১৭ অক্টোবর ২০২০

আল্লাহ মহান স্রষ্টা

আল্লাহ জীবজন্তু, মানুষ জোড়া জোড়া  সৃষ্টি  করেছেন। চন্দ্র সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সৃষ্টি করে কক্ষপথ নির্ধারন করে দিয়েছেন। এ সব নিদর্শন দেখেও কি করে কাফের, অমুসলিমরা আল্লাহকে অবিশবাস করে। চৌদ্দশত বছর আগে  আল্লাহ কুরআনে বলেন,

(ইয়া সিন :  আয়াত ৩৬)

"পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না ।"

Tafseer : 
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি মাটি হতে উৎপন্ন উদ্ভিদ, স্বয়ং মানুষ এবং ওরা যাদের জানে না, তাদের সকলকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। [১]

[১] অর্থাৎ, মানুষের মত পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকেও আমি নর ও মাদী করে সৃষ্টি করেছি। এ ছাড়া আকাশে ও মাটির নিম্নদেশে যে সকল বস্তু তোমাদের অদৃশ্য, যা  তোমাদের জ্ঞ্যন-বহির্ভূত, তাদের মাঝেও জোড়া বা নর-মাদার এই নিয়ম রেখেছি। অতএব তোমরা সকল সৃষ্টিই জোড়া জোড়া। বৃক্ষাদির মাঝেও নর-মাদার একই নিয়ম আছে। এমনকি পরকালের জীবন ইহকালের জীবনের জোড়া সমতুল্য। আর ইহকালের জীবন পরকালের জীবনের জন্য একটি বিবেক-প্রসূত যুক্তি ও প্রমাণ স্বরূপও। শুধু এক আল্লাহর সত্তা; যিনি সৃষ্টি জগতের এই গুণ ও সকল প্রকার কমি ও ত্রুটি থেকে পবিত্র। তিনি একক, অদ্বিতীয়, বিজোড়; তাঁর কোন জোড়া নেই।

ইয়া সিন :  আয়াত ৩৭

"আর রাত তাদের জন্য একটি নিদর্শন; আমি তা থেকে দিনকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।"

Tafseer : 
রাত ওদের জন্য এক নিদর্শন, এ হতে আমি দিবালোক অপসারিত করি, ফলে সকলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। [১]

[১] অর্থাৎ, আল্লাহর অসীম শক্তির একটি প্রমাণ এও যে, তিনি দিনকে রাত থেকে আলাদা করে দেন। যার ফলে সাথে সাথে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। سلخ এর অর্থ কোন পশুর দেহ থেকে তার চামড়া আলাদা করে দেওয়া, যাতে তার গোশত বের হয়ে যায়। অনুরূপ আল্লাহ তাআলা দিনকে রাত থেকে আলাদা করে দেন। أظلم এর অর্থ হল অন্ধকারে প্রবেশ করা। যেমন أصبح، أمسى، أظهر এর অর্থ হল সকাল, সন্ধ্যা এবং যোহরের সময়ে প্রবেশ করা।

ইয়া সিন :  আয়াত ৩৮

"আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট পথে, এটা মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ)-র নির্ধারণ।"

Tafseer : 
আর সূর্য তার নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আবর্তন করে;[১] এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিয়ন্ত্রণ।

[১] অর্থাৎ, নিজের সেই কক্ষ পথে ঘোরে, যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। নির্দিষ্ট সেই স্থান থেকে তারা পরিক্রমা আরম্ভ করে এবং সেই স্থানেই ভ্রমণ শেষ করে। তা থেকে সামান্য পরিমাণও এমন এদিক ওদিক হয় না যে, তার ফলে কোন অন্য চলমান গ্রহের সাথে ধাক্কা লেগে যাবে। দ্বিতীয় অর্থ হল, "নিজ অবস্থান ক্ষেত্রের জন্য।" আর তার ঐ ক্ষেত্র হল আরশে ইলাহীর নিম্নদেশ। যেমন হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, "সূর্য প্রত্যহ অস্তমিত হওয়ার পর আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। অতঃপর সেখান থেকে পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়।" (বুখারীঃ সূরা ইয়াসীনের তফসীর) দুই অর্থেই لِمُسْتَقَرٍّ শব্দটিতে লাম ইল্লাত (কারণ বর্ণনা) এর জন্য ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ لِأَجَلِ مُسْتَقَرِّ لَّهَا অনেকে বলেন যে, এখানে لام হরফটি إلى এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আর তখন তার مُستَقَرّ (স্থিরতার সময়) হবে কিয়ামত। অর্থাৎ, সূর্যের এই চলাফেরা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কিয়ামতের দিন তার চলা বন্ধ হয়ে যাবে। এই তিন প্রকার অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক ।

ইয়া সিন :  আয়াত ৩৯

"আর চাঁদের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি মানযিলসমূহ, অবশেষে সেটি খেজুরের শুষ্ক পুরাতন শাখার মত হয়ে যায়।"

Tafseer : 
এবং চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন কক্ষ নির্দিষ্ট করেছি;[১] অবশেষে তা পুরাতন খেজুর মোছার ডাঁটার আকার ধারণ করে। [২]

[১] চাঁদের ২৮টি কক্ষপথ আছে। প্রত্যহ একটি করে কক্ষপথ অতিক্রম করে। অতঃপর দুই রাত্রি অদৃশ্য থেকে তৃতীয় রাত্রে বের হয়ে আসে।

[২] অর্থাৎ, যখন শেষ কক্ষে পৌঁছে যায়, তখন একেবারে সরু হয়ে যায়; যেমন খেজুরের পুরাতন মোছার ডাঁটা, যা শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যায়। চাঁদের এই বৃদ্ধি-হ্রাসযুক্ত পরিভ্রমণ দ্বারা পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ নিজেদের দিন, মাস ও বছরের হিসাব এবং ইবাদতের সময় নির্ণয় করে থাকে।

ইয়া সিন :  আয়াত ৪০

"সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাতের জন্য সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা, আর প্রত্যেকেই কক্ষ পথে ভেসে বেড়ায়।"

Tafseer : 
সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়,[১] রজনীও দিবসকে অতিক্রম করতে পারে না[২] এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে। [৩]

[১] অর্থাৎ, সূর্যের জন্য সম্ভব নয় যে, সে চাঁদের কাছাকাছি হবে এবং তার ফলে তার আলো শেষ হয়ে যাবে। বরং উভয়ের নিজ নিজ কক্ষপথ ও আলাদা আলাদা গন্ডিসীমা আছে। সূর্য দিনে ও চাঁদ রাতেই উদিত হয়, কখনও এর ব্যতিক্রম না ঘটা এ কথারই প্রমাণ যে, এ সবের নিয়ন্তা ও পরিচালক একজন আছেন।

[২] বরং এরাও এক নিয়ম-সূত্রে আবদ্ধ হয়ে আছে এবং এক অপরের পরে আসতে থাকে।

[৩] كُلٌّ বলতে সূর্য, চন্দ্র, অথবা তার সাথে অন্য নক্ষত্রকেও বুঝানো হয়েছে। সব কিছু নিজ নিজ কক্ষপথে পরিক্রমণ করে, তাদের কারো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হয় না। 
গ্রহের কক্ষ পথ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

Islamic world

  Islamic World

জনপ্রিয় লেখা সমূহ