আল কুরআন, সুরা: আল মমিনুন
২৩-মুমিনূন-23:(1-10),
23:1
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَۙ
অনুবাদ: নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা
(23:2)
الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَۙ
অনুবাদ: যারাঃ নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়,
(23:3)
وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَۙ
অনুবাদ: বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে,
(23:4)
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُوْنَۙ
অনুবাদ: যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে,
(23:5)
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَۙ
অনুবাদ: নিজেদের লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে,
(23:6)
اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَیْرُ مَلُوْمِیْنَۚ
অনুবাদ: নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদিদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবে না,
(23:7)
فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعٰدُوْنَۚ
অনুবাদ: তবে যারা এর বাইরে আরও কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী,
(23:8)
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَۙ
অনুবাদ: নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে
(23:9)
وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوٰتِهِمْ یُحَافِظُوْنَۘ
অনুবাদ: এবং নিজেদের নামায গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে,
(23:10)
اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوٰرِثُوْ
অনুবাদ: তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে
## আয়াত নং :-7
فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعٰدُوْنَۚ
তবে যারা এর বাইরে আরও কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী,1
তাফসীর :
টিকা:1) এটি একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। “লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে” বাক্যাংশটি থেকে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্য এ বাকটি বলা হয়েছে। দুনিয়াতে পূর্বেও একথা মনে করা হতো এবং আজও বহু লোক এ বিভ্রান্তিতে ভুগছে যে, কামশক্তি মূলত একটি খারাপ জিনিস এবং বৈধ পথে হলেও তার চাহিদা পূরণ করা সৎ ও আল্লাহর প্রতি অনুগত লোকদের জন্য সঙ্গত নয়। যদি কেবল মাত্র “সফলতা লাভকারী মু’মিনরা নিজেদের লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে” এতটুকু কথা বলেই বাক্য খতম করে দেয়া হতো তাহলে এ বিভ্রান্তিটি জোরদার হয়ে যেতো। কারণ এর এ অর্থ করা যেতে পারতো যে, তারা মালকোঁচা মেরে থাকে, তারা সন্ন্যাসী ও যোগী এবং বিয়ে-শাদীর ঝামেলায় তারা যায় না। তাই একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য বাড়িয়ে দিয়ে এ সত্যটি সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, বৈধ স্থানে নিজের প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করা কোন নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। তবে কাম প্রবৃত্তির সেবা করার জন্য এ বৈধ পথ এড়িয়ে অন্য পথে চলা অবশ্যই গোনাহর কাজ। এ প্রাসঙ্গিক বাক্যটি থেকে কয়েকটি বিধান বের হয়। এগুলো সংক্ষেপে এখানে বর্ণনা করা হচ্ছেঃ
একঃ লজ্জা-স্থান হেফাজত করার সাধারণ হুকুম থেকে দু’ধরনের স্ত্রীলোককে বাদ দেয়া হয়েছে। এক, স্ত্রী। দুই مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ । স্ত্রী (ازواج) শব্দটি আরবি ভাষার পরিচিত ব্যবহার এবং স্বয়ং কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য অনুযায়ী কেবলমাত্র এমনসব নারী সম্পর্কে বলা হয় যাদেরকে যথারীতি বিবাহ করা হয়েছে এবং আমাদের দেশে প্রচলিত “স্ত্রী” শব্দটি এরই সমার্থবোধক। আর مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ বলতে যে বাঁদি বুঝায় আরবি প্রবাদ ও কুরআনের ব্যবহার উভয়ই তার সাক্ষী। অর্থাৎ এমন বাঁদি যার ওপর মানুষের মালিকানা অধিকার আছে। এভাবে এ আয়াত পরিষ্কার বলে দিচ্ছে বিবাহিতা স্ত্রীর ন্যায় মালিকানাধীন বাঁদির সাথেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ এবং বৈধতার ভিত্তি বিয়ে নয় বরং মালিকানা। যদি এ জন্যও বিয়ের শর্ত হতো তাহলে একে স্ত্রী থেকে আলাদা করেও বর্ণনা করার প্রয়োজন ছিল না। কারণ বিবাহিত হলে সে ও স্ত্রীর পর্যায়ভুক্ত হতো। বর্তমানকালের কোন কোন মুফাসসির যারা বাদীর সাথে যৌন সম্ভোগ স্বীকার করেননি। তারা সূরা নিসার (২৫ আয়াত) وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ আয়াতটি থেকে যুক্তি আহরণ করে একথা প্রমাণ করতে চান যে, বাঁদির সাথে যৌন সম্ভোগও কেবলমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই করা যেতে পারে। কারণ সেখানে হুকুম দেয়া হয়েছে, যদি আর্থিক দুরবস্থার কারণে তোমরা কোন স্বাধীন পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করার ক্ষমতা না রাখো তাহলে কোন বাঁদিকে বিয়ে করো। কিন্তু এসব লোকের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার মতো। এরা একই আয়াতের একটি অংশকে নিজেদের উদ্দেশ্যের পক্ষে লাভজনক দেখতে পেয়ে গ্রহণ করে নেন, আবার সে একই আয়াতের যে অংশটি এদের উদ্দেশ্যে বিরোধী হয় তাকে জেনে বুঝে বাদ দিয়ে দেন। এ আয়াতে বাঁদিদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ যেসব শব্দের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ
فَانْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
“কাজেই এ বাঁদিদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাও এদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে এবং এদেরকে এদের পরিচিত পদ্ধতিতে মোহরানা প্রদান করো।” এ শব্দগুলো পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, এখানে বাঁদির মালিকের বিষয় আলোচনার বিষয়বস্তু নয় বরং এমন ব্যক্তির বিষয় এখানে আলোচনা করা হচ্ছে, যে স্বাধীন মেয়ে বিয়ে করার ব্যয় ভার বহন করার ক্ষমতা রাখে না এবং এ জন্য অন্য কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন বাঁদিকে বিয়ে করতে চায়। নয়তো যদি নিজেরই বাঁদিকে বিয়ে করার ব্যাপার হয় তাহলে তার এ “অভিভাবক” কে হতে পারে যার কাছ থেকে তার অনুমতি নেবার প্রয়োজন হয়? কিন্তু কুরআনের সাথে কৌতুককারীরা কেবলমাত্র فَانْكِحُوهُنَّ কে গ্রহণ করেন অথচ তার পরেই যে بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ এসেছে তাকে উপেক্ষা করেন। তাছাড়াও তারা একটি আয়াতের এমন অর্থ বের করেন যা একই বিষয়বস্তু সম্পর্কিত কুরআনের অন্যান্য আয়াতের সাথে সংঘর্ষশীল। কোন ব্যক্তি যদি নিজের চিন্তাধারার নয় বরং কুরআন মজীদের অনুসরণ করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই সূরা নিসার ৩-৩৫ , সূরা আহযাবের ৫০-৫২ এবং সূরা মা’আরিজের ৩০ আয়াতকে সূরা মু’মিনূনের এ আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। এভাবে সে নিজেই এ ব্যাপারে কুরআনের বিধান কি তা জানতে পারবে। (এ বিষয়ে আরও বেশী বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা নিসা ৪৪ টীকা ; তাফহীমাত ( নির্বাচিত রচনাবলী) ২য় খণ্ড ২৯০ থেকে ৩২৪ পৃঃ এবং রাসায়েল ও মাসায়েল ১ম খণ্ড , ২৪ থেকে ৩৩৩ পৃষ্ঠা)
দুইঃ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ বাক্যাংশে على শব্দটি একথা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দেয় যে, এ আনুসঙ্গিক বাক্যে আইনের যে ধারা বর্ণনা করা হচ্ছে তার সম্পর্ক শুধু পুরুষদের সঙ্গে। বাকি قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ থেকে নিয়ে خَالِدُوْنَ পর্যন্ত পুরো আয়াতটিতেই সর্বনাম পুং লিঙ্গে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও পুরুষ ও নারী উভয়েই শামিল রয়েছে। কারণ আরবি ভাষায় পুরুষ ও নারীর সমষ্টির কথা যখন বলা হয় তখন সর্বনামের উল্লেখ পুং লিঙ্গেই করা হয়। কিন্তু এখানে لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ এর হুকুমের বাইরে রেখে على শব্দ ব্যবহার করার মাধ্যমে একথা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, এ ব্যতিক্রমটি পুরুষদের জন্য, মেয়েদের জন্য নয়। যদি “এদের কাছে” না বলে “এদের থেকে” হেফাজত না করলে তাদেরকে নিন্দনীয় নয় বলা হতো, তাহলে অবশ্যই এ হুকুমটিও নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কার্যকর হতে পারতো। এ সূক্ষ্ম বিষয়টি না বুঝার কারণে হযরত উমরের (রা.) যুগে জনৈকা মহিলা তাঁর গোলামের সাথে যৌন সম্ভোগ করে বসেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে শূরায় যখন তাঁর বিষয়টি পেশ হল তখন সবাই এক বাক্যে বললেনঃ تاولت كتاب الله تعالى غير تاويله অর্থাৎ “সে আল্লাহর কিতাবের ভুল অর্থ গ্রহণ করেছে।” এখানে কারো মনে যেন এ সন্দেহ সৃষ্টি না হয় যে, এ ব্যতিক্রম যদি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীদের জন্য তাদের স্বামীরা কেমন করে হালাল হল? এ সন্দেহটি সঠিক না হবার কারণ হচ্ছে এই যে, যখন স্ত্রীদের ব্যাপারে স্বামীদেরকে পুরুষাঙ্গ হেফাজত করার হুকুমের বাইরে রাখা হয়েছে তখন নিজেদের স্বামীদের ব্যাপারে স্ত্রীরা আপনা আপনিই এ হুকুমের বাইরে চলে গেছে। এরপর তাদের জন্য আর আলাদা সুস্পষ্ট বক্তব্যের প্রয়োজন থাকেনি। এভাবে এ ব্যাতিক্রম হুকুমের প্রভাব কার্যত শুধুমাত্র পুরুষ ও তার মালিকানাধীন নারী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং নারীর জন্য তার গোলামের সাথে দৈহিক সম্পর্ক হারাম গণ্য হয়। নারীর জন্য এ জিনিসটি হারাম গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, গোলাম তার প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করতে পারে কিন্তু তার ও তার গৃহের পরিচালিকা হতে পারে না এবং এর ফলে পারিবারিক জীবনের সংযোগ ও শৃঙ্খলা ঢিলা থেকে যায়।
তিনঃ “তবে যারা এর বাইরে আরও কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘণকারী”-এ বাক্যটি ওপরে উল্লেখিত দু’টি বৈধ আকার ছাড়া যিনা বা সমকাম অথবা পশু-সঙ্গম কিংবা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য অন্য যাই কিছু হোক না কেন সবই হারাম করে দিয়েছে। একমাত্র হস্তমৈথুনের (Masturbation) ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে মতবিরোধ আছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল একে জায়েজ গণ্য করেন। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈ একে চূড়ান্ত হারাম বলেন। অন্যদিকে হানাফিদের মতে যদিও এটি হারাম তবুও তারা বলেন, যদি চরম মুহূর্তে কখনো কখনো এ রকম কাজ করে বসে তাহলে আশা করা যায় তা মাফ করে দেয়া হবে।
চারঃ কোন কোন মুফাসসির মুতা’ বিবাহ হারাম হবার বিষয়টিও এ আয়াত থেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, যে মেয়েকে মুতা’ বিয়ে করা হয় সে না স্ত্রীর পর্যায়ভুক্ত, না বাঁদির। বাঁদি তো সে নয় একথা সুস্পষ্ট, আবার স্ত্রীও নয়। কারণ স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করার জন্য যতগুলো আইনগত বিধান আছে তার কোনটাই তার ওপর আরোপিত হয় না। সে পুরুষের উত্তরাধিকারী হয় না, পুরুষও তার উত্তরাধিকারী হয় না। তার জন্য ইদ্দত নেই, তালাকও নেই, খোরপোশ নেই এবং ঈলা, যিহার ও লি’আন ইত্যাদি কোনটিই নেই। বরং সে চার স্ত্রীর র্নিধারিত সীমানার বাইরে অবস্থান করছে কাজেই সে যখন “স্ত্রী” ও “বাঁদি” কোনটার সংজ্ঞায় পড়ে না তখন নিশ্চয়ই সে ‘এর বাইরে আরো কিছু’র মধ্যে গণ্য হবে। আর এ আরো কিছু যারা চায় তাদেরকে কুরআন সীমালংঘনকারী গণ্য করেছে। এ যুক্তিটি অনেক শক্তিশালী। তবে এর মধ্যে একটি দুর্বলতার দিকও আছে। আর এ দূর্বলতাটি হচ্ছে, নবী ﷺ মুতা’ হারাম হবার শেষ ও চূড়ান্ত ঘোষণা দেন মক্কা বিজয়ের বছরে। এর পূর্বে অনুমতির প্রমাণ সহী হাদিসগুলোতে পাওয়া যায়। যদি একথা মেনে নেয়া যেত, মুতা’ হারাম হবার হুকুম কুরআনের এ আয়াতের মধ্যেই এসে গিয়েছিল আর এ আয়াতটির মক্কী হবার ব্যাপারে সবাই একমত এবং এটি হিজরতের কয়েক বছর আগে নাযিল হয়েছিল, তাহলে কেমন করে ধারণা করা যেতে পারে যে, নবী ﷺ মক্কা বিজয় পর্যন্ত একে জায়েজ রেখেছিলেন? কাজেই একথা বলাই বেশী নির্ভুল যে, মুতা’ বিষয়ে কুরআন মজীদের কোন সুস্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে নয় বরং নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের মাধ্যমেই হারাম হয়েছে। সুন্নাতের মধ্যে যদি এ বিষয়টির সুস্পষ্ট ফয়সালা না থাকতো তাহলে নিছক এ আয়াতের ভিত্তিতে এর হারাম হওয়ার ফয়সালা দেয়া কঠিন ছিল। মুতা’র আলোচনা যখন এসে গেছে তখন আরো দু’টি কথা স্পষ্ট করে দেয়া সঙ্গত বলে মনে হয়।
এক, এর হারাম হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই প্রমাণিত। কাজেই হযরত উমর (রা.) একে হারাম করেছেন, একথা বলা ঠিক নয়। হযরত উমর (রা.) এ বিধিটির প্রবর্তক বা রচয়িতা ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন কেবলমাত্র এর প্রচারক ও প্রয়োগকারী। যেহেতু এ হুকুমটি রসূলূল্লাহ ﷺ তার আমলের শেষের দিকে দিয়েছিলেন এবং সাধারণ লোকদের কাছে এটি পৌঁছেনি তাই হযরত উমর (রা.) এটিকে সাধারণ্যে প্রচার ও আইনের সাহায্যে কার্যকরী করেছিলেন।
দুই, শিয়াগণ মুতা’কে সর্বতোভাবে ও শর্তহীন-ভাবে মুবাহ সাব্যস্ত করার যে নীতি অবলম্বন করেছেন কুরআন ও সুন্নাতের কোথাও তার কোন অবকাশই নেই। প্রথম যুগের সাহাবা, তাবেঈ ও ফকীহদের মধ্যে কয়েকজন যারা এর বৈধতার সমর্থক ছিলেন তারা শুধুমাত্র অনন্যোপায় অবস্থায় অনিবার্য পরিস্থিতিতে এবং চরম প্রয়োজনের সময় একে বৈধ গণ্য করেছিলেন। তাদের একজনও একে বিবাহের মতো শর্তহীন মুবাহ এবং সাধারণ অবস্থায় অবলম্বনযোগ্য বলেননি। বৈধতার প্রবক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য হিসেবে পেশ করা হয় হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) নাম। তিনি নিজের মত এভাবে ব্যক্ত করেছেনঃ مَا هِى الا كَالْمَيْتَةِ لاَ تَحِلُّ الا لِلْمُضْطَرِّ (এ হচ্ছে মৃতের মতো, যে ব্যক্তি অনিবার্য ও অনন্যোপায় অবস্থার শিকার হয়েছে তার ছাড়া আর কারোর জন্য বৈধ নয়।) আবার তিনি যখন দেখলেন তার এ বৈধতার অবকাশ-দানমূলক ফতোয়া থেকে লোকেরা অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করে যথেচ্ছভাবে মুতা’ করতে শুরু করেছে এবং তাকে প্রয়োজনের সময় পর্যন্ত মুলতবী করছে না তখন তিনি নিজের ফতওয়া প্রত্যাহার করে নিলেন। ইবনে আব্বাস ও তার সমমনা মুষ্টিমেয় কয়েকজন তাদের এ মত প্রত্যাহার করেছিলেন কিনা এ প্রশ্নটি যদি বাদ দেয়াও যায় তাহলে তাদের মত গ্রহণকারীরা বড় জোর “ইশতিহার’’ তথা অনিবার্য ও অন্যন্যোপায় অবস্থায় একে বৈধ বলতে পারেন। অবাধ ও শর্তহীন মুবাহ এবং প্রয়োজন ছাড়াই মুতা’ বিবাহ করা এমন কি বিবাহিত স্ত্রীদের উপস্থিতিতেও মুতা-বিবাহিত স্ত্রীদের সাথে যৌন সম্ভোগ করা এমন একটি স্বেচ্ছাচার যাকে সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ রুচিবোধও কোনদিন বরদাশত করেনা। ইসলামী শরীয়াত ও রসূল বংশোদ্ভূত ইমামদেরকে এর সাথে জড়িত মনে করার তো কোন প্রশ্নই উঠে না। আমি মনে করি, শিয়াদের মধ্য থেকে কোন ভদ্র ও রুচিবান ব্যক্তিও তার মেয়ের জন্য কেউ বিবাহের পরিবর্তে মুতা’র প্রস্তাব দেবে এটা বরদাশত করতে পারে না। এর অর্থ এ দাড়ায় যে, মুতা’র বৈধ্যতার জন্য সমাজে বারবনিতাদের মতো মেয়েদের এমন একটি নিকৃষ্ট শ্রেণী থাকতে হবে যাদের সাথে মুতা’ করার অবাধ সুযোগ থাকে। অথবা মুতা’ হবে শুধুমাত্র গরীবদের কন্যা ও ভগিনীদের জন্য এবং তা থেকে ফায়দা হাসিল করার অধিকারী হবে সমাজের ধনিক ও সমৃদ্ধশালী শ্রেণীর পুরুষেরা। আল্লাহ ও রসূলের শরীয়ত থেকে কি এ ধরনের বৈষম্যপূর্ণ ও ইনসাফ বিহীন আইনের আশা করা যেতে পারে? আবার আল্লাহ ও তার রসূল থেকে কি এটাও আশা করা যেতে পারে যে, তিনি এমন কোন কাজকে মুবাহ করে দেবেন যাকে যে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে নিজের জন্য অমর্যাদাকর এবং বেহায়াপনা মনে করে?