১৬ নভেম্বর ২০২০

ইসলামী অর্থনৈতিক লেনদেনে প্রতারণা

     ইসলামী অর্থনৈতিক  লেনদেনে সুদ বর্জন করা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং ব্যবসায়কে বৈধ করেছেন। আল্লাহ বলেন :” অথচ আল্লাহ বেচাকেনাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।”(সুরা আল-বাকারার ২৭৫) 

সুদমুক্ত লেনদেন ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের মূল কাজ। সুদের পাশাপাশি লেনদেনকে প্রতারণা (যা হারাম) থেকে মুক্ত রাখতে হবে। 

  গারার (প্রতারণার) উপাদানসমূহ: 

 ‘গারার’ বলতে প্রতারণার উপাদানকে বোঝানো হয়। বিনিময়ের আবশ্যকীয় উপাদান সম্পর্কে (মালামালের মূল্য সম্পর্কে) অজ্ঞতাহেতু কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষরই প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) নুড়ি নিক্ষেপের মাধ্যমে বিক্রয় বা অনিশ্চয়তা সম্পৃক্ত বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন।’ (মুসলিম, আহমদ ও আবু দাউদ) 

আইনজ্ঞগণের মতে, পরিপূর্ণ সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি বৈধ হতে পারে না। আর পূর্ণ সম্মতির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা ও স্বচ্ছতা, পূর্ণ জ্ঞান ও গোপনীয়তামুক্ত অবস্থা। সরাসরি গারারের উদাহরণ হলো, আকাশের পাখি, পানিতে থাকা মাছ, ডুবুরির ধরা জিনিস, মায়ের পেটে থাকা জন্মের জন্য অপেক্ষমাণ বাচ্চা ইত্যাদির বিক্রি করা। 

গারার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা :

 গারার ইয়াসির (গৌণ গারার বা ধোঁকা) :

 গৌণ গারার বা ধোঁকা ক্ষমাযোগ্য এবং তা বিক্রয় চুক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ গণ্য করে না। যে ধোঁকা চুক্তির মৌলিক উপাদানের (আরকান) প্রয়োজনীয়তার ওপর যেমন—সম্পদ, মূল্য চুক্তির ভাষা প্রভৃতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না সেটি গারার ইয়াসির বা গৌণ ধোঁকা (গারার)। 

গারার ফাহিশা (মুখ্য ধোঁকা) :

যে ধোঁকার ফলে চুক্তি বাতিল হয়, তাকে মুখ্য ধোঁকা বলে। সাধারণভাবে মুখ্য ধোঁকা হলো—ক. এমন অনিশ্চয়তা, যা এত গুরুত্বপূর্ণ যে তা অগ্রহণযোগ্য। খ. এমনই অস্পষ্ট যে তা পরিমাপযোগ্য নয়। 

এমন ধোঁকার কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

 চুক্তির ক্ষেত্রে ধোঁকা

 ক. একের মধ্যে দুই বিক্রয় : একই চুক্তির মধ্যে দুই বিক্রয় হয়, যখন এর মধ্যে একটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিক্রেতার বক্তব্য—‘আমি বস্তুটি ১০০ টাকায় নগদে বিক্রয় করলাম এবং ১১০ টাকায় এক মাস পর’ এবং ক্রেতা বলল, ‘আমি রাজি’। তবে ক্রেতা কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেন তা নির্ধারণ না করেই চুক্তি সম্পন্ন হলো। এখানে গারার বিদ্যমান। কেননা বিক্রয়মূল্য চূড়ান্ত না করেই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ১০০ টাকা নাকি ১১০ টাকা সেটা নিশ্চিত নয়।

 খ. স্থগিত বিক্রয় (মুয়াল্লাক) : স্থগিত বিক্রয় হয় অন্য একটি অনিশ্চিত ঘটনার ভিত্তিতে নির্ধারণকৃত শর্তের ওপর। এরূপ বিক্রয়ের একটি উদাহরণ হলো, যখন কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে বলে, আমি তোমার কাছে এই খনিজজাত দ্রব্য সামগ্রী এক হাজার টাকায় বিক্রি করব, যদি মি. অমুক তার বাড়িটি এক লাখ টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেন এবং অপর ব্যক্তি বলেন, ”আমি রাজি’। বেশির ভাগ আইনজ্ঞের মতে এরূপ চুক্তি অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে।

 চুক্তির উদ্দেশ্যের মধ্যে ধোঁকা:

 চুক্তির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ধোঁকা বিদ্যমান থাকে— ক. কোনো বস্তুর বিক্রয়ের সময় যখন তা বিদ্যমান থাকে না বা কোনো পক্ষের তা দখলে নেই এবং ভবিষ্যতে দখলের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যেমন—উড়ন্ত পাখি বিক্রয়, না ধরা মাছ, ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো বা এখনো জন্ম নেয়নি এমন পশু। খ. এমন বস্তুর বিক্রয়, যার মালিকানা নির্ধারিত নয় বা অসম্পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান, বা এমন কিছু যা মালিকানা ছাড়া কারো দখলে রয়েছে।

 অসম্পূর্ণ তথ্য:

 চুক্তির পক্ষগণকে প্রাসঙ্গিক তথ্য পর্যাপ্ত ও নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য ফলাফল যুক্তিসংগতভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অপর্যাপ্ত তথ্য ধোঁকার উৎস। জ্ঞানের অভাব জাহল বা অজ্ঞতা হতে পারে মূল্য বা বস্তু সম্পর্কে, মূল্য বা বস্তুর গুণগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, প্রার্থিত মূল্য বা মালের পরিমাপ সম্পর্কে অথবা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের মেয়াদ সম্পর্কে। চুক্তির আবদ্ধ পক্ষগণকে তথ্যের অভাবজনিত ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদানের প্রতি ইসলাম গুরুত্ব আরোপ করে। দুর্বল পক্ষকে সুরক্ষা প্রদান সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এমন হাদিসও আছে, যেখানে তথ্য বঞ্চিত হলে ওই পক্ষ চুক্তি সম্পাদনের পরও তা বাতিলের সুযোগ পায়।


 

 Source : Kaler kantha

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ