا صٰدِقِیْنَ




অনুবাদ:    বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়ে বাঘ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।”




(12:18)

وَ جَآءُوْ عَلٰى قَمِیْصِهٖ بِدَمٍ كَذِبٍ١ؕ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًا١ؕ فَصَبْرٌ جَمِیْلٌ١ؕ وَ اللّٰهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ




অনুবাদ:    তারা ইউসুফের জামায় মিথ্যা রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এসেছিল। একথা শুনে তাদের বাপ বললো, “বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি বড় কাজকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক আছে, আমি সবর করবো এবং খুব ভালো করেই সবর করবো। তোমরা যে কথা সাজাচ্ছো তার ওপর একমাত্র আল্লাহ‌র কাছেই সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।”




(12:19)

وَ جَآءَتْ سَیَّارَةٌ فَاَرْسَلُوْا وَارِدَهُمْ فَاَدْلٰى دَلْوَهٗ١ؕ قَالَ یٰبُشْرٰى هٰذَا غُلٰمٌ١ؕ وَ اَسَرُّوْهُ بِضَاعَةً١ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِمَا یَعْمَلُوْنَ




অনুবাদ:    ওদিকে একটি কাফেলা এলো। তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পানি নেবার জন্য পাঠালো। সে কূয়ার মধ্যে পানির ডোল নামিয়ে দিল। সে (ইউসুফকে দেখে) বলে উঠলো, “কী সুখবর! এখানে তো দেখছি একটি বালক।” তারা তাকে পণ্য দ্রব্য হিসেবে লুকিয়ে ফেললো। অথচ তারা যা কিছু করছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত ছিলেন।




(12:20)

وَ شَرَوْهُ بِثَمَنٍۭ بَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُوْدَةٍ١ۚ وَ كَانُوْا فِیْهِ مِنَ الزَّاهِدِیْنَ۠




অনুবাদ:    শেষে তারা তাঁকে সামান্য দামে কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল। আর তার দামের ব্যাপারে তারা বেশী আশা করছিল না।




(12:21)

وَ قَالَ الَّذِی اشْتَرٰىهُ مِنْ مِّصْرَ لِامْرَاَتِهٖۤ اَكْرِمِیْ مَثْوٰىهُ عَسٰۤى اَنْ یَّنْفَعَنَاۤ اَوْ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا١ؕ وَ كَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِیُوْسُفَ فِی الْاَرْضِ١٘ وَ لِنُعَلِّمَهٗ مِنْ تَاْوِیْلِ الْاَحَادِیْثِ١ؕ وَ اللّٰهُ غَالِبٌ عَلٰۤى اَمْرِهٖ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ




অনুবাদ:    মিসরে যে ব্যক্তি তাঁকে কিনেছিল সে তার স্ত্রীকে বললো, “একে ভালোভাবে রাখো, বিচিত্র নয় সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা আমরা তাকে পুত্র বানিয়ে নেবো।” এভাবে আমি ইউসুফের জন্য সে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভের পথ বের করে দিলাম এবং তাঁকে সমস্যা ও বিষয়াবলী অনুধাবন করার জন্য যথোপযোগী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলাম। আল্লাহ্‌ তাঁর কাজ সম্পন্ন করেই থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।




(12:22)

وَ لَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗۤ اٰتَیْنٰهُ حُكْمًا وَّ عِلْمًا١ؕ وَ كَذٰلِكَ نَجْزِی الْمُحْسِنِیْنَ




অনুবাদ:    আর যখন সে তাঁর পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাঁকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।




(12:23)

وَ رَاوَدَتْهُ الَّتِیْ هُوَ فِیْ بَیْتِهَا عَنْ نَّفْسِهٖ وَ غَلَّقَتِ الْاَبْوَابَ وَ قَالَتْ هَیْتَ لَكَ١ؕ قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اِنَّهٗ رَبِّیْۤ اَحْسَنَ مَثْوَایَ١ؕ اِنَّهٗ لَا یُفْلِحُ الظّٰلِمُوْنَ




অনুবাদ:    যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, “চলে এসো।” ইউসুফ বললো, “আমি আল্লাহ‌র আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি এ কাজ করবো!)। এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।”




(12:24)

وَ لَقَدْ هَمَّتْ بِهٖ١ۚ وَ هَمَّ بِهَا لَوْ لَاۤ اَنْ رَّاٰ بُرْهَانَ رَبِّهٖ١ؕ كَذٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْٓءَ وَ الْفَحْشَآءَ١ؕ اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِیْنَ




অনুবাদ:    মহিলাটি তাঁর দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো। এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি। আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।




(12:25)

وَ اسْتَبَقَا الْبَابَ وَ قَدَّتْ قَمِیْصَهٗ مِنْ دُبُرٍ وَّ اَلْفَیَا سَیِّدَهَا لَدَا الْبَابِ١ؕ قَالَتْ مَا جَزَآءُ مَنْ اَرَادَ بِاَهْلِكَ سُوْٓءًا اِلَّاۤ اَنْ یُّسْجَنَ اَوْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ




অনুবাদ:    শেষ পর্যন্ত ইউসুফ ও সে আগে-পিছে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো এবং সে পেছন থেকে ইউসুফের জামা (টেনে ধরে) ছিঁড়ে ফেললো। উভয়েই দরজার ওপর তার স্বামীকে উপস্থিত পেলো। তাকে দেখতেই মহিলাটি বলতে লাগলো, “তোমার পরিবারের প্রতি যে অসৎ কামনা পোষণ করে তার কি শাস্তি হতে পারে? তাকে কারাগারে প্রেরণ করা অথবা কঠোর শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কি শাস্তি দেয়া যেতে পারে?”




(12:26)

قَالَ هِیَ رَاوَدَتْنِیْ عَنْ نَّفْسِیْ وَ شَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ اَهْلِهَا١ۚ اِنْ كَانَ قَمِیْصُهٗ قُدَّ مِنْ قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَ هُوَ مِنَ الْكٰذِبِیْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “সে-ই আমাকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছিল।” মহিলাটির নিজের পরিবারের একজন (পদ্ধতিগত) সাক্ষ্য দিল, “যদি ইউসুফের জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যুক




(12:27)

وَ اِنْ كَانَ قَمِیْصُهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَ هُوَ مِنَ الصّٰدِقِیْنَ




অনুবাদ:    আর যদি তাঁর জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে সত্যবাদী।”




(12:28)

فَلَمَّا رَاٰ قَمِیْصَهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنْ كَیْدِكُنَّ١ؕ اِنَّ كَیْدَكُنَّ عَظِیْمٌ




অনুবাদ:    স্বামী যখন দেখলো ইউসুফের জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া তখন সে বললো, “এসব তোমাদের মেয়ে লোকদের ছলনা। সত্যিই বড়ই ভয়ানক তোমাদের ছলনা!




(12:29)

یُوْسُفُ اَعْرِضْ عَنْ هٰذَا١ٚ وَ اسْتَغْفِرِیْ لِذَنْۢبِكِ١ۖۚ اِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخٰطِئِیْنَ۠




অনুবাদ:    হে ইউসুফ! এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করো। আর হে নারী! তুমি নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, তুমিই আসল অপরাধী।”-(ক)




(12:30)

وَ قَالَ نِسْوَةٌ فِی الْمَدِیْنَةِ امْرَاَتُ الْعَزِیْزِ تُرَاوِدُ فَتٰىهَا عَنْ نَّفْسِهٖ١ۚ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا١ؕ اِنَّا لَنَرٰىهَا فِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ




অনুবাদ:    শহরের মেয়েরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, “আযীযের স্ত্রী তার যুবক গোলামের পেছনে পড়ে আছে, প্রেম তাকে উন্মাদ করে দিয়েছে। আমাদের মতে সে পরিষ্কার ভুল করে যাচ্ছে।”




(12:31)

فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ اَرْسَلَتْ اِلَیْهِنَّ وَ اَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَاً وَّ اٰتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّیْنًا وَّ قَالَتِ اخْرُجْ عَلَیْهِنَّ١ۚ فَلَمَّا رَاَیْنَهٗۤ اَكْبَرْنَهٗ وَ قَطَّعْنَ اَیْدِیَهُنَّ وَ قُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا هٰذَا بَشَرًا١ؕ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا مَلَكٌ كَرِیْمٌ




অনুবাদ:    সে যখন তাদের এ শঠতাপূর্ণ কথা শুনলো তখন তাদেরকে ডেকে পাঠালো। তাদের জন্য হেলান দিয়ে বসার মজলিসের আয়োজন করলো। খাওয়ার বৈঠকে তাদের সবার সামনে একটি করে ছুরি রাখলো। (তারপর ঠিক সেই মুহূর্তে যখন তারা ফল কেটে কেটে খাচ্ছিল) সে ইউসুফকে তাদের সামনে বের হয়ে আসার ইশারা করলো। যখন ঐ মেয়েদের দৃষ্টি তাঁর ওপর পড়লো, তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলো এবং নিজের হাত কেটে ফেললো। তারা বললো, “আল্লাহর কী অপার মহিমা! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা।”




(12:32)

قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِیْ لُمْتُنَّنِیْ فِیْهِ١ؕ وَ لَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ فَاسْتَعْصَمَ١ؕ وَ لَئِنْ لَّمْ یَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُهٗ لَیُسْجَنَنَّ وَ لَیَكُوْنًا مِّنَ الصّٰغِرِیْنَ




অনুবাদ:    আযীযের স্ত্রী বললো, “দেখলে তো! এ হলো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে তোমরা আমার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করতে। অবশ্যই আমি তাঁকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করেছে। যদি সে আমার কথা না মেনে নেয় তাহলে কারারুদ্ধ হবে এবং নিদারুণভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।”




(12:33)

قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَیَّ مِمَّا یَدْعُوْنَنِیْۤ اِلَیْهِ١ۚ وَ اِلَّا تَصْرِفْ عَنِّیْ كَیْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَیْهِنَّ وَ اَكُنْ مِّنَ الْجٰهِلِیْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “হে আমার রব! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”




(12:34)

فَاسْتَجَابَ لَهٗ رَبُّهٗ فَصَرَفَ عَنْهُ كَیْدَهُنَّ١ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ




অনুবাদ:    ---তাঁর রব তাঁর দোয়া কবুল করলেন এবং তাদের অপকৌশল থেকে তাঁকে রক্ষা করলেন। অবশ্যি তিনি সবার কথা শোনেন এবং সবকিছু জানেন।




(12:35)

ثُمَّ بَدَا لَهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ مَا رَاَوُا الْاٰیٰتِ لَیَسْجُنُنَّهٗ حَتّٰى حِیْنٍ۠




অনুবাদ:    তারপর তারা মনে করলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে কারারুদ্ধ করতে হবে, অথচ তারা (তার নিষ্কুলুষতা এবং নিজেদের স্ত্রীদের অসতিপনার) সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দেখে নিয়েছিল।




(12:36)

وَ دَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَیٰنِ١ؕ قَالَ اَحَدُهُمَاۤ اِنِّیْۤ اَرٰىنِیْۤ اَعْصِرُ خَمْرًا١ۚ وَ قَالَ الْاٰخَرُ اِنِّیْۤ اَرٰىنِیْۤ اَحْمِلُ فَوْقَ رَاْسِیْ خُبْزًا تَاْكُلُ الطَّیْرُ مِنْهُ١ؕ نَبِّئْنَا بِتَاْوِیْلِهٖ١ۚ اِنَّا نَرٰىكَ مِنَ الْمُحْسِنِیْنَ




অনুবাদ:    কারাগারে তার সাথে আরো দু’টি ভৃত্যও প্রবেশ করলো। একদিন তাদের একজন তাঁকে বললো, “আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি মদ তৈরী করছি।” অন্যজন বললো, “আমি দেখলাম আমার মাথায় রুটি রাখা আছে এবং পাখিরা তা খাচ্ছে।” তারা উভয়ে বললো, “আমাদের এর তা’বীর বলে দিন। আমরা আপনাকে সৎকর্মশীল হিসেবে পেয়েছি।”




(12:37)

قَالَ لَا یَاْتِیْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقٰنِهٖۤ اِلَّا نَبَّاْتُكُمَا بِتَاْوِیْلِهٖ قَبْلَ اَنْ یَّاْتِیَكُمَا١ؕ ذٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِیْ رَبِّیْ١ؕ اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফ বললোঃ “এখানে তোমরা যে খাবার পাও তা আসার আগেই আমি তোমাদের এ স্বপ্নগুলোর অর্থ বলে দেবো। আমার রব আমাকে যা দান করেছেন এ জ্ঞান তারই অন্তর্ভুক্ত। আসল ব্যাপার হচ্ছে, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং আখেরাত অস্বীকার করে তাদের পথ পরিহার করে।




(12:38)

وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ١ؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللّٰهِ مِنْ شَیْءٍ١ؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ عَلَیْنَا وَ عَلَى النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ




অনুবাদ:    আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের পথ অবলম্বন করেছি। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। আসলে এটা আমাদের এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ (যে, তিনি আমাদের তাঁর ছাড়া আর কারোর বান্দা হিসেবে তৈরী করেননি) কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।




(12:39)

یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللّٰهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُؕ




অনুবাদ:    হে জেলখানার সাথীরা! তোমারা নিজেরাই ভেবে দেখো, ভিন্ন ভিন্ন বহু সংখ্যক রব ভালো, না এক আল্লাহ, যিনি সবার ওপর বিজয়ী।”




(12:40)

مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ١ؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ١ؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ١ؕ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ




অনুবাদ:    তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের বন্দেগী করছো তারা শুধুমাত্র কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃ-পুরুষরা রেখেছো, আল্লাহ‌ এগুলোর পক্ষে কোন প্রমাণ পাঠাননি। শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর নেই। তাঁর হুকুম- তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না। এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।




(12:41)

یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ اَمَّاۤ اَحَدُكُمَا فَیَسْقِیْ رَبَّهٗ خَمْرًا١ۚ وَ اَمَّا الْاٰخَرُ فَیُصْلَبُ فَتَاْكُلُ الطَّیْرُ مِنْ رَّاْسِهٖ١ؕ قُضِیَ الْاَمْرُ الَّذِیْ فِیْهِ تَسْتَفْتِیٰنِؕ




অনুবাদ:    হে জেলখানার সাথীরা! তোমাদের স্বপ্নের তা’বীর হচ্ছে, তোমাদের একজন তার নিজের প্রভুকে (মিসর রাজ) মদ পান করাবে আর দ্বিতীয় জনকে শূলবিদ্ধ করা হবে এবং পাখি তার মাথা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। তোমরা যে কথা জিজ্ঞেস করছিলে তার ফায়সালা হয়ে গেছে।




(12:42)

وَ قَالَ لِلَّذِیْ ظَنَّ اَنَّهٗ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِیْ عِنْدَ رَبِّكَ١٘ فَاَنْسٰىهُ الشَّیْطٰنُ ذِكْرَ رَبِّهٖ فَلَبِثَ فِی السِّجْنِ بِضْعَ سِنِیْنَؕ۠




অনুবাদ:    আবার তাদের মধ্য থেকে যার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে ইউসুফ তাকে বললোঃ “তোমার প্রভুকে (মিসরের বাদশাহ) আমার কথা বলো।” কিন্তু শয়তান তাকে এমন গাফেল করে দিল যে, সে তার প্রভুকে (মিসরের বাদশাহ) তার কথা বলতে ভুলে গেলো। ফলে ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে পড়ে রইলো।




(12:43)

وَ قَالَ الْمَلِكُ اِنِّیْۤ اَرٰى سَبْعَ بَقَرٰتٍ سِمَانٍ یَّاْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّ سَبْعَ سُنْۢبُلٰتٍ خُضْرٍ وَّ اُخَرَ یٰبِسٰتٍ١ؕ یٰۤاَیُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِیْ فِیْ رُءْیَایَ اِنْ كُنْتُمْ لِلرُّءْیَا تَعْبُرُوْنَ




অনুবাদ:    একদিন বাদশাহ বললো, “আমি স্বপ্ন দেখেছি, সাতটি মোটা গাভীকে সাতটি পাতলা গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুকনো শীষ। হে সভাসদবৃন্দ! আমাকে এ স্বপ্নের তা’বীর বলে দাও, যদি তোমরা স্বপ্নের মানে বুঝে থাকো।”




(12:44)

قَالُوْۤا اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ١ۚ وَ مَا نَحْنُ بِتَاْوِیْلِ الْاَحْلَامِ بِعٰلِمِیْنَ




অনুবাদ:    লোকেরা বললো, “এসব তো অর্থহীন স্বপ্ন, আর আমরা এ ধরনের স্বপ্নের মানে জানি না।”




(12:45)

وَ قَالَ الَّذِیْ نَجَا مِنْهُمَا وَ ادَّكَرَ بَعْدَ اُمَّةٍ اَنَا اُنَبِّئُكُمْ بِتَاْوِیْلِهٖ فَاَرْسِلُوْنِ




অনুবাদ:    সেই দু’জন কয়েদীর মধ্য থেকে যে বেঁচে গিয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে এখন যার মনে পড়েছিল, সে বললো, “আমি আপনাদের এর তা’বীর বলে দিচ্ছি, আমাকে একটু (কারাগারে ইউসুফের কাছে) পাঠিয়ে দিন।”




(12:46)

یُوْسُفُ اَیُّهَا الصِّدِّیْقُ اَفْتِنَا فِیْ سَبْعِ بَقَرٰتٍ سِمَانٍ یَّاْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّ سَبْعِ سُنْۢبُلٰتٍ خُضْرٍ وَّ اُخَرَ یٰبِسٰتٍ١ۙ لَّعَلِّیْۤ اَرْجِعُ اِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ یَعْلَمُوْنَ




অনুবাদ:    সে গিয়ে বললো, “হে সত্যবাদিতার প্রতীক ইউসুফ! আমাকে এ স্বপ্নের অর্থ বলে দাওঃ সাতটি মোটা গাভীকে সাতটি পাতলা গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি শীষ সবুজ ও সাতটি শীষ শুকনো সম্ভবত আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারবো এবং তারা জানতে পারবে।




(12:47)

قَالَ تَزْرَعُوْنَ سَبْعَ سِنِیْنَ دَاَبًا١ۚ فَمَا حَصَدْتُّمْ فَذَرُوْهُ فِیْ سُنْۢبُلِهٖۤ اِلَّا قَلِیْلًا مِّمَّا تَاْكُلُوْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “তোমরা সাত বছর পর্যন্ত লাগাতার চাষাবাদ করতে থাকবে। এ সময় তোমরা যে ফসল কাটবে তা থেকে সামান্য পরিমাণ তোমাদের আহারের প্রয়োজনে বের করে নেবে এবং বাদবাকি সব শীষ সমেত রেখে দেবে।




(12:48)

ثُمَّ یَاْتِیْ مِنْۢ بَعْدِ ذٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ یَّاْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ اِلَّا قَلِیْلًا مِّمَّا تُحْصِنُوْنَ




অনুবাদ:    তারপর সাতটি বছর আসছে বড়ই কঠিন। এ সময়ের জন্য তোমরা যে শস্য জমা করবে তা সমস্ত এ সময়ে খেয়ে ফেলা হবে। যদি কিছু বেঁচে যায় তাহলে তা হবে কেবলমাত্র সেটুকুই যা তোমরা সংরক্ষণ করবে।




(12:49)

ثُمَّ یَاْتِیْ مِنْۢ بَعْدِ ذٰلِكَ عَامٌ فِیْهِ یُغَاثُ النَّاسُ وَ فِیْهِ یَعْصِرُوْنَ۠




অনুবাদ:    এরপর আবার এক বছর এমন আসবে যখন রহমতের বৃষ্টি ধারার মাধ্যমে মানুষের আবেদন পূর্ণ করা হবে এবং তারা রস নিংড়াবে।”




(12:50)

وَ قَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِیْ بِهٖ١ۚ فَلَمَّا جَآءَهُ الرَّسُوْلُ قَالَ ارْجِعْ اِلٰى رَبِّكَ فَسْئَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ الّٰتِیْ قَطَّعْنَ اَیْدِیَهُنَّ١ؕ اِنَّ رَبِّیْ بِكَیْدِهِنَّ عَلِیْمٌ




অনুবাদ:    বাদশাহ বললো, “তাঁকে আমার কাছে আনো।” কিন্তু বাদশাহর দূত যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছল তখন সে বললো, তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে মহিলারা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের ব্যাপারটা কি? আমার রব তো তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত।”




(12:51)

قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ اِذْ رَاوَدْتُّنَّ یُوْسُفَ عَنْ نَّفْسِهٖ١ؕ قُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا عَلِمْنَا عَلَیْهِ مِنْ سُوْٓءٍ١ؕ قَالَتِ امْرَاَتُ الْعَزِیْزِ الْئٰنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ١٘ اَنَا رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ وَ اِنَّهٗ لَمِنَ الصّٰدِقِیْنَ




অনুবাদ:    একথায় বাদশাহ সেই মহিলাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা যখন ইউসুফকে অসৎকাজে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলে তোমাদের তখনকার অভিজ্ঞতা কি?” সবাই এক বাক্যে বললো, “আল্লাহর কী অপার মহিমা! আমরা তার মধ্যে অসৎ প্রবণতার গন্ধই পাইনি।” আযীযের স্ত্রী বলে উঠলো, “এখন সত্য প্রকাশ হয়ে গেছে। আমিই তাঁকে ফুসলাবার চেষ্টা করেছিলাম, নিঃসন্দেহে সে একদম সত্যবাদী।”




(12:52)

ذٰلِكَ لِیَعْلَمَ اَنِّیْ لَمْ اَخُنْهُ بِالْغَیْبِ وَ اَنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِیْ كَیْدَ الْخَآئِنِیْنَ




অনুবাদ:    (ইউসুফ বললোঃ) “এ থেকে আমার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আযীয জানতে পারুক, আমি তার অবর্তমানে তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং আল্লাহ‌ বিশ্বাসঘাতকতাকারীদের চক্রান্ত সফল করেন না।




(12:53)

وَ مَاۤ اُبَرِّئُ نَفْسِیْ١ۚ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌۢ بِالسُّوْٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیْ١ؕ اِنَّ رَبِّیْ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ




অনুবাদ:    আমি নিজের নফ্‌সকে দোষমুক্ত করছি না। নফ্‌স তো খারাপ কাজ করতে প্ররোচিত করে, তবে যদি কারোর প্রতি আমার রবের অনুগ্রহ হয় সে ছাড়া। অবশ্যি আমার রব বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”




(12:54)

وَ قَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِیْ بِهٖۤ اَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِیْ١ۚ فَلَمَّا كَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّكَ الْیَوْمَ لَدَیْنَا مَكِیْنٌ اَمِیْنٌ




অনুবাদ:    বাদশাহ বললো, “তাঁকে আমার কাছে আনো, আমি তাঁকে একান্তভাবে নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নেব।”ইউসুফ যখন তার সাথে আলাপ করলো, সে বললো, “এখন আপনি আমাদের এখানে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং আপনার আমানতদারীর ওপর পূর্ণ ভরসা আছে।”




(12:55)

قَالَ اجْعَلْنِیْ عَلٰى خَزَآئِنِ الْاَرْضِ١ۚ اِنِّیْ حَفِیْظٌ عَلِیْمٌ




অনুবাদ:    ইউসুফ বললো, “দেশের অর্থ-সম্পদ আমার হাতে সোপর্দ করুন। আমি সংরক্ষণকারী এবং জ্ঞানও রাখি।”(ক)




(12:56)

وَ كَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِیُوْسُفَ فِی الْاَرْضِ١ۚ یَتَبَوَّاُ مِنْهَا حَیْثُ یَشَآءُ١ؕ نُصِیْبُ بِرَحْمَتِنَا مَنْ نَّشَآءُ وَ لَا نُضِیْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِیْنَ




অনুবাদ:    এভাবে আমি পৃথিবীতে ইউসুফের জন্য কর্তৃত্বের পথ পরিষ্কার করেছি। সেখানে সে যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারতো। আমি যাকে ইচ্ছা নিজের রহমতে অভিষিক্ত করি। সৎকর্মশীল লোকদের প্রতিদান আমি নষ্ট করি না।




(12:57)

وَ لَاَجْرُ الْاٰخِرَةِ خَیْرٌ لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ۠




অনুবাদ:    আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া সহকারে কাজ করতে থেকেছে আখেরাতের প্রতিদান তাদের জন্য আরো ভালো।




(12:58)

وَ جَآءَ اِخْوَةُ یُوْسُفَ فَدَخَلُوْا عَلَیْهِ فَعَرَفَهُمْ وَ هُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফের ভাইয়েরা মিসরে এলো এবং তাঁর কাছে হাযির হলো। সে তাদেরকে চিনে ফেললো। কিন্তু তারা তাঁকে চিনতে পারলো না।




(12:59)

وَ لَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُوْنِیْ بِاَخٍ لَّكُمْ مِّنْ اَبِیْكُمْ١ۚ اَلَا تَرَوْنَ اَنِّیْۤ اُوْفِی الْكَیْلَ وَ اَنَا خَیْرُ الْمُنْزِلِیْنَ




অনুবাদ:    তারপর সে যখন তাদের জিনিসপত্র তৈরী করালো তখন চলার সময় তাদেরকে বললো, “তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে আমাদের কাছে আনবে, দেখছো না আমি কেমন পরিমাপ পাত্র ভরে দেই এবং আমি কেমন ভালো অতিথিপরায়ণ?




(12:60)

فَاِنْ لَّمْ تَاْتُوْنِیْ بِهٖ فَلَا كَیْلَ لَكُمْ عِنْدِیْ وَ لَا تَقْرَبُوْنِ




অনুবাদ:    যদি তোমরা তাকে না আনো তাহলে আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন শস্য নেই বরং তোমরা আমার ধারে-কাছেও এসো না।”




(12:61)

قَالُوْا سَنُرَاوِدُ عَنْهُ اَبَاهُ وَ اِنَّا لَفٰعِلُوْنَ




অনুবাদ:    তারা বললো, “আমরা চেষ্টা করবো যাতে আব্বাজান তাঁকে পাঠাতে রাযী হয়ে যান এবং আমরা নিশ্চয়ই এমনটি করবো।”




(12:62)

وَ قَالَ لِفِتْیٰنِهِ اجْعَلُوْا بِضَاعَتَهُمْ فِیْ رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ یَعْرِفُوْنَهَاۤ اِذَا انْقَلَبُوْۤا اِلٰۤى اَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ




অনুবাদ:    ইউসুফ নিজের গোলামদেরকে ইশারা করে বললো, “ওরা শস্যের বিনিময়ে যে অর্থ দিয়েছে তা চুপিসারে ওদের জিনিসপত্রের মধ্যেই রেখে দাও।” ইউসুফ এটা করলো এ আশায় যে, বাড়িতে পৌঁছে তারা নিজেদের ফেরত পাওয়া অর্থ চিনতে পারবে (অথবা এ দানশীলতার ফলে তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে) এবং বিচিত্র নয় যে, তারা আবার ফিরে আসবে।




(12:63)

فَلَمَّا رَجَعُوْۤا اِلٰۤى اَبِیْهِمْ قَالُوْا یٰۤاَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَیْلُ فَاَرْسِلْ مَعَنَاۤ اَخَانَا نَكْتَلْ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ




অনুবাদ:    যখন তারা তাদের বাপের কাছে ফিরে গেলো তখন বললো, “আব্বাজান! আগামীতে আমাদের শস্য দিতে অস্বীকার করা হয়েছে, কাজেই আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা শস্য নিয়ে আসতে পারি এবং অবশ্যি আমরা হেফাজতের জন্য দায়ী থাকবো।”




(12:64)

قَالَ هَلْ اٰمَنُكُمْ عَلَیْهِ اِلَّا كَمَاۤ اَمِنْتُكُمْ عَلٰۤى اَخِیْهِ مِنْ قَبْلُ١ؕ فَاللّٰهُ خَیْرٌ حٰفِظًا١۪ وَّ هُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ




অনুবাদ:    বাপ জবাব দিল, “আমি কি ওর ব্যাপারে তোমাদের ওপর ঠিক তেমনি ভরসা করবো যেমন ইতিপূর্বে তার ভাইয়ের ব্যাপারে করেছিলাম? অবশ্য আল্লাহ সবচেয়ে ভালো হেফাজতকারী এবং তিনি সবচেয়ে বেশী করুণাশীল।”




(12:65)

وَ لَمَّا فَتَحُوْا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوْا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ اِلَیْهِمْ١ؕ قَالُوْا یٰۤاَبَانَا مَا نَبْغِیْ١ؕ هٰذِهٖ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ اِلَیْنَا١ۚ وَ نَمِیْرُ اَهْلَنَا وَ نَحْفَظُ اَخَانَا وَ نَزْدَادُ كَیْلَ بَعِیْرٍ١ؕ ذٰلِكَ كَیْلٌ یَّسِیْرٌ




অনুবাদ:    তারপর যখন তারা নিজেদের জিনিসপত্র খুললো, তারা দেখলো তাদের অর্থও তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে তারা চিৎকার করে উঠলো, “আব্বাজান, আমাদের আর কী চাই! দেখুন এই আমাদের অর্থও আমাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। ব্যস্‌ এবার আমরা যাবো আর নিজেদের পরিজনদের জন্য রসদ নিয়ে আসবো, নিজেদের ভাইয়ের হেফাজতও করবো এবং অতিরিক্ত একটি উট বোঝাই করে শস্যও আনবো, এ পরিমাণ শস্য বৃদ্ধি অতি সহজেই হয়ে যাবে।”




(12:66)

قَالَ لَنْ اُرْسِلَهٗ مَعَكُمْ حَتّٰى تُؤْتُوْنِ مَوْثِقًا مِّنَ اللّٰهِ لَتَاْتُنَّنِیْ بِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ یُّحَاطَ بِكُمْ١ۚ فَلَمَّاۤ اٰتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللّٰهُ عَلٰى مَا نَقُوْلُ وَكِیْلٌ




অনুবাদ:    তাদের বাপ বললো, “আমি কখনোই তাকে তোমাদের সাথে পাঠাবো না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে আমার কাছে অঙ্গীকার করবে। এ মর্মে যে তাকে নিশ্চয়ই আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তবে হ্যাঁ, যদি কোথাও তোমরা ঘেরাও হয়ে যাও তাহলে ভিন্ন কথা।” যখন তারা তার কাছে অঙ্গীকার করলো তখন সে বললো, “দেখো আল্লাহ আমাদের এ কথার রক্ষক।”




(12:67)

وَ قَالَ یٰبَنِیَّ لَا تَدْخُلُوْا مِنْۢ بَابٍ وَّاحِدٍ وَّ ادْخُلُوْا مِنْ اَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ١ؕ وَ مَاۤ اُغْنِیْ عَنْكُمْ مِّنَ اللّٰهِ مِنْ شَیْءٍ١ؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ١ؕ عَلَیْهِ تَوَكَّلْتُ١ۚ وَ عَلَیْهِ فَلْیَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ




অনুবাদ:    তারপর সে বললো, “হে আমার সন্তানরা! মিসরের রাজধানীতে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না বরং বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারি না। তাঁর ছাড়া আর কারোর হুকুম চলে না, তাঁর ওপরই আমি ভরসা করি এবং যার ভরসা করতে হয় তাঁর ওপরই করতে হবে।”




(12:68)

وَ لَمَّا دَخَلُوْا مِنْ حَیْثُ اَمَرَهُمْ اَبُوْهُمْ١ؕ مَا كَانَ یُغْنِیْ عَنْهُمْ مِّنَ اللّٰهِ مِنْ شَیْءٍ اِلَّا حَاجَةً فِیْ نَفْسِ یَعْقُوْبَ قَضٰىهَا١ؕ وَ اِنَّهٗ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنٰهُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ۠




অনুবাদ:    আর ঘটনাক্ষেত্রে তা-ই হলো, যখন তারা নিজেদের বাপের নির্দেশ মতো শহরে (বিভিন্ন দরজা দিয়ে) প্রবেশ করল তখন তার এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আল্লাহর ইচ্ছার মোকাবিলায় কোন কাজে লাগলো না। তবে হ্যাঁ,, ইয়াকূবের মনে যে একটি খটকা ছিল তা দূর করার জন্য সে নিজের মনমতো চেষ্টা করে নিল। অবশ্যি সে আমার দেয়া শিক্ষায় জ্ঞানবান ছিল কিন্তু অধিকাংশ লোক প্রকৃত সত্য জানে না।




(12:69)

وَ لَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى یُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَیْهِ اَخَاهُ قَالَ اِنِّیْۤ اَنَا اَخُوْكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ




অনুবাদ:    তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছলে সে তাঁর সহোদর ভাইকে নিজের কাছে আলাদা করে ডেকে নিল এবং তাকে বললো, “আমি তোমার সেই (হারানো) ভাই, এখন আর সেসব আচরণের জন্য দুঃখ করো না যা এরা করে এসেছে।”




(12:70)

فَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَایَةَ فِیْ رَحْلِ اَخِیْهِ ثُمَّ اَذَّنَ مُؤَذِّنٌ اَیَّتُهَا الْعِیْرُ اِنَّكُمْ لَسٰرِقُوْنَ




অনুবাদ:    যখন ইউসুফ তাদের মালপত্র বোঝাই করাতে লাগলো তখন নিজের ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে নিজের পেয়ালা রেখে দিল। তারপর একজন নকীব চীৎকার করে বললো, “হে যাত্রীদল! তোমরা চোর।”




(12:71)

قَالُوْا وَ اَقْبَلُوْا عَلَیْهِمْ مَّا ذَا تَفْقِدُوْنَ




অনুবাদ:    তারা পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের কি হারিয়ে গেছে?”




(12:72)

قَالُوْا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَ لِمَنْ جَآءَ بِهٖ حِمْلُ بَعِیْرٍ وَّ اَنَا بِهٖ زَعِیْمٌ




অনুবাদ:    সরকারী কর্মচারী বললো, “আমরা বাদশাহর পানপাত্র পাচ্ছি না,” (এবং তাদের জমাদার বললোঃ) “যে ব্যক্তি তা এনে দেবে তার জন্য রয়েছে পুরস্কার এক উট বোঝাই মাল। আমি এর দায়িত্ব নিচ্ছি।”




(12:73)

قَالُوْا تَاللّٰهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ مَّا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِی الْاَرْضِ وَ مَا كُنَّا سٰرِقِیْنَ




অনুবাদ:    এ ভাইয়েরা বললো, “আল্লাহর কসম! তোমরা খুব ভালোভাবেই জানো, আমরা এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে আসিনি এবং চুরি করার মতো লোক আমরা নই।”




(12:74)

قَالُوْا فَمَا جَزَآؤُهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ كٰذِبِیْنَ




অনুবাদ:    তারা বললো, “আচ্ছা, যদি তোমাদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে চোরের কি শাস্তি হবে?”




(12:75)

قَالُوْا جَزَآؤُهٗ مَنْ وُّجِدَ فِیْ رَحْلِهٖ فَهُوَ جَزَآؤُهٗ١ؕ كَذٰلِكَ نَجْزِی الظّٰلِمِیْنَ




অনুবাদ:    তারা জবাব দিল, “তার শাস্তি” যার মালপত্রের মধ্যে ঐ জিনিস পাওয়া যাবে তার শাস্তি হিসেবে তাকেই রেখে দেয়া হবে। আমাদের এখানে তো এটাই এ ধরনের জালেমদের শাস্তির পদ্ধতি।”




(12:76)

فَبَدَاَ بِاَوْعِیَتِهِمْ قَبْلَ وِعَآءِ اَخِیْهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِنْ وِّعَآءِ اَخِیْهِ١ؕ كَذٰلِكَ كِدْنَا لِیُوْسُفَ١ؕ مَا كَانَ لِیَاْخُذَ اَخَاهُ فِیْ دِیْنِ الْمَلِكِ اِلَّاۤ اَنْ یَّشَآءَ اللّٰهُ١ؕ نَرْفَعُ دَرَجٰتٍ مَّنْ نَّشَآءُ١ؕ وَ فَوْقَ كُلِّ ذِیْ عِلْمٍ عَلِیْمٌ




অনুবাদ:    তখন ইউসুফ নিজের ভাইয়ের আগে তাদের থলের তল্লাশী শুরু করে দিল। তারপর নিজের ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে হারানো জিনিস বের করে ফেললো। ---এভাবে আমি নিজের কৌশলের মাধ্যমে ইউসুফকে সহায়তা করলাম। বাদশাহর দ্বীন (অর্থাৎ মিসরের বাদশাহর আইন) অনুযায়ী নিজের ভাইকে পাকড়াও করা তার পক্ষে সঙ্গত ছিল না, তবে যদি আল্লাহই এমনটি চান। যাকে চাই তার মর্তবা আমি বুলন্দ করে দেই আর একজন জ্ঞানবান এমন আছে যে প্রত্যেক জ্ঞানবানের চেয়ে জ্ঞানী।




(12:77)

قَالُوْۤا اِنْ یَّسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ اَخٌ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ١ۚ فَاَسَرَّهَا یُوْسُفُ فِیْ نَفْسِهٖ وَ لَمْ یُبْدِهَا لَهُمْ١ۚ قَالَ اَنْتُمْ شَرٌّ مَّكَانًا١ۚ وَ اللّٰهُ اَعْلَمُ بِمَا تَصِفُوْنَ




অনুবাদ:    এ ভাইয়েরা বললো, “এ যদি চুরি করে থাকে তাহলে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ এর আগে এর ভাইও (ইউসুফ) চুরি করেছিল।” ইউসুফ তাদের একথা শুনে আত্মস্থ করে ফেললো, সত্য তাদের কাছে প্রকাশ করলো না, শুধুমাত্র (মনে মনে) এতটুকু বলে থেমে গেলো, “বড়ই বদ তোমরা (আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ওপর) এই যে দোষারোপ তোমরা করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ প্রকৃত সত্য ভালোভাবে অবগত।”




(12:78)

قَالُوْا یٰۤاَیُّهَا الْعَزِیْزُ اِنَّ لَهٗۤ اَبًا شَیْخًا كَبِیْرًا فَخُذْ اَحَدَنَا مَكَانَهٗ١ۚ اِنَّا نَرٰىكَ مِنَ الْمُحْسِنِیْنَ




অনুবাদ:    তারা বললো, “হে ক্ষমতাসীন সরদার (আযীয)! এর বাপ অত্যন্ত বৃদ্ধ, এর জায়গায় আপনি আমাদের কাউকে রেখে দিন। আমরা আপনাকে বড়ই সদাচারী ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি।”




(12:79)

قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اَنْ نَّاْخُذَ اِلَّا مَنْ وَّجَدْنَا مَتَاعَنَا عِنْدَهٗۤ١ۙ اِنَّاۤ اِذًا لَّظٰلِمُوْنَ۠




অনুবাদ:    ইউসুফ বললেন, “আল্লাহর পানাহ! অন্য কাউকে আমরা কেমন করে রাখতে পারি? যার কাছে আমরা নিজেদের জিনিস পেয়েছি তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে রাখলে আমরা জালেম হয়ে যাবো।”




(12:80)

فَلَمَّا اسْتَیْئَسُوْا مِنْهُ خَلَصُوْا نَجِیًّا١ؕ قَالَ كَبِیْرُهُمْ اَلَمْ تَعْلَمُوْۤا اَنَّ اَبَاكُمْ قَدْ اَخَذَ عَلَیْكُمْ مَّوْثِقًا مِّنَ اللّٰهِ وَ مِنْ قَبْلُ مَا فَرَّطْتُّمْ فِیْ یُوْسُفَ١ۚ فَلَنْ اَبْرَحَ الْاَرْضَ حَتّٰى یَاْذَنَ لِیْۤ اَبِیْۤ اَوْ یَحْكُمَ اللّٰهُ لِیْ١ۚ وَ هُوَ خَیْرُ الْحٰكِمِیْنَ




অনুবাদ:    যখন তারা ইউসুফের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে গেলো তখন একান্তে পরামর্শ করতে লাগলো। তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বয়সে বড় ছিল সে বললোঃ “তোমরা কি জান না, তোমাদের বাপ তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর নামে কি অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং ইতিপূর্বে ইউসুফের ব্যাপারে তোমরা যেসব বাড়াবাড়ি করেছো তাও তোমরা জানো। এখন আমি তো এখান থেকে কখনোই যাবো না যে পর্যন্ত না আমার বাপ আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার ব্যাপারে কোন ফায়সালা করে দেন, কেননা তিনি সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী।




(12:81)

اِرْجِعُوْۤا اِلٰۤى اَبِیْكُمْ فَقُوْلُوْا یٰۤاَبَانَاۤ اِنَّ ابْنَكَ سَرَقَ١ۚ وَ مَا شَهِدْنَاۤ اِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَ مَا كُنَّا لِلْغَیْبِ حٰفِظِیْنَ




অনুবাদ:    তোমরা তোমাদের বাপের কাছে ফিরে গিয়ে বলো, “আব্বাজান, আপনার ছেলে চুরি করেছে, আমরা তাকে চুরি করতে দেখিনি, যতটুকু আমরা জেনেছি শুধু ততটুকুই বর্ণনা করছি এবং অদৃশ্যেরই রক্ষণাবেক্ষণ করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।




(12:82)

وَ سْئَلِ الْقَرْیَةَ الَّتِیْ كُنَّا فِیْهَا وَ الْعِیْرَ الَّتِیْۤ اَقْبَلْنَا فِیْهَا١ؕ وَ اِنَّا لَصٰدِقُوْنَ




অনুবাদ:    আমরা যে পল্লীতে ছিলাম সেখানকার লোকজনদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন এবং যে কাফেলার সাথে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমরা যা বলছি সত্য বলছি।”




(12:83)

قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًا١ؕ فَصَبْرٌ جَمِیْلٌ١ؕ عَسَى اللّٰهُ اَنْ یَّاْتِیَنِیْ بِهِمْ جَمِیْعًا١ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِیْمُ الْحَكِیْمُ




অনুবাদ:    ইয়াকূব এ কাহিনী শুনে বললো, “আসলে তোমাদের মন তোমাদের জন্য আরো একটি বড় ঘটনাকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক আছে, এ ব্যাপারেও আমি সবর করবো এবং ভালো করেই করবো। হয়তো আল্লাহ‌ এদের সবাইকে এনে আমার সাথে মিলিয়ে দেবেন। তিনি সবকিছু জানেন এবং তিনি জ্ঞানের ভিত্তিতে সমস্ত কাজ করেন।”




(12:84)

وَ تَوَلّٰى عَنْهُمْ وَ قَالَ یٰۤاَسَفٰى عَلٰى یُوْسُفَ وَ ابْیَضَّتْ عَیْنٰهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِیْمٌ




অনুবাদ:    তারপর সে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে গেলো এবং বলতে লাগলো, “হায় ইউসুফ”- সে মনে মনে দুঃখে ও শোকে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছিল এবং তার চোখগুলো সাদা হয়ে গিয়েছিল,




(12:85)

قَالُوْا تَاللّٰهِ تَفْتَؤُا تَذْكُرُ یُوْسُفَ حَتّٰى تَكُوْنَ حَرَضًا اَوْ تَكُوْنَ مِنَ الْهٰلِكِیْنَ




অনুবাদ:    ছেলেরা বললো, “আল্লাহর দোহাই! আপনি তো শুধু ইউসুফের কথাই স্মরণ করে যাচ্ছেন। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তার শোকে আপনি নিজেকে দিশেহারা করে ফেলবেন অথবা নিজের প্রাণ সংহার করবেন।”




(12:86)

قَالَ اِنَّمَاۤ اَشْكُوْا بَثِّیْ وَ حُزْنِیْۤ اِلَى اللّٰهِ وَ اَعْلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ




অনুবাদ:    সে বললো, “আমি আমার পেরেশানি এবং আমার দুঃখের ফরিয়াদ আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো কাছে করছি না। আর আল্লাহর ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি তোমরা ততটুকু জানো না।




(12:87)

یٰبَنِیَّ اذْهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ یُّوْسُفَ وَ اَخِیْهِ وَ لَا تَایْئَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللّٰهِ١ؕ اِنَّهٗ لَا یَایْئَسُ مِنْ رَّوْحِ اللّٰهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكٰفِرُوْنَ




অনুবাদ:    হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তাঁর ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু অনুসন্ধান চালাও। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তাঁর রহমত থেকে তো একমাত্র কাফেররাই নিরাশ হয়।”




(12:88)

فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلَیْهِ قَالُوْا یٰۤاَیُّهَا الْعَزِیْزُ مَسَّنَا وَ اَهْلَنَا الضُّرُّ وَ جِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجٰىةٍ فَاَوْفِ لَنَا الْكَیْلَ وَ تَصَدَّقْ عَلَیْنَا١ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَجْزِی الْمُتَصَدِّقِیْنَ




অনুবাদ:    যখন তারা মিসরে গিয়ে ইউসুফের সামনে হাযির হলো তখন আরয করলো, “হে পরাক্রান্ত শাসক! আমরা ও আমাদের পরিবার-পরিজন কঠিন বিপদের মুখোমুখি হয়েছি এবং আমরা মাত্র সামান্য পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদের পূর্ণমাত্রায় শস্য দিয়ে দিন এবং আমাদেরকে দান করুন, আল্লাহ দানকারীদেরকে প্রতিদান দেন।”




(12:89)

قَالَ هَلْ عَلِمْتُمْ مَّا فَعَلْتُمْ بِیُوْسُفَ وَ اَخِیْهِ اِذْ اَنْتُمْ جٰهِلُوْنَ




অনুবাদ:    (একথা শুনে ইউসুফ আর চুপ থাকতে পারলো না) সে বললো, “তোমরা কি জানো, তোমরা ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে কি ব্যবহার করেছিলে, যখন তোমরা অজ্ঞ ছিলে?”




(12:90)

قَالُوْۤا ءَاِنَّكَ لَاَنْتَ یُوْسُفُ١ؕ قَالَ اَنَا یُوْسُفُ وَ هٰذَاۤ اَخِیْ١٘ قَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَیْنَا١ؕ اِنَّهٗ مَنْ یَّتَّقِ وَ یَصْبِرْ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِیْنَ




অনুবাদ:    তারা চমকে উঠে বললো, “হায় তুমিই ইউসুফ নাকি?” সে বললো, “হ্যাঁ, আমি ইউসুফ এবং এই আমার সহোদর। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আসলে কেউ যদি তাকওয়া ও সবর অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহর কাছে এ ধরণের সৎলোকদের কর্মফল নষ্ট হয়ে যায় না।”




(12:91)

قَالُوْا تَاللّٰهِ لَقَدْ اٰثَرَكَ اللّٰهُ عَلَیْنَا وَ اِنْ كُنَّا لَخٰطِئِیْنَ




অনুবাদ:    তারা বললো, “আল্লাহর কসম, আল্লাহ‌ তোমাকে আমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং যথার্থই আমরা অপরাধী ছিলাম।”




(12:92)

قَالَ لَا تَثْرِیْبَ عَلَیْكُمُ الْیَوْمَ١ؕ یَغْفِرُ اللّٰهُ لَكُمْ١٘ وَ هُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ




অনুবাদ:    সে জবাব দিল, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ‌ তোমাদের মাফ করে দিন। তিনি সবার প্রতি অনুগ্রহকারী।




(12:93)

اِذْهَبُوْا بِقَمِیْصِیْ هٰذَا فَاَلْقُوْهُ عَلٰى وَجْهِ اَبِیْ یَاْتِ بَصِیْرًا١ۚ وَ اْتُوْنِیْ بِاَهْلِكُمْ اَجْمَعِیْنَ۠




অনুবাদ:    যাও, আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার পিতার চেহারার ওপর রেখো, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের সমস্ত পরিবার-পরিজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”




(12:94)

وَ لَمَّا فَصَلَتِ الْعِیْرُ قَالَ اَبُوْهُمْ اِنِّیْ لَاَجِدُ رِیْحَ یُوْسُفَ لَوْ لَاۤ اَنْ تُفَنِّدُوْنِ




অনুবাদ:    কাফেলাটি যখন (মিসর থেকে) রওয়ানা দিল তখন তাদের বাপ (কেনানে) বললো, “আমি ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি, তোমরা যেন আমাকে একথা বলো না যে, বুড়ো বয়সে আমার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে।”




(12:95)

قَالُوْا تَاللّٰهِ اِنَّكَ لَفِیْ ضَلٰلِكَ الْقَدِیْمِ




অনুবাদ:    ঘরের লোকেরা বললো, “আল্লাহর কসম, আপনি এখনো নিজের সেই পুরাতন পাগলামি নিয়েই আছেন।”




(12:96)

فَلَمَّاۤ اَنْ جَآءَ الْبَشِیْرُ اَلْقٰىهُ عَلٰى وَجْهِهٖ فَارْتَدَّ بَصِیْرًا١ۚ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ١ۙۚ اِنِّیْۤ اَعْلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ




অনুবাদ:    তারপর যখন সুখবর বহনকারী এলো তখন সে ইউসুফের জামা ইয়াকূবের চেহারার ওপর রাখলো এবং অকস্মাত তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো। তখন সে বললো, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সব কথা জানি যা তোমরা জানো না?”




(12:97)

قَالُوْا یٰۤاَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَاۤ اِنَّا كُنَّا خٰطِئِیْنَ




অনুবাদ:    সবাই বলে উঠলো, “আব্বাজান। আপনি আমাদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করুন, সত্যিই আমরা অপরাধী ছিলাম।”




(12:98)

قَالَ سَوْفَ اَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّیْ١ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ




অনুবাদ:    তিনি বললেন, “আমি আমার রবের কাছে তোমাদের মাগফেরাতের জন্য আবেদন জানাবো, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”




(12:99)

فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى یُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَیْهِ اَبَوَیْهِ وَ قَالَ ادْخُلُوْا مِصْرَ اِنْ شَآءَ اللّٰهُ اٰمِنِیْنَؕ




অনুবাদ:    তারপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছলো তখন সে নিজের বাপ-মাকে নিজের কাছে বসালো এবং (নিজের সমগ্র পরিবার-পরিজনকে) বললো, “চলো, এবার শহরে চলো, আল্লাহ চাহেতো শান্তি ও নিরপত্তার মধ্যে বসবাস করবে।”




(12:100)

وَ رَفَعَ اَبَوَیْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَ خَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا١ۚ وَ قَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاْوِیْلُ رُءْیَایَ مِنْ قَبْلُ١٘ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّیْ حَقًّا١ؕ وَ قَدْ اَحْسَنَ بِیْۤ اِذْ اَخْرَجَنِیْ مِنَ السِّجْنِ وَ جَآءَ بِكُمْ مِّنَ الْبَدْوِ مِنْۢ بَعْدِ اَنْ نَّزَغَ الشَّیْطٰنُ بَیْنِیْ وَ بَیْنَ اِخْوَتِیْ١ؕ اِنَّ رَبِّیْ لَطِیْفٌ لِّمَا یَشَآءُ١ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِیْمُ الْحَكِیْمُ




অনুবাদ:    (শহরে প্রবেশ করার পর) সে নিজের বাপ-মাকে উঠিয়ে নিজের পাশে সিংহাসনে বসালো এবং সবাই তার সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিজদায় ঝুঁকে পড়লো। ইউসুফ বললো, “আব্বাজান! আমি ইতিপূর্বে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম এ হচ্ছে তার তা’বীর। আমার রব তাকে সত্য পরিণত করেছেন। আমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে তিনি আমাকে কারাগার থেকে বের করেছেন এবং আপনাদেরকে মরু অঞ্চল থেকে এনে আমার সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। আসলে আমার রব অননুভূত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করেন। নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছু জানেন ও সুগভীর প্রজ্ঞার অধিকারী।




(12:101)

رَبِّ قَدْ اٰتَیْتَنِیْ مِنَ الْمُلْكِ وَ عَلَّمْتَنِیْ مِنْ تَاْوِیْلِ الْاَحَادِیْثِ١ۚ فَاطِرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١۫ اَنْتَ وَلِیّٖ فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَةِ١ۚ تَوَفَّنِیْ مُسْلِمًا وَّ اَلْحِقْنِیْ بِالصّٰلِحِیْنَ




অনুবাদ:    হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো এবং আমাকে কথার গভীরে প্রবেশ করা শিখিয়েছো। হে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়ায় ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক। ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো।”




(12:102)

ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَیْبِ نُوْحِیْهِ اِلَیْكَ١ۚ وَ مَا كُنْتَ لَدَیْهِمْ اِذْ اَجْمَعُوْۤا اَمْرَهُمْ وَ هُمْ یَمْكُرُوْنَ




অনুবাদ:    হে মুহাম্মাদ! এ কাহিনী অদৃশ্যলোকের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি। নয়তো, তুমি তখন উপস্থিত ছিলে না যখন ইউসুফের ভাইয়েরা একজোট হয়ে যড়যন্ত্র করেছিল।




(12:103)

وَ مَاۤ اَكْثَرُ النَّاسِ وَ لَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِیْنَ




অনুবাদ:    কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না।




(12:104)

وَ مَا تَسْئَلُهُمْ عَلَیْهِ مِنْ اَجْرٍ١ؕ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعٰلَمِیْنَ۠




অনুবাদ:    অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না। এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়।




(12:105)

وَ كَاَیِّنْ مِّنْ اٰیَةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ یَمُرُّوْنَ عَلَیْهَا وَ هُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ




অনুবাদ:    আকাশসমুহে ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো তারা অতিক্রম করে যায় কিন্তু সেদিকে একটুও দৃষ্টিপাত করে না।




(12:106)

وَ مَا یُؤْمِنُ اَكْثَرُهُمْ بِاللّٰهِ اِلَّا وَ هُمْ مُّشْرِكُوْنَ




অনুবাদ:    তাদের বেশীর ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।




(12:107)

اَفَاَمِنُوْۤا اَنْ تَاْتِیَهُمْ غَاشِیَةٌ مِّنْ عَذَابِ اللّٰهِ اَوْ تَاْتِیَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً وَّ هُمْ لَا یَشْعُرُوْنَ




অনুবাদ:    তারা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আল্লাহর আযাবের কোন আকস্মিক আক্রমণ তাদেরকে গ্রাস করে নেবে না অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে তাদের ওপর সহসা কিয়ামত এসে যাবে না?




(12:108)

قُلْ هٰذِهٖ سَبِیْلِیْۤ اَدْعُوْۤا اِلَى اللّٰهِ١ؔ۫ عَلٰى بَصِیْرَةٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیْ١ؕ وَ سُبْحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ




অনুবাদ:    তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাওঃ আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও। আর আল্লাহ পাক-পবিত্র এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।




(12:109)

وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِیْۤ اِلَیْهِمْ مِّنْ اَهْلِ الْقُرٰى١ؕ اَفَلَمْ یَسِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَیَنْظُرُوْا كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ١ؕ وَ لَدَارُ الْاٰخِرَةِ خَیْرٌ لِّلَّذِیْنَ اتَّقَوْا١ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ




অনুবাদ:    হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি যে নবীদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাঁরা সবাই মানুষই ছিল, এসব জনবসতিরই অধিবাসী ছিল এবং তাঁদের কাছেই আমি অহী পাঠাতে থেকেছি। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্বে যেসব জাতি চলে গেছে তাদের পরিণাম দেখেনি? নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের আবাস তাদের জন্য আরো বেশী ভালো যারা (নবীর কথা মেনে নিয়ে) তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। এখনো কি তোমরা বুঝবে না?




(12:110)

حَتّٰۤى اِذَا اسْتَیْئَسَ الرُّسُلُ وَ ظَنُّوْۤا اَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوْا جَآءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّیَ مَنْ نَّشَآءُ١ؕ وَ لَا یُرَدُّ بَاْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِیْنَ




অনুবাদ:    (আগের নবীদের সাথেও এমনটি হতে থেকেছে। অর্থাৎ তাঁরা দীর্ঘদিন উপদেশ দিয়ে গেছেন কিন্তু লোকেরা তাঁদের কথা শোনেনি।) এমনকি যখন নবীরা লোকদের থেকে হতাশ হয়ে গেলো এবং লোকেরাও ভাবলো তাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছিল তখন অকস্মাত আমার সাহায্য নবীদের কাছে পৌঁছে গেলো। তারপর এ ধরনের সময় যখন এসে যায় তখন আমার নিয়ম হচ্ছে, যাকে আমি চাই তাকে রক্ষা করি এবং অপরাধীদের প্রতি আমার আযাব তো রদ করা যেতে পারে না।




(12:111)

لَقَدْ كَانَ فِیْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُولِی الْاَلْبَابِ١ؕ مَا كَانَ حَدِیْثًا یُّفْتَرٰى وَ لٰكِنْ تَصْدِیْقَ الَّذِیْ بَیْنَ یَدَیْهِ وَ تَفْصِیْلَ كُلِّ شَیْءٍ وَّ هُدًى وَّ رَحْمَةً لِّقَوْمٍ یُّؤْمِنُوْنَ۠




অনুবাদ:    পূর্ববর্তী লোকদের এ কাহিনীর মধ্যে বুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। কুরআনে এ যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে এগুলো বানোয়াট কথা নয় বরং এগুলো ইতিপূর্বে এসে যাওয়া কিতাবগুলোতে বর্ণিত সত্যের সমর্থন এবং সবকিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।


বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

পারিবারিক সুখ শান্তির জন্য দোয়া।

 আল কুরআন, ২৫  আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪ وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ ا...

জনপ্রিয় লেখা সমূহ